ফুটপাথ দখল করে সাইকেল, মোটর সাইকেল। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
জবরদখলকারীদের দাপটে সঙ্কীর্ণ হয়েছে রাস্তা। রাস্তার দু’ধারে ফুটপাথও নেই। অগত্যা ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নেমেই করতে হচ্ছে যাতায়াত।
পুরসভা ও পূর্ত দফতরের চাপানউতোরে আটকে রেলশহরের প্রবেশদ্বার বলে পরিচিত চৌরঙ্গি থেকে ইন্দা মোড় পর্যন্ত রাস্তা (ওড়িশা ট্রাঙ্ক রোড)-এর সৌন্দর্যায়নের কাজও। শহরবাসীর অভিযোগ, অবৈধ নির্মাণের দরুন রাস্তার পরিসর কমেছে। বর্তমানে রাস্তা সরু হতে হতে ১৮ ফুটে এসে ঠেকেছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তা দিয়ে অনেক গাড়ি চলাচল করে। সঙ্কীর্ণ রাস্তায় যানজটে নাভিশ্বাস ওঠে শহরবাসীর। প্রশাসন সূত্রে খবর, রাস্তাটি সম্প্রসারণের জন্য সম্প্রতি পূর্ত দফতরের মেদিনীপুর বিভাগ উদ্যোগী হয়েছে।
আড়ে-বহরে বাড়ছে রেলশহর। প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ জনসংখ্যা বিশিষ্ট খড়্গপুর গুরুত্বপূর্ণ রেল জংশনও। এই শহরের দু’পাশ দিয়ে গিয়েছে ৬ নম্বর ও ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক। শহরে বেসরকারি সংস্থার অফিস, ব্যাঙ্কের সঙ্গেই রয়েছে মহকুমার পূর্ত, ভূমি রাজস্ব, জনস্বাস্থ্য, কারিগরি, তথ্য-সংস্কৃতি ও শ্রম দফতরের মতো একাধিক সরকারি অফিসও। এ ছাড়া ওই রাস্তা দিয়ে স্কুল-কলেজের পড়ুয়ারা যাতায়াত করে। ফলে দিনের ব্যস্ত সময়ে রাস্তায় প্রচণ্ড যানজট হয়। রাস্তার দু’ধারে ফুটপাথ না থাকায় বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করতে হয় নিত্যযাত্রীদের। ফলে যে কোনও সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। আগে এই রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পূর্ত দফতরের খড়্গপুর মহকুমা বিভাগের হাতে ছিল। পরে সেই দায়িত্ব পূর্ত দফতরের মেদিনীপুর বিভাগের হাতে যায়। রাস্তার দু’পাশে পূর্ত দফতরের ১২০ ফুট জমি রয়েছে। তা সত্বেও এতদিন থমকে ছিল রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ। সম্প্রতি রাস্তা সম্প্রসারণে উদ্যোগী হয়েছে পূর্ত দফতরের মেদিনীপুর বিভাগ।
থমকে রয়েছে শহরের ওড়িশা ট্রাঙ্ক রোড (ওটি রোড) নামে পরিচিত এই সড়কের সৌন্দর্যায়নের কাজও। রাস্তার দু’পাশে সৌন্দর্যায়নের দায়িত্ব পুরসভার। শহরবাসীর অভিযোগ, পুরসভা এ বিষয়ে উদাসীন। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর চারেক আগে পুরসভার প্রস্তাবে চৌরঙ্গি থেকে ইন্দা মোড় পর্যন্ত প্রায় ১২০ ফুট চওড়া সড়ক চার লেনের করার পরিকল্পনা হয়। রাস্তাটি সাড়ে ১১ মিটার করে দু’টি ভাগে ভাগ করা, রাস্তার ধারে ফুটপাথ গড়ার চিন্তাও করা হয়েছিল। পরে অর্থের অভাবে পূর্ত দফতর ওই পরিকল্পনা থেকে সরে আসে। বর্তমানে রাস্তাটি মাত্র ৫ মিটার চওড়া। পথবাতিও না থাকায় সূর্য ডুবলেই অন্ধকার নেমে আসে। ফলে রাতে ওই রাস্তায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা আরও বাড়ে।
গত ২০ জানুয়ারি দোকান থেকে সাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে ওই রাস্তায় ট্রাক্টরের ধাক্কায় মৃত্যু হয় এক অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মীর। গত ১০ ডিসেম্বর ট্রাকের ধাক্কায় ওই রাস্তায় ডেবরার এক জর্দা ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়। গত ২৩ নভেম্বর একই জায়গায় বাড়ি ফেরার পথে লরির ধাক্কায় মারা যান বাইক আরোহী এক যুবক। ইন্দার বাসিন্দা সোমা সেনগুপ্ত বলেন, “দিন দিন যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে রাস্তার দু’দিকের দোকানগুলিও তাদের পরিধিও বাড়িয়েছে। ফলে রাস্তা ক্রমশ সঙ্কীর্ণ হচ্ছে। ইদানীং আবার মেয়েরা ওই রাস্তায় স্কুটি চালানোয় বিপদের আশঙ্কা বাড়ছে।”
পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মাসেই ওই রাস্তার সম্প্রসারণের জন্য দরপত্র ডেকেছিল পূর্ত দফতরের মেদিনীপুর বিভাগ। আপাতত চৌরঙ্গি থেকে ইন্দা মোড় পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার রাস্তাটি সাড়ে ৫ মিটার থেকে সম্প্রসারিত করে ১০ মিটার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ জন্য প্রাথমিক ভাবে প্রায় ৯ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। পূর্ত দফতরের মেদিনীপুর বিভাগের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সলিল দাস বলেন, “দরপত্র খোলার পরেই ছ’মাসের মেয়াদে রাস্তার কাজের বরাত দেওয়া হবে। তার পরেই কাজ শুরু হবে। রাস্তা সম্প্রসারণে জবরদখলকারীদের উচ্ছেদের প্রয়োজন হলে জেলাশাসককে জানানো হবে।”
ওটি রোডের দু’ধারের অধিকাংশ এলাকা জুড়েই রয়েছে গ্যারাজ, হোটেল, বহুতল, মনোহারি দোকান, মোবাইল দোকান। এগুলির অধিকাংশই পূর্ত দফতরের জমির ওপর গজিয়ে উঠেছে। ফলে রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য জবরদখলকারীদের হঠানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। ইতিমধ্যেই ওই রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য টেলিফোন, বিদ্যুৎ ও জনস্বাস্থ্য বিভাগকে তাদের খুঁটি, তার, পাইপলাইন সরিয়ে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। এই কাজগুলি দ্রুত গতিতে করার জন্য মহকুমাশাসককে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্য বলেন, “পূর্ত দফতরের চিঠি পেয়েছি। টেলিফোন, বিদ্যুৎ ও পাইপ লাইন সরানোর বিষয়ে শীঘ্রই বৈঠক ডাকব। রাস্তার কাজ যাতে কোনও ভাবে বাধা না পায়, সে জন্য সব রকমভাবে প্রস্তুত রয়েছি। আশা করছি, এই কাজে স্থানীয় মানুষও সহযোগিতা করবেন।” এই কাজে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলর সুশান্ত চট্টোপাধ্যায়।
সব জটিলতা কাটিয়ে কবে যানজট থেকে মুক্তি পাবে এই রাস্তা, সেই অপেক্ষাতেই রয়েছেন শহরবাসী।