আয় বাড়াতে মহিলাদের সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ

সংসার, হেঁসেল সামলে ওঁদের কেউ তসর সুতো তৈরি করেন, কেউ মিড ডে মিল রান্না করেন, কেউ আবার বিড়ি বাঁধেন। স্ব-সহায়ক দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় কিছুটা হলেও আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর হয়েছেন সকলে। রোজগার বাড়ানোর আশায় এ বার সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করলেন মনসুরা বেগম, শঙ্করী মণ্ডল, সুমিত্রা রানা, অর্চনা রায়েরা। কেশপুর পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে সেলাইয়ের (টেলারিং) প্রশিক্ষণ শিবির।

Advertisement

বরুণ দে

কেশপুর শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৪ ০০:১৬
Share:

কেশপুরে চলছে প্রশিক্ষণ। রামপ্রসাদ সাউ।

সংসার, হেঁসেল সামলে ওঁদের কেউ তসর সুতো তৈরি করেন, কেউ মিড ডে মিল রান্না করেন, কেউ আবার বিড়ি বাঁধেন। স্ব-সহায়ক দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় কিছুটা হলেও আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর হয়েছেন সকলে। রোজগার বাড়ানোর আশায় এ বার সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করলেন মনসুরা বেগম, শঙ্করী মণ্ডল, সুমিত্রা রানা, অর্চনা রায়েরা। কেশপুর পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে সেলাইয়ের (টেলারিং) প্রশিক্ষণ শিবির।

Advertisement

বৃত্তিমূলক এই শিবির ‘আনন্দধারা’ প্রকল্পের অন্তর্গত। পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রে খবর, প্রশিক্ষণের পর এঁদের আয়েরও সুযোগ করে দেওয়া হবে। সকলে যাতে কাজ পেতে পারেন, সেই চেষ্টাও হবে। কিন্তু কী ভাবে তা সম্ভব হবে? কেশপুরের বিডিও মহম্মদ জামিল আখতার জানালেন, সরকার চাইছে স্ব-সহায়ক দলগুলো ভাল ভাবে চলুক। এখন এসএসকে, এমএসকে, প্রাথমিক স্কুলগুলোকে ছাত্রছাত্রীদের পোশাক কেনার টাকা দিয়ে দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণের পরে স্ব-সহায়ক দলের সদস্যারা সেই স্কুলের পোশাক তৈরি করবেন। এতে দলগুলোও আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর হবে। যুগ্ম বিডিও পার্থসারথি দে-র কথায়, “সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ নিয়ে গোষ্ঠীতে কাজ করলে আরও একটা নতুন রাস্তা খুলে যাবে। শুধু এই প্রশিক্ষণ নয়, আগামী দিনে আরও কিছু প্রশিক্ষণ দেওয়ার ভাবনা আমাদের আছে। যাতে ভাল পোশাক তৈরি হয়।” অর্চনাদেবীদেরও আশা, এই প্রশিক্ষণ তাঁদের আরও স্বনির্ভর করবে। স্ব-সহায়ক দলের সদস্যাদের কথায়, “লড়াই যখন শুরু করেছি, তখন হাল ছাড়ার প্রশ্ন নেই।”

কেশপুরের শিবিরে প্রথম পর্যায়ে ৩০ জন মহিলা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। সকলেই কোনও না কোনও স্ব-সহায়ক দলের সঙ্গে যুক্ত। বাড়িও এক-এক এলাকায়। মনসুরা বেগম যেমন লাঙলডিহির বাসিন্দা, শঙ্করীদেবী নিজমন্তার, সুমিত্রাদেবী মুগবসানের, অর্চনাদেবী নেড়াদেউলের। আগামী ৬ মাস এঁদের প্রশিক্ষণ চলবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ৩০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। মূলত, গ্রামীণ বিকাশের দিকে লক্ষ রেখেই এই স্ব-সহায়ক দল গড়ে তোলার ভাবনা। মহিলাদের অধিকার বিষয়ে নানা সচেতনতা শিবির হয়। তবে প্রত্যন্ত গ্রামে এখনও মহিলারা পুরুষদের উপরে নির্ভরশীল। ছবিটা অবশ্য পাল্টাতে শুরু করেছে। স্ব-সহায়ক দল গড়ে স্বনির্ভর হতে শুরু করেছেন মহিলারা। দল গড়ে অনেকেই সংসার সামলে রোজগার করছেন। স্বামীর পাশে দাঁড়াচ্ছেন। এ দিন কেশপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শুভ্রা দে সেনগুপ্তও বলছিলেন, “যে মহিলারা এতদিন শুধুমাত্র বাড়িতে রান্না করেছেন, বাচ্চা মানুষ করেছেন, এখন তাঁরাও বাইরে বেরিয়ে এসে আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচতে চাইছে। স্ব-সহায়ক দল গড়ে নানা কাজ করে আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর হওয়ার চেষ্টা করছে।”

Advertisement

একই মত কেশপুর পঞ্চায়েত সমিতির নারী ও শিশু উন্নয়ন কর্মাধ্যক্ষ মুকুল চক্রবর্তীর। তাঁর কথায়, “মহিলাদের পাশে দাঁড়ানোর স্বপ্নটা অনেক দিনের। কর্মাধ্যক্ষ হওয়ার পরে সকলের সঙ্গে আলোচনা করলাম, বিডিওর সঙ্গে কথা বললাম। বুঝলাম, চাইলে এমন কাজ করতে পারি। সেই কাজই এ বার শুরু হল।”

কেশপুরে এখন প্রায় তিনশো স্ব-সহায়ক দল বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত। এই দলগুলোর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন প্রায় ৩ হাজার মহিলা। তবে সেলাইয়ের চল তেমন নেই। অনেকে মাশরুম চাষের সঙ্গে যুক্ত। কেউ তসর সুতো এবং তসরের কাপড় বানান, কেউ বাবুই দড়ি তৈরি করেন, কেউ বাঁশের বেত তৈরি করেন, কেউ ধুপ তৈরি করেন, কেউ শালপাতার থালা তৈরি করেন, কেউ বা ধান থেকে চাল তৈরির কাজের সঙ্গে যুক্ত। এক সময় কেশপুরে অবশ্য প্রায় দেড় হাজার স্ব-সহায়ক দল ছিল। পরে অনেক দলই নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছে। কয়েকটি দল বন্ধই হয়ে গিয়েছে। ফের সেই দলগুলোকে সক্রিয় করার তোড়জোর শুরু হয়েছে। কেশপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শুভ্রাদেবীর কথায়, “একটা সময় ছিল যখন এই দল নিয়ে মহিলাদের মধ্যে তেমন উত্‌সাহ ছিল না। তবে এখন উত্‌সাহ বেড়েছে। দল গড়ে উঠলে এক দিকে যেমন পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরবে, অন্য দিকে তেমন গ্রামেরও বিকাশ হবে।” তাঁর কথায়, “আমরা বেশি সংখ্যক মহিলাকে স্ব-সহায়ক দলের সঙ্গে যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছি। দলগুলো যাতে আরও ভাল কাজ করে সেই দিকেও নজর রাখছি।”

পঞ্চায়েত সমিতির এক কর্তার কথায়, “কিছু স্ব-সহায়ক দল খুব ভাল কাজ করছে। মহিলারা নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। বাড়ির সকলের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। ওদের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ের কথা শুনলে গল্প বলেই মনে হয়। কিন্তু গল্প নয়, ওগুলো সত্যি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন