দোকানে লাইন ক্রেতাদের। নিজস্ব চিত্র।
কলকাতার রসগোল্লা বনাম কাঁথির কাজু সন্দেশ। ভাইফোঁটার বাজারেও কলকাতা আর কাঁথির ‘মিষ্টি’ লড়াই আজও অব্যাহত। যদিও এই লড়াইতে কেউ হারেনি, কেউ জেতেওনি। ফল সমান-সমান। খরিদ্দার সামলাতে সামলাতে কথাগুলি বলছিলেন কাঁথির প্রসিদ্ধ মিষ্টি বিক্রেতা লালু গিরি।
পুজোর সময় থেকেই মিষ্টির বাজার জমতে থাকে কাঁথিতে। সেই বাজার জমজমাট থাকে ভাইফোঁটা পর্যন্ত। এই সময় নানা ধরনের স্পেশাল মিষ্টি যেমন ছানাপোড়া, কালাকাঁদ, রসমালাই, ক্ষীরকদম, ল্যাংচা, পান্তুয়া, সন্দেশ ও রসগোল্লার দারুণ চাহিদা থাকলেও কাজু সন্দেশ বা কাজু বরফির চাহিদা থাকে সবার উপরে। কাজুসন্দেশ আজ আর শুধু কাঁথির মধ্যে নয়, সারা রাজ্যে দেশে এমনকী বিদেশেও রফতানি করা হচ্ছে। আর তাই ভাইয়ের পাতে সেই মিষ্টি তুলে দিতে শহরের বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে লম্বা লাইন দিদি-বোনেদের। শহরের একটি মিষ্টির দোকানের কর্ণধার লালু গিরির কথায়, “ভাইফোঁটায় বোনেরা ভাইয়ের মঙ্গল ও দীর্ঘায়ু কামনা করে ফোঁটা দিয়ে মিষ্টিমুখ করাতে তুলে দেবে নানা ধরনের মিষ্টি। তার মধ্যে অবশ্যই থাকবে কাঁথির কাজু সন্দেশ।”। তিনিই জানান, এই কাজু সন্দেশের আরেক নাম কাজু বরফিও বটে।
কাঁথি সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডের একটি মিষ্টি দোকানের কর্ণধার সমীর জানার কথায়, কলকাতায় হালে অনেকে কাজুসন্দেশ তৈরি করলেও কাঁথির তৈরি কাজুসন্দেশের স্বাদ আলাদা। প্রায় ৮৫ বছর আগে কাঁথিতে এই মিষ্টি প্রথম তৈরি করেন প্রয়াত মিষ্টি ব্যবসায়ী কালাচাঁদ প্রধান বা কালু ময়রা। কী ভাবে তৈরি করা হয় এই মিষ্টি? দোকানের কারিগররা জানান, প্রথমে কাজুবাদামকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় গুঁড়ো করা হয়। তারপর সেই গুঁড়ো দিয়েই তৈরি করা হয় মিষ্টি। আর স্বাদের জোরেই এই মিষ্টি মন কেড়েছে বিদেশের মানুষেরও। স্থানীয় এক দোকানের মালিক জানান, টোকিও, নিউ ইয়র্ক, লাস ভেগাস, মালয়েশিয়া এমনকী প্যারিসেও রফতানি হয়েছে এই মিষ্টি। রামনগর-১ ব্লক হাসপাতালে চিকিত্সক অলোক পাল বলেন, “আমার এক আত্মীয় বস্টনে থাকে। আমি ওর কাছে প্রায়ই কাজির সন্দেশ পার্সেল করে পাঠাই।”
কাঁথির পাঁউশি অন্ত্যোদয় অনাথ আশ্রমের কর্ণধার বলরাম করণের কথায়, “আশ্রমের অনাথ বোনেরা আশ্রমের ভাইদের দীর্ঘায়ু আর মঙ্গলকামনা করে ফোঁটা দেয়। আর সেই আনন্দঘন সেই মুহূর্তটিকে আরও মধুর করে তোলে এই সন্দেশ।” তাই ভাইফোঁটার ক’দিন আগে থেকেই মিষ্টির কারিগররা দিন রাত এক করে তৈরি করে চলেছেন কাজুর সন্দেশ। লালুবাবু জানান, ভাইফোঁটা উপলক্ষে দিনে প্রায় দেড়-দু’মণ ছামার সন্দেশ তৈরি চলছে। আর ছোট কাজু সন্দেশের দাম ৫ আর বড়র দাম ৮ টাকা। শুক্রবার বিকেল থেকেই শহরের বড় বড় মিষ্টির দোকানে দেখা গিয়েছে লম্বা লাইন। অন্য খদ্দেরদের সঙ্গে মারামারি করতে করতে সন্দেশ কিনছিলেন মানসী আচার্য। ‘লড়াই’ শেষে দু’হাতে মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে হাসিমুখে তাঁর জবাব, “ভাইফোঁটার সকালে মিষ্টি কেনার সময় কোথায়? আগেভাগেই কিনে রাখলাম। আমাদের বাড়িতে এই মিষ্টি ভাইদের পাতে দিতেই হয়।”