উন্নয়ন খতিয়ান দিয়েই ভোট প্রার্থনা মমতার

আর শুধু সময়ের অপেক্ষা। এক বছরের মধ্যে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কাজ এবার দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের যোগাযোগের জন্য চার লেনের সড়ক তৈরির কাজের আশ্বাস দিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার ঘাটালের জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বন্যায় আর ঘাটালের মানুষকে কষ্ট পেতে হবে না। ১৯৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এক বছরের মধ্যেই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কাজ শুরু হবে।”

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী ও দেবমাল্য বাগচি

ঘাটাল ও বেলদা শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৪ ০১:০০
Share:

ঘাটালে প্রার্থীদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

আর শুধু সময়ের অপেক্ষা। এক বছরের মধ্যে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কাজ এবার দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের যোগাযোগের জন্য চার লেনের সড়ক তৈরির কাজের আশ্বাস দিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার ঘাটালের জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বন্যায় আর ঘাটালের মানুষকে কষ্ট পেতে হবে না। ১৯৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এক বছরের মধ্যেই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কাজ শুরু হবে।” মঞ্চে হাজির ছিলেন ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্যের জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। তাঁর থেকে বিস্তারিত ভাবে বিষয়টি জেনে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ছ’ মাসের মধ্যেই কাজ শুরু হয়ে যাবে। আমি আরও চার মাস সময় নিচ্ছি। আমি কাউকে ভাঁওতা প্রতিশ্রুতি দিই না। তাই এক বছরের মধ্যেই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কাজ শুরু হবে, আমি কথা দিচ্ছি।”

Advertisement

বুধবার পশ্চিম মেদিনীপুরের যে তিনটি এলাকায় মুখ্যমন্ত্রীর সভা ছিল ঘাটালেরটি ছিল সর্বশেষ। এ দিন বিকেল চারটে নাগাদ কপ্টারে চেপে করে ঘাটাল অরবিন্দ স্টেডিয়ামে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন দেব। পরে প্রায় তিনশো মিটার সড়ক পথে গাড়িতে চেপে চারটে দশ মিনিট নাগাদ ঘাটাল বিদ্যাসাগর হাইস্কুল মাঠে সভার মঞ্চে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী। ঘাটালের চন্দ্রকোনা এলাকা, আরামবাগ লোকসভার অন্তর্গত। তাই এ দিন মঞ্চে হাজির ছিলেন আরামবাগের তৃণমূল প্রার্থী আফরিন আলি অপরূপা পোদ্দারও। মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চে ছিলেন প্রায় ২৫ মিনিট এবং পুরোটাই খোশমেজাজে। কখনও বলেন দেব ও আফরিনকে পছন্দ হয়েছে তো? কখনও আবার সকলের সঙ্গে গানে গলা মিলিয়েছেন। দুই প্রার্থীকে পাশে রেখে মমতা বলেন, “দেব ও আফরিন আপনাদের ঘরের লোক। আপনাদের জন্য কন্যাশ্রী থেকে কলেজ, রাস্তা, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল-সহ নানা কাজ করছি। তাই আগামী ৩০ এপ্রিল আফরিনকে ও ১২ মে দেবকে ভোট দেবেন।” তবে ওই দুই প্রার্থীকেও দায়িত্ব নিতে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ভোট মিটে গেলে এই দু’টি কাজের দেখভাল তোমাদের করতে হবে।”

দেবের সমর্থনে সবংয়েও এ দিন সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী। নারায়ণগড়ের বাখরাবাদের জনসভায় মেদিনীপুর কেন্দ্রের প্রার্থী সন্ধ্যা রায় ও তারকা প্রার্থী দেবকে নিয়ে হাজির ছিলেন তৃণমূল নেত্রী। রাজ্যের বিরোধী দলনেতার খাসতালুকে দাঁড়িয়ে সূর্যকান্ত মিশ্রের নাম না করেই বিগত দিনের সন্ত্রাস নিয়ে সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপিকে একই সারিতে দাঁড় করান তৃণমূলনেত্রী। তুলনামূলক ভাবে টেনে আনেন বর্তমান সরকারের আমলের উন্নয়ন-কথা।

Advertisement

সবংয়ের সভাস্থল পরীক্ষা করছেন
নিরাপত্তারক্ষী। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

সভার শুরু থেকে সিপিএমের প্রতি আক্রমণাত্মক ছিলেন তৃণমূলনেত্রী। শুরুতেই বাম আমলে পরেশ প্রধান, বিলুরি হাঁসদা, উপেন খাটুয়া, শম্ভু হাঁসদা, চিত্ত পাল, গঙ্গাধর দাস খুনের প্রসঙ্গ তুলে আনেন তিনি। মমতা বলেন, “সিপিএমের আমলে এখানে প্রায় ৮ জন খুন হয়েছিলেন। এই সব অঞ্চলে পুকুরে বিষ মিশিয়ে দেওয়া, হাত-পা কেটে দেওয়া হয়েছিল। সবের শিরোমণি ছিল সিপিএম। আজ সেই মেদিনীপুরে কোটি টাকার আইটি তৈরি হচ্ছে।”

প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকায় দাঁড়িয়ে বাম আমলের ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে সরব হন তৃণমূলনেত্রী। বলেন, “নতুন সরকার এসে জেলায় ৬টি মাল্টি সুপার হাসপাতাল, খড়্গপুরের ট্রমা কেয়ার সেন্টার-সহ নানা কাজ করেছে।” সিপিএমের ৩৪ বছরে যা করেছিল, বর্তমান সরকার আড়াই বছরে তা করেছে বলে তৃণমূলনেত্রীর দাবি।

জেলার উন্নয়ন সম্পর্কে ঘাটালের জনসভায় এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “২০১৫ সালের মধ্যেই দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের যোগাযোগ তৈরি হয়ে যাবে। প্রকল্পটির জন্য সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার অনুমোদন হয়ে গিয়েছে।” জনতার প্রতি সঙ্গে সংযোজন, “আপনারা ঘাটালে, চন্দ্রকোনায়, কেশপুরে ঘাসফুলে বোতাম টিপলে দিল্লিতে ফুটবে জোড়াফুল। ব্যস, এটুকু করলেই রাজ্যে আরও উন্নয়নের কর্মযোগ্য চলবে।” অবশ্য সভার শেষে কংগ্রেস, সিপিএম ও বিজেপিকে তাঁর কটাক্ষ, “এই দলটা দেশটাকে বিক্রি করে দিয়েছিল। বিজেপি সাম্প্রদায়িক ও সিপিএমকে খুনির দল।”

মুখ্যমন্ত্রীর সভা ঘিরে এ দিন ঘাটাল শহর মুড়ে ফেলা হয়েছিল কড়া পুলিশি নিরাপত্তায়। তবে এ দিন কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। চড়া রোদ উপেক্ষা করে সভায় হাজির ছিলেন সাধারণ মানুষ। সভায় আসা মানুষ যাতে কোনও সমস্যায় না পড়েন তার জন্য পানীয় জল থেকে খাবারের একাধিক স্টলেরও ব্যবস্থা করা হয়েছিল। পুরো সভার পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলই। হাজির ছিলেন রাজ্য ও জেলা স্তরের নানান নেতৃত্ব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন