জেলা পরিষদের খতিয়ান

উন্নয়ন তিমিরেই, পড়ে ৯৯ কোটি টাকা

১৩৭ কোটির মধ্যে খরচ হয়েছে ৩৮ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের হাতে থাকা ও পাওনা মিলিয়ে টাকা ছিল প্রায় ১৩৭ কোটি। তার মধ্যে জেলা পরিষদ খরচ করতে পেরেছে মাত্র ৩৮ কোটি টাকা! অর্থাৎ মাত্র এক চতুর্থাংশ টাকা খরচ করতে পেরেছে জেলা পরিষদ। পড়ে রয়েছে ৯৯ কোটি টাকা!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:০৬
Share:

১৩৭ কোটির মধ্যে খরচ হয়েছে ৩৮ কোটি টাকা।

Advertisement

২০১৪-১৫ অর্থবর্ষের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের হাতে থাকা ও পাওনা মিলিয়ে টাকা ছিল প্রায় ১৩৭ কোটি। তার মধ্যে জেলা পরিষদ খরচ করতে পেরেছে মাত্র ৩৮ কোটি টাকা! অর্থাৎ মাত্র এক চতুর্থাংশ টাকা খরচ করতে পেরেছে জেলা পরিষদ। পড়ে রয়েছে ৯৯ কোটি টাকা!

বিভিন্ন প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী উন্নয়নের কর্মযজ্ঞের বিবরণ শোনান। কিন্তু বাস্তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবির সঙ্গে প্রশাসনিক রিপোর্টের বিস্তর ফারাক রয়েছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কারণেই সম্প্রতি নবান্নে জেলাশাসক ও জেলা সভাধিপতিদের বৈঠকে ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী। উন্নয়নের কাজে ঢিলেমির জন্য রাজ্যের যে তিন জন জেলা সভাধিপতি প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বিশেষ ভাবে ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন, তার মধ্যে রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাও।

Advertisement

বরাদ্দ অর্থ পড়ে থাকায় শাসকদলকে বিঁধছে বিরোধীরাও। কংগ্রেসের জেলা পরিষদ সদস্য বিকাশ ভুঁইয়ার অভিযোগ, “পরিকল্পনায় ঘাটতির কারণেই টাকা খরচ করতে পারেনি জেলা পরিষদ।” যদিও জেলা পরিষদের দলনেতা তৃণমূলের অজিত মাইতির দাবি, “আপাত দৃষ্টিতে ৯৯ কোটি টাকা পড়ে রয়েছে দেখালেও এত টাকা পড়ে নেই। অনেক ক্ষেত্রেই সেই টাকায় কাজ হয়েছে। কিন্তু খরচের হিসাব এসে পৌঁছয়নি।” “বাম আমলের বহু পুরনো কিছু টাকাও পড়ে রয়েছে। সে টাকা কোন খাতে খরচ করা হবে তার কোনও নোট পর্যন্ত নেই। ফলে কিছু জটিলতাও তৈরি হচ্ছে।” পাল্টা অভিযোগ অজিতবাবুর। বরাদ্দ অর্থ পড়ে থাকার কারণ কী? সদুত্তর এড়িয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ বলেন, “পুরনো কিছু প্রকল্পের অর্থ পড়ে রয়েছে। তা খরচের চেষ্টা চলছে।”

দলের অনেক নেতাও প্রশ্ন তুলছেন, কাজ না হলে মানুষের কাছে জবাবদিহি করবেন কী ভাবে? দলের এক নেতার কথায়, “শুধু মঞ্চে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে উন্নয়ন নিয়ে সওয়াল করলে তো হবে না। মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে হবে। প্রশাসনিক কাজে এমন ঢিলেমি থাকলে দলকেও বাঁচানো কঠিন হবে।” প্রশাসনিক কাজে ঢিলেমি থাকায় জেলার রাজনীতি যাতে ধাক্কা না খায় সেই লক্ষ্যেই প্রবীণ ও অভিজ্ঞ নেতৃত্বদের নিয়ে উন্নয়নের কাজ দেখভালের কমিটি তৈরির উপরে জোর দিচ্ছেন অনেকে। ইতিমধ্যেই সেই কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। এ ব্যাপারে অবশ্য দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি জানিয়ে দেন, এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের দলনেতাই যা বলার বলবেন। জেলা পরিষদের কাজের বিষয়ে যে কিছু ক্ষেত্রে গাফিলতি রয়েছে তা স্বীকার করে অজিতবাবু জানান, যে সব পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতিতে টাকা পড়ে রয়েছে তাঁদের দ্রুত প্রকল্প রূপায়ণ করতে বলা হয়েছে, কাজ হয়ে যাওয়া প্রকল্পের খরচের হিসাবও দ্রুত পাঠাতে বলা হয়েছে। কোন কোন খাতে টাকা পড়ে রয়েছে?

সাধারণ চাষিরা এসে যাতে হাটে নিজেদের সব্জি বিক্রি করতে পারেন, সেই লক্ষ্যে গ্রামীণ হাট তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছিল সরকার। যে প্রকল্পে প্রায় ২ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা আগে থেকেই এসেছিল। ১৩ মাসে এক টাকাও খরচ করতে পারেনি জেলা পরিষদ! রাষ্ট্রীয় শ্রম বিকাশ যোজনাতে আগে থেকে পড়ে থাকা ৩৪ লক্ষ টাকাও খরচ হয়নি। গরিব মানুষের বাড়ি তৈরির প্রকল্প ইন্দিরা আবাস যোজনাতেও পড়ে রয়েছে কোটি কোটি টাকা! এই প্রকল্পে আগে থেকেই প্রায় ৬৩ কোটি টাকা টাকা পড়েছিল। চলতি বছরে আরও ১ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা পেয়েছে জেলা। কিন্তু খরচ হয়েছে মাত্র ১৫ কোটি টাকা। প্রায় ৫০ কোটি টাকা পড়ে রয়েছে।

পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতর থেকে উন্নয়ন খাতে পাওয়া ৫ কোটি ৩২ লক্ষ টাকার মধ্যে মাত্র ২৩ লক্ষ টাকা খরচ করতে পেরেছে জেলা পরিষদ। এ ব্যাপারে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা বলেন, “এত টাকা তো পড়ে থাকার কথা নয়। আমি নিয়মিত খবর নিই। কিছু ক্ষেত্রে প্রকল্পের খরচ বাড়ার কারণে দ্বিতীয়বার এস্টিমেট তৈরি করতে হওয়ায় কিছু টাকা পড়ে থাকার কথা।” যদিও জেলা পরিষদের হিসাবেই রয়েছে টাকা পড়ে থাকার উল্লেখ।

গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন (আরআইডিএফ) খাতে আসা টাকা খরচেও ব্যর্থ জেলা পরিষদ। অথচ, যে টাকা কালভার্ট, সেতুর সংযোগকারী রাস্তা-সহ বিভিন্ন খাতে খরচ করা যেত। সবংয়ের বাসিন্দা শঙ্কর সিংহ বলেন, “বাড়জীবনে সংযোগকারী রাস্তার অভাবে সেতু চালু করা যায়নি। অথচ, টাকা পড়ে থাকছে। ভাবতেই অবাক লাগে।” খরচ করা যায়নি সজল ধারা প্রকল্পের কোনও টাকাও। চন্দ্রকোনার জাড়া গ্রামের পরিমল রুইদাস বলেন, “গ্রামে নলকূপ থাকলেও মাঝে মধ্যেই তা খারাপ হয়ে যায়। তখন পাশের পাড়া থেকে কষ্ট করে জল আনতে হয়। দুঃখ লাগে যখন শুনি বিশুদ্ধ পানীয় জল প্রকল্পের টাকাও পড়ে রয়েছে অথচ আমাদের দুর্ভোগে পড়তে হয়।” টাকা পড়ে থাকায় পরবর্তী বরাদ্দ পেতেও সমস্যা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন