কালীপুজোয় থিমের লড়াই পূর্বে

কোথাও দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত সাধারণ উপকরণ দিয়ে শিল্প, কোথাও হারিয়ে যাওয়া দিনের বাদ্যযন্ত্র আবার কোথাও কাঁসা-পিতলের কুটির শিল্পের কারুকার্য- শারদোৎসবের পর কালীপুজোতেও থিমের লড়াইয়ে এক অপরকে টেক্কা দিতে প্রস্তুত হচ্ছে তমলুকের পুজো কমিটিগুলি। তমলুক শহরের বাদামতলায় উত্তরায়ণ ক্লাবের এ বার পুজোর থিম ‘সৃষ্টি সুখের উল্লাসে’। প্রতিদিনের ব্যবহৃত সামগ্রী দিয়ে তৈরি করা নানা শিল্পকর্ম দিয়ে মণ্ডপসজ্জায় তুলে ধরা হয়েছে শিল্পীর সৃষ্টি।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৪ ০০:১৪
Share:

মণ্ডপে জঙ্গলের পরিবেশ (বাঁ দিকে)। এগরায় তৈরি হচ্ছে প্রতিমা (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

কোথাও দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত সাধারণ উপকরণ দিয়ে শিল্প, কোথাও হারিয়ে যাওয়া দিনের বাদ্যযন্ত্র আবার কোথাও কাঁসা-পিতলের কুটির শিল্পের কারুকার্য- শারদোৎসবের পর কালীপুজোতেও থিমের লড়াইয়ে এক অপরকে টেক্কা দিতে প্রস্তুত হচ্ছে তমলুকের পুজো কমিটিগুলি।

Advertisement

তমলুক শহরের বাদামতলায় উত্তরায়ণ ক্লাবের এ বার পুজোর থিম ‘সৃষ্টি সুখের উল্লাসে’। প্রতিদিনের ব্যবহৃত সামগ্রী দিয়ে তৈরি করা নানা শিল্পকর্ম দিয়ে মণ্ডপসজ্জায় তুলে ধরা হয়েছে শিল্পীর সৃষ্টি। সিলিং ফ্যান, জলের পাইপ, বিভিন্ন দড়ি প্রভৃতি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে নানা শিল্পকর্ম। ক্লাবের সম্পাদক প্রহ্লাদ ভট্টাচার্য জানান, “শিল্পীর ভাবনা ও সৃষ্টি কর্মের প্রদর্শন করা হচ্ছে মণ্ডপে।” শহরের স্টেডিয়াম গেটে কিশোর সঙ্ঘের পূজার থিম ‘সুরের ভুবনে’। মণ্ডপ সজ্জায় তুলে ধরা হয়েছে হারানো দিনের বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র ছাড়াও বিভিন্ন আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের মডেল। ৪০ ফুট উঁচু মণ্ডপ হচ্ছে পিয়ানোর আদলে। আর মণ্ডপের প্রবেশ পথ হচ্ছে মাউথ অরগ্যানের আদলে। মণ্ডপ সজ্জায় তুলে ধরা হচ্ছে বীণা, রাবাব, স্যাক্সোফোন, বেহালা, ধামসা, মাদল, শঙ্খের মডেল। মাটির প্রতিমার পিছনেও থাকছে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের মডেল। আর মণ্ডপে বাজবে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের সুর। ক্লাবের সম্পাদক বাচ্চু সামন্ত বলেন, “আমাদের জীবনে গান আর সুরের গুরুত্ব যেমন অপরিসীম, তেমনি সেই গানের সুরের জন্য বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরতেই এই মণ্ডপসজ্জা করা হয়েছে।”

তমলুক হাসপাতাল মোড়ের বিদ্রোহী সঙ্ঘের এ বার পুজোর থিম ‘আঁধার ঘুচিয়ে আলো’। প্রায় এক লক্ষ মাটির প্রদীপ, কাঠের কাজ দিয়ে এখানে মাটির প্রদীপের আদলে মণ্ডপ সজ্জা করা হচ্ছে। ক্লাবের পুজো কমিটির সভাপতি বিমল ভৌমিক বলেন, “রাতের আঁধার ঘোচানোর জন্য প্রদীপের আলো প্রয়োজন। তাই আঁধার ঘোচানোর প্রতীক হয়ে ওঠে প্রদীপ। সেই মাটির প্রদীপকেই আমাদের দৈনন্দিন জীবনের আঁধার ঘোচানোর মাধ্যম হিসেবে তুলে ধরে এই মণ্ডপ সজ্জা করা হয়েছে।” তমলুকের হাসপাতাল মোড়ের ফাইভ স্টার ক্লাবের পুজোয় এ বার বিশ্ব উষ্ণায়ণের বিপদকে থিমের মাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে। মণ্ডপ সজ্জায় তৈরি করা হয়েছে বিশালাকার পৃথিবীর গোলাকার মডেল। থিমের মাধ্যমে দেখানো হবে উষ্ণায়নের জেরে বরফ গলে গিয়ে স্থলভাগ ক্রমশ জলে ভরে যাচ্ছে। কাঁসা-পিতল দিয়ে তৈরি হচ্ছে প্রতিমা। কাঁসার প্রতিমার গায়ে থাকছে পেতলের তৈরি সুদৃশ্য গয়না। ক্লাবের সভাপতি চঞ্চল খাঁড়া বলেন, “বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে পৃথিবীর আবহাওয়ার ক্ষতি ও তাঁর বিপদ নিয়ে মানুষকে সচেতন করতেই এই প্রয়াস।”

Advertisement

শহরের হাসপাতাল মোড়ের নিউ স্টার ক্লাবের এ বার পুজোর মণ্ডপ সজ্জার থিম পুজোর ‘বরণডালা’। এখানে বাঁশের কুলো, দই, চামচ, শোলা, ধানের কুড়ো দিয়ে মণ্ডপ সজ্জা করা হচ্ছে। ২০ ফুট উঁচু প্রতিমা তৈরি হচ্ছে সামুদ্রিক ঝিনুক দিয়ে। পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ বার তমলুক শহরের দক্ষিণ চড়া শঙ্করআড়ার রিভার প্লেট ক্লাবের মণ্ডপে তুলে ধরা হচ্ছে ‘বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ’। জঙ্গলের পরিবেশ তুলে ধরতে প্লাইউড, ভেলভেট, জাল, নারকেল, বেল, পাইন ফল, বাকুলি, সাইকাস পাতা-সহ ৫০ রকমের উপকরণের কারুকার্য দিয়ে মণ্ডপসজ্জা করা হচ্ছে। মণ্ডপের ভিতরে থাকছে বিভিন্ন বন্য পশু-পাখীর মডেল। মাটির প্রতিমা হবে বনদেবীর রূপে। ক্লাবের কর্মকর্তা গোপাল সামন্ত জানান, হারিয়ে যাওয়া বনাঞ্চল ও পশু-পক্ষী সংরক্ষণ নিয়ে মানুষকে সচেতন করতেই মণ্ডপ সজ্জায় এই দৃশ্য তুলে ধরা হচ্ছে। দক্ষিণচড়া শঙ্করআড়ায় রাজদূত ক্লাবের মণ্ডপসজ্জা করা হচ্ছে রাজস্থানের একটি রাজবাড়ির প্রবেশ পথের আদলে। শহরের শালগেছিয়ায় পুরনো রাজবাড়ির আদলে মণ্ডপসজ্জা করা হচ্ছে। পাটের চট, থার্মোকল, বিভিন্ন গাছপালা দিয়ে তৈরি হচ্ছে বিশালাকার মণ্ডপ।

তমলুক শহরের মালিজঙ্গল পল্লি ক্রিকেট ক্লাবের পুজোর থিম ‘মধুর সন্ধান’। গাছপালায় ফুটে থাকা ফুলে ফুলে ঘুরে মৌমাছির মধু সংগ্রহ করে মৌচাক বাঁধা আর ফুলে প্রজাপতির মধু পানের দৃশ্য তুলে ধরা হচ্ছে মণ্ডপসজ্জায়। সুপুরি, আমড়া, মেহগনি গাছের ছাল, কাঠের চামচ দিয়ে মণ্ডপের কারুকার্যে তুলে ধরা হয়েছে মৌচাক আর বিভিন্ন ফুলের রূপ। ক্লাবের সম্পাদক রণেন্দ্রনাথ মালাকার বলেন, “ফুল, মৌচাক আর প্রজাপতির সহবস্থানের মনোরম দৃশ্য পরিবেশ থেকে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। সেই দৃশ্যই তুলে ধরা হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন