ফুটবল খেলা, পথ শিশুদের স্কুল চালানোর পর, এ বার নির্মাণ কাজও করবে পুলিশ। এমনটাই নির্দেশ এসেছে ‘কমিউনিটি হল কাম রিক্রিয়েশন সেন্টার’ তৈরির ক্ষেত্রে।
রাজ্যের মাওবাদী প্রভাবিত জেলাগুলিতে ভিন্ রাজ্যের সীমানাবর্তী গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় কমিউনিটি সেন্টার তৈরি করা হবে বলে গত জানুয়ারি মাসে ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ১৬ অক্টোবর ঝাড়গ্রামে এসেও তিনি জানান, কমিউনিটি হল তৈরি হচ্ছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নয়াগ্রাম, গোপীবল্লভপুর-১ ও ২, জামবনি ও বিনপুর ২ এই পাঁচটি ব্লকের ২২টি গ্রাম পঞ্চায়েত ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড ও বিহারের সীমানায় অবস্থিত। সেই মতো ২২টি এমন কেন্দ্র তৈরির জন্য অর্থ মঞ্জুর করে যুব দফতর। গত ২৬ মার্চ প্রথম ধাপের অর্ধেক টাকাও দিয়ে দেওয়া হয় জেলা প্রশাসনকে। বিডিওদের মাধ্যমে কাজের তোড়জোর শুরু হয়ে যায়। ২৬ মে বিডিওদের টাকা বিলি করে দেওয়া হয়। কয়েকটি কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করতে দরপত্র আহ্বান করার কাজও শুরু হয়। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজ্য যুব ও ক্রীড়া দফতর টেলিফোনে প্রশাসনকে জানিয়ে দেয়, ওই টাকা খরচের প্রয়োজন নেই। এই কাজ করবে পুলিশ। ১৬ জুন সেই মর্মে লিখিত নির্দেশও এসে যায়।
এখন প্রশ্ন, যে পুলিশ নিজেদের অফিস, বাংলো, আবাসন নির্মাণ থেকে সংস্কার সব ক্ষেত্রেই পূর্ত দফতরের উপর নির্ভরশীল, যাদের কোনও কারিগরি বিভাগ নেই, তারা কী ভাবে এই নির্মাণ কাজ করবে? এই নির্দেশে অবাক হন প্রশাসনিক কর্তারা। তবে সরকারি নির্দেশ মেনে টাকা দিয়ে দেওয়া হয় জেলা পুলিশকে। বেলপাহাড়ি, গোপীবল্লভপুর ১ ব্লকে ইতিমধ্যে কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, ব্লক ও জেলা স্তরের ইঞ্জিনিয়ারদের সাহায্য নিয়েই কাজ এগোচ্ছে পুলিশ। এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত) সুশান্ত চক্রবর্তী শুধু বলেন, “সরকারি নির্দেশ মতো আমরা পুলিশকে টাকা দিয়ে দিয়েছি।” আর এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলতে চাননি জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। তাঁর সাফ কথা, “প্রশাসনিক কাজ নিয়ে আমি খবরের কাগজের কাছে ব্যাখ্যা দেব না।” কিন্তু আপনাদের তো কারিগরি বিভাগটাই নেই। কী ভাবে কাজ করবেন? পুলিশ সুপারের জবাব, “এ ব্যাপারে আপনাকে কিছু বলব না।”
মাওবাদী এলাকায় ক্রীড়া চর্চার উপর প্রথম থেকেই জোর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নতুন সরকারের আমলে শুরু হয়েছে জঙ্গলমহল কাপ। ফুটবল ছাড়াও অন্য খেলা হচ্ছে। কিন্তু সর্বত্র খেলার মাঠ, উপযুক্ত পরিবেশ নেই। পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বিষয়ে পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার পরেই মুখ্যমন্ত্রী কমিউনিটি সেন্টার তৈরির জন্য পদক্ষেপ করতে বলেন। সেই মতো প্রশাসনিক কর্তারা পরিকল্পনা তৈরি করে যুব দফতরে পাঠিয়ে দেয়। প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য ১৮ লক্ষ টাকা করে মঞ্জুর করেছিল যুব দফতর। গত ৩১ মার্চ প্রথম কিস্তির অর্ধেক টাকা দিয়ে দেওয়া হয়। বিডিওরা দরপত্র আহ্বানের কাজও শুরু করে দেন। তারপরেই নির্দেশ আসে, কাজ করবে পুলিশ। কিন্তু পুলিশ নির্মাণ কাজ করবে কী করে? পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে খবর, কাজের জন্য তাই ব্লক ও জেলা প্রশাসনের সাহায্য চেয়েছে পুলিশ। ওই সব এলাকায় জলের ব্যবস্থা করতেও বিডিওদের কাছে সাহায্য চাওয়া হয়েছে। এক বিডিও-র কথায়, “নামে পুলিশ কাজ করবে। আসলে করতে হবে আমাদেরই। শুধু টাকাটা খরচ করবে পুলিশ!”
এই ঘটনায় প্রশাসনিক কর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এক প্রশাসনিক কর্তার কথায়, “যদি পুলিশকে দিয়েই কাজ করানোর পরিকল্পনা ছিল, তাহলে প্রশাসনকে টাকা দেওয়া হল কেন? আবার পুলিশকেই যদি দায়িত্ব দেওয়া দিল, তাহলে পুলিশ সব করুক। দেখা যাচ্ছে, সব করতে হবে আমাদেরই। শুধু টাকা খরচের অধিকার পুলিশের। এ এক আজব ব্যাপার।”
প্রশ্ন উঠছে পুলিশকে দিয়ে এই কাজ করানোর উদ্যোগ কেন? পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পুলিশকে দিয়ে কাজ করিয়ে যুবকদের মনে পুলিশের প্রতি আস্থা ফেরানোই উদ্দেশ্য। তাছাড়াও ওই কেন্দ্রগুলির রাশ থাকবে পুলিশের হাতে। মাওবাদী মোকাবিলায় এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলেই দেখতে চাইছে সরকার।