সন্তান হারিয়ে দীর্ঘ ১৩ বছর আদালতের দরজায় দরজায় ঘুরেছেন মা। রিজিয়া বিবি নামে ওই মহিলার আর্জি মেনে কলকাতা হাইকোর্ট বুধবার তাঁর একমাত্র ছেলের হত্যাকাণ্ডে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিল। তিন মাসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট পেশ করারও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।
এই নির্দেশে রিজিয়া বিবি খুশি। তাঁর আশা, এ বার হয়তো দোষীদের শাস্তি হবে। তবে আইনজীবীদের একাংশের প্রশ্ন, ১৩ বছর বাদে সিআইডি এই হত্যাকাণ্ডে কী আর বিশেষ তদন্ত করবে? তথ্যপ্রমাণই বা আর কোথায় পাওয়া যাবে?
২০০১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি হলদিয়ায় হিন্দুস্থান লিভারের এলাকার মধ্যে মারা যান শেখ রফিক। খুব কাছ থেকে তাঁর কানের পাশে গুলি করা হয়। রফিক ছিলেন ওই সংস্থার গাড়িচালক। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। রিজিয়া বিবির আইনজীবী প্রতীককুমার ভট্টাচার্য বলেন, “আমার মক্কেল ঘটনার রাতেই দুর্গাচক থানায় এফআইআর করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ওসি অভিযোগ নিতে চাননি। মহিলা বারবার পুলিশের বড়কর্তাদের কাছে অভিযোগ করেন। কিন্তু তাঁরা অভিযোগ শোনেননি।”
দু’দিন পরে পুলিশ ওই খুনের ব্যাপারে একটি রিপোর্ট জমা দেয়। তাতে বলা হয়, ওই রাতে কিছু ডাকাত হিন্দুস্থান লিভারে গেটে আক্রমণ চালায়। তখন দু’পক্ষের মধ্যে গুলি চালাচালি হয়। একটি গুলি কোনও ভাবে রফিকের গায়ে লেগে যায়। তাতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এই রিপোর্টের পরেই নিহতের মা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করেন।
২০০৩ সালে ম্যাজিস্ট্রেট সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেয়। ২০০৩ সালের ২৬ জুলাই জেলার পুলিশ সুপারকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সাত বছরেও সেই নির্দেশ পালিত হয়নি। গ্রেফতারও হয়নি কেউ। নিহতের মা একা ঘুরে ঘুরে বেড়িয়েছেন ছেলের মৃত্যুর তদন্তের দাবি নিয়ে। ২০০৮ সালে তিনি সিআইডি তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন। বুধবার সেই মামলাটি ওঠে। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী সিআইডিকে অবিলম্বে রফিকের মৃত্যুর তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দিয়ে জানান, তিন মাসের মধ্যেই তদন্ত শেষ করতে হবে।