খরচ বেশি ধরছে প্রশাসন, মত সর্বদলের

এক কাপ চা আর বিস্কুট ৫ টাকা, টিফিনের প্যাকেট ২৫ টাকা, মাথাপিছু নিরামিষ খাবার ৪০ টাকা আর আমিষ ৬৫ টাকা। কোনও দোকান বা হোটেলের দামের তালিকা নয়, জেলা প্রশাসন সর্বদল বৈঠক ডেকে জানিয়ে দিয়েছে এমন ৫৪টি জিনিসের মূল্য।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৪ ০২:০৬
Share:

তমলুকের জেলা প্রশাসনিক ভবনে চলছে সর্বদল বৈঠক। —নিজস্ব চিত্র।

এক কাপ চা আর বিস্কুট ৫ টাকা, টিফিনের প্যাকেট ২৫ টাকা, মাথাপিছু নিরামিষ খাবার ৪০ টাকা আর আমিষ ৬৫ টাকা। কোনও দোকান বা হোটেলের দামের তালিকা নয়, জেলা প্রশাসন সর্বদল বৈঠক ডেকে জানিয়ে দিয়েছে এমন ৫৪টি জিনিসের মূল্য। এই হিসাব মেনেই লোকসভা নির্বাচনে প্রতি প্রার্থীকে খরচের হিসাব দিতে হবে।

Advertisement

পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের তরফে তমলুকের জেলা প্রশাসনিক অফিসে শুক্রবারের সর্বদল বৈঠকে এই প্রস্তাব পেশ হওয়া মাত্র এর বিরোধিতায় সরব হয় অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। বৈঠকে উপস্থিত তৃণমূল নেতা দিব্যেন্দু রায় বলেন, “সভা করার জন্য চেয়ার-টেবিল পিছু ভাড়া ধরা হয়েছে ১৫ টাকা, র্যালির জন্য প্রতি মোটর সাইকেলের খরচ ধার্য করা হয়েছে ২৫০ টাকা। এমনকী রিকশা ভাড়া দিন প্রতি নির্দিষ্ট হয়েছে ২৭৫ টাকা যা প্রকৃত খরচের চেয়ে বেশি।” তাঁকে সমর্থন করেন জেলা কংগ্রেস সম্পাদক মৃণাল পাল। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শক্তি বেরা বলেন, “ভোট প্রচারের খরচে জেলা প্রশাসন যে দাম নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, তা কিছুটা বেশি।” সব মিলিয়ে ‘বেনজির’ ঐক্য তৈরি হয় সভায়। অবস্থা দেখে রাজনৈতিক দলগুলিকে আজ, শনিবার তাঁদের প্রস্তাব জানাতে বলা হয়েছে।

প্রশাসনের অবশ্য দাবি, গত বিধানসভা ভোটের হিসাব মতোই ওই তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। গত তিন বছরে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় এ বার ওই তালিকার সামান্য কিছু জিনিসের দামই বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু, কেন সহমত হল না দলগুলি? রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের তরফে ব্যাখ্যা, একসঙ্গে আড়াইশো বা পাঁচশো কাপ চা করলে কখনই চা-বিষ্কুট মিলিয়ে ৫ টাকা করে দাম হবে না। তাঁরা একই যুক্তি দিচ্ছেন আমিষ বা নিরামিষ খাবারের ক্ষেত্রেও। তবে না-মানার পিছনে অন্য যুক্তিও আছে। অভিযোগ, রাজনৈতিক দলগুলি কিছু বিশেষ খাতের খরচ কমিয়ে দেখান। যার মধ্যে অন্যতম থাকে চা-বিস্কুট বা টিফিন খরচ। ‘অন্য’ খাতে সেই বাড়তি টাকা খরচ করেন। তবে, কোনও রাজনৈতিক দলই এ অভিযোগ মানতে চায়নি। উল্লেখ্য, এ বার নির্বাচন কমিশন খরচের উর্ধ্বসীমা বেঁধে দিয়েছে ৭০ লক্ষ টাকা।

Advertisement

এ দিনের সর্বদল বৈঠকে সরকারি দেওয়াল, খুঁটিতে থাকা রাজনৈতিক দলের পতাকা, ব্যানার, হোর্ডিং, পোস্টার, দেওয়াল লিখন দ্রুত সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়। বৈঠকে লোকসভা নির্বাচনে আদর্শ আচরণ বিধি মেনে চলার পাশাপাশি প্রার্থীদের প্রচার সংক্রান্ত নানা নির্দেশিকাও দেওয়া হয়। কমিশনের সূচি অনুযায়ী আগামী ১২ মে তমলুক, কাঁথি ও ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ হবে। এ ছাড়া মেদিনীপুর লোকসভা এলাকার মধ্যে থাকা জেলার এগরা বিধানসভা এলাকায় আগামী ৭ মে ভোট হবে।

জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বলেন, “কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের তরফে লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পর থেকেই গোটা জেলায় নির্বাচনী আদর্শ আচরণ বিধি কার্যকর হয়েছে। এর ফলে সরকারি জায়গায় রাজনৈতিক দলের প্রচারমূলক কিছুই লাগানো যাবে না।” এখনও যে সব সরকারি জায়গায় প্রচারমূলক কিছু থাকলে, সেগুলি আজ, শনিবারের মধ্যে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলকে খুলে নিতে বলা হয়েছে। না হলে, প্রশাসনের তরফে তা সরিয়ে দেওয়া হবে। আর এ জন্য সরকারি ভাবে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে খরচা নেওয়া হবে বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে।

বৈঠকে জেলাশাসক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন, তৃণমূলের বিধায়ক অর্ধেন্দু মাইতি, তমলুক শহর সভাপতি দিব্যেন্দু রায়, সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শক্তি বেরা, কংগ্রেসের জেলা সম্পাদক মৃণাল পাল, সিপিআই জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অসিত বেরা, ফরওয়ার্ড ব্লক জেলা সভাপতি বিশ্বনাথ সিংহ প্রমুখ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন