কবে জ্বলবে আলো? অপেক্ষায় চৌরঙ্গি।—নিজস্ব চিত্র।
জেলার দুই প্রধান শহরের সংযোগস্থলে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা চৌরঙ্গি। এই এলাকার উপর দিয়েই চলে গিয়েছে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক। অদূরে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক। চৌরঙ্গির একদিকে খড়্গপুর শহরে যাওয়ার রাস্তা। অন্য দিকের রাস্তা মেদিনীপুর শহরগামী।
এমন গুরুত্বপূর্ণ এলাকাতেও পর্যাপ্ত পথবাতি নেই। সন্ধে নামলেই গোটা এলাকা অন্ধকারে ডুবে যায়। দুর্ভোগে পড়েন পথচলতি মানুষজন। মাঝে-মধ্যে দুর্ঘটনাও ঘটে। অবশেষে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হয়েছে মেদিনীপুর-খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এমকেডিএ)। চৌরঙ্গির চারপাশ আলোকিত করতে সৌর পথবাতি বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য ২২ লক্ষ টাকা বরাদ্দও করেছে এমকেডিএ। বিদ্যুতের খরচ বাঁচাতেই সৌর আলো বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এমকেডিএ-র চেয়ারম্যান তথা মেদিনীপুরের বিধায়ক মৃগেন মাইতি বলেন, “আমরা ওখানে সৌর আলোরই ব্যবস্থা করছি। চারপাশে সব মিলিয়ে ৩০টি বাতি থাকবে। যত শীঘ্র সম্ভব কাজ শুরুর চেষ্টা চলছে।”
সময়ের সঙ্গে বদলে যাচ্ছে মেদিনীপুর-খড়্গপুর শহরের চেহারা। নতুন বসতি গড়ে উঠছে। বাড়ছে জনসংখ্যা। জেলার সদর শহর মেদিনীপুর। আর খড়্গপুর রেলশহর। দুই শহরেই কাজ হাতে নিয়ে প্রতিদিন কয়েকশো মানুষ আসেন। রাজ্যে পালাবদলের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে দুই শহরকেই সুন্দর করে সাজানোর জন্য ত্রি-ফলা আলো লাগানো হয়েছে। সন্ধ্যা নামলে মেদিনীপুর-খড়্গপুর শহর যেখানে আলোয় ঝলমল করে, সেখানে চৌরঙ্গির মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ডুবে থাকে অন্ধকারে।
কাঁসাইয়ের দু’দিকের দুই শহর মেদিনীপুর-খড়্গপুর এবং তার আশপাশের এলাকার সার্বিক উন্নয়নের জন্যই ২০০৪ সালে গড়ে ওঠে এমকেডিএ। চৌরঙ্গির মতো এলাকায় পর্যাপ্ত পথবাতি না থাকায় গাড়ি চালক এবং আরোহীদের প্রাণ হাতে করেই চলাচল করতে হয়। ৬ এবং ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে প্রচুর পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল করে। আলোর অভাবে মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে। চৌরঙ্গির আশপাশের কিছু এলাকা আবার ‘মৃত্যু-ফাঁদে’ পরিণত হয়েছে। যেখানে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। কখনও রাতের বেলায়, কখনও আবার দিনেই। পরিস্থিতি দেখে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে পুলিশও। জানা গিয়েছে, চৌরঙ্গির মতো এলাকায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করার আর্জি জানিয়ে জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছিল জেলা পুলিশই। জেলা প্রশাসন বিষয়টি এমকেডিএ-কে জানায়। এরপরই জেলার গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকায় পর্যাপ্ত পথবাতির ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হয় এমকেডিএ।
জেলা পুলিশের এক আধিকারিক মানছেন, সন্ধের পরে আলোর অভাবে ওই এলাকায় গাড়ি চালক এবং আরোহীদের সমস্যা হয়। চৌরঙ্গির আশপাশে যে সব দুর্ঘটনা ঘটে, তার একাংশ চালকের ভুলেই হয়। কখনও দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি রাস্তার পাশে উল্টে যায়। কখনও গাড়ি গাছে গিয়ে ধাক্কা মারে। পরিস্থিতি দেখে শুধু চৌরঙ্গি নয়, জেলার উপর দিয়ে চলে যাওয়া ৬ এবং ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের বেশ কয়েকটি এলাকাকে ‘ব্ল্যাক স্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তালিকায় সব মিলিয়ে ২৯টি এলাকার নাম রয়েছে। এগুলো খড়্গপুর লোকাল-সহ সব মিলিয়ে ৭টি থানা এলাকার অন্তর্গত।” তাঁর কথায়, “পথ দুর্ঘটনার সংখ্যা কমাতে সব রকম চেষ্টা চলছে। কোন কোন এলাকায় দুর্ঘটনা বেশি হয়, কী ভাবে সেখানে দুর্ঘটনা ঘটে, সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ‘ব্ল্যাক স্পট’-এ বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এটা ঠিক, পর্যাপ্ত পথবাতির ব্যবস্থা করা হলে চৌরঙ্গিতেও দুর্ঘটনার সংখ্যা কমবে।”
এলাকায় যাত্রী প্রতীক্ষালয়ও নেই। অদূরে একটি প্রতীক্ষালয় থাকলেও, তা ভাঙাচোরা। সামান্য বৃষ্টিতে ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে। অগত্যা, রাস্তার পাশেই বাস ধরার জন্য দাঁড়াতে হয়। এমকেডিএ-র চেয়ারম্যানের অবশ্য আশ্বাস, “এ বছরই ওখানে নতুন যাত্রী প্রতীক্ষালয় করা যায় কি না দেখছি।” ওখানে যে ফাঁকা জায়গা রয়েছে, সেখানে বাগান তৈরি করা হবে বলেও জানান মৃগেনবাবু।