জেলা সম্পাদক পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন দীপক

তিন দফার বেশি দলের জেলা সম্পাদক পদে থাকা যাবে না সিপিএমের এই নীতি মেনে অবশেষে পদ থেকে সরলেন বিতর্কিত নেতা দীপক সরকার। পশ্চিম মেদিনীপুরে দলের নতুন জেলা সম্পাদক হলেন প্রবীণ কৃষক নেতা তরুণ রায়। ২০০৫-এ সিপিএমের জেলা সম্মেলনে জেলা সম্পাদক পদের জন্য তরুণ রায়ের সঙ্গেই দীপকবাবুর লড়াইয়ের উপক্রম হয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৪
Share:

নতুন জেলা সম্পাদক তরুণ রায়ের সঙ্গে দীপক সরকার (বাঁ দিক থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয়)। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

তিন দফার বেশি দলের জেলা সম্পাদক পদে থাকা যাবে না সিপিএমের এই নীতি মেনে অবশেষে পদ থেকে সরলেন বিতর্কিত নেতা দীপক সরকার। পশ্চিম মেদিনীপুরে দলের নতুন জেলা সম্পাদক হলেন প্রবীণ কৃষক নেতা তরুণ রায়। ২০০৫-এ সিপিএমের জেলা সম্মেলনে জেলা সম্পাদক পদের জন্য তরুণ রায়ের সঙ্গেই দীপকবাবুর লড়াইয়ের উপক্রম হয়েছিল। দলের তৎকালীন রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাসের হস্তক্ষেপে সে দফায় ভোটাভুটি এড়িয়ে পদে আসেন দীপকবাবু। এ বার অবশ্য তিক্ততাশূন্য পরিবেশেই ব্যাটন বদল হয়েছে।

Advertisement

দলের নতুন জেলা কমিটির বৈঠকে মঙ্গলবার দীপকবাবুই নতুন জেলা সম্পাদক হিসেবে তরুণবাবুর নাম প্রস্তাব করেন। সর্বসম্মতিতে তা গৃহীত হয়। সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি নিলেও দীপকবাবু জেলা কমিটির সদস্য থাকছেন। যে সূত্র ধরে জেলা নেতাদের একাংশ ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, “দলের অন্দরে আগের ফাটল জুড়ে গিয়েছে। হাজার বিতর্ক, অভিযোগের পরেও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএম দীপক সরকারের ছায়া থেকে পুরোপুরি বেরোতে পারল না।” তবে দলের অন্য অংশের যুক্তি, “রাজ্য সিপিএমে এখন দীপক-বিরোধী গোষ্ঠীরই পাল্লা ভারী। ফলে, এই মুহূর্তে জেলা রাজনীতিতে দীপকবাবুর পক্ষে ততটা প্রাসঙ্গিক থাকা হয়তো সম্ভব হবে না।” দীর্ঘদিন দলের অন্দরে দীপক-বিরোধী শিবিরের নেতা বলে পরিচিত সূর্যকান্ত মিশ্রের উপস্থিতিতেই মঙ্গলবার দলের নতুন জেলা কমিটির বৈঠক হয়। তবে সূর্যকান্তবাবু এ প্রসঙ্গে মুখ খোলেননি।

১৯৮৫ সালে সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য হওয়া দীপকবাবু ১৯৯২-তে অবিভক্ত মেদিনীপুরে দলের জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। ২০০২-এ মেদিনীপুর জেলা ভাগের পরে সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক হন এই প্রাক্তন শিক্ষক। গোড়ায় সূর্যকান্তবাবু, তরুণবাবু, লক্ষ্মণ শেঠদের সঙ্গে দীপকবাবুর ঘনিষ্ঠতাই ছিল। ক্রমে পরিস্থিতি পাল্টায়। দীপক-অনুগামী এবং সূর্যকান্ত-ঘনিষ্ঠদের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। পরে সূর্যবাবু বিধায়ক থেকে মন্ত্রী হয়ে রাজ্য রাজনীতির পরিসরে চলে যান। দীপকবাবু জেলা আঁকড়েই ছিলেন। ২০১০-এ তিনি সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হন।

Advertisement

এই দীর্ঘ সময়ে বিতর্ক কখনও দীপকবাবুর পিছু ছাড়েনি। তাঁর আমলে চমকাইতলা, কেশপুর, গড়বেতায় রাজনৈতিক বিরোধীদের উপরে অত্যাচার চালানোর অভিযোগ উঠেছে সিপিএমের বিরুদ্ধে। আবার নেতাই-লালগড়ে মাওবাদী মোকাবিলায় দলের কৌশল নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। জঙ্গলমহলের পরিস্থিতি মোকাবিলায় দীপকবাবুর সশস্ত্র প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত দলের অন্দরেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে। বিশেষ করে বাম আমলের শেষের দিকে নেতাইয়ে সশস্ত্র প্রতিরোধের নামে সাধারণ মানুষের প্রাণহানি দলকে আরও বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও দীপকবাবুদের সশস্ত্র প্রতিরোধের কৌশল সমর্থন করেননি। পক্ষান্তরে, তপন ঘোষ, সুকুর আলি, অনুজ পাণ্ডে, ডালিম পাণ্ডের মতো বিতর্কিত সিপিএম নেতারা দীপকবাবুর ‘মদতেই’ বেড়ে উঠেছেন বলে লাগাতার প্রচার শুরু করেন বিরোধীরা। তবে এ সবের পরেও দল দীপকবাবুকে জেলার পদ থেকে সরায়নি। উল্টে বুদ্ধদেববাবু মেদিনীপুরে দলের সভায় ‘‘নেতাইয়ে আমাদের ছেলেরা ভুল করেছিল”, বলে মন্তব্য করার পরে আলিমুদ্দিন থেকে বার্তা দেওয়া হয়েছিল, নেতাই নিয়ে ওই মন্তব্য না করলেই ভাল হত।

সিপিএম সূত্রের খবর, এত দিনের যে পদ তাঁর ‘অভ্যাস’ হয়ে গিয়েছিল, সেই পদ ছাড়ার দিনে দীপকবাবু ঘনিষ্ঠদের বলেছেন, “দলের নির্দেশের বাইরে গিয়ে কখনও কিছু করিনি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন