ডাইন অপবাদে এক বৃদ্ধাকে শারীরিক ভাবে নিগ্রহ করার অভিযোগ উঠল একাংশ গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে। রবিবার সকালে শালবনি থানার আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা জগন্নাথপুরে ঘটনাটি ঘটে। কয়েকজন গ্রামবাসী ওই বৃদ্ধার বাড়িতে চড়াও হয়ে তাঁকে শারীরিক ভাবে নিগ্রহ করে বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পিড়াকাটা ফাঁড়ির পুলিশ। ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করা হয়। এ প্রসঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “ঠিক কী হয়েছে তা খতিয়ে দেখেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।”
ঘটনাটি ঠিক কী?
স্থানীয় সূত্রে খবর, সপ্তাহ তিনেক আগে জগন্নাথপুর এলাকার এক গৃহবধূ মারা যান। রোগে ভুগে বছর পঁয়ত্রিশের ওই তরুণী বধূর মৃত্যুর পরে কয়েকজন গ্রামবাসী এক গুণিনের দ্বারস্থ হন। ওই গুণিন জানিয়ে দেন, এলাকায় ডাইন রয়েছে। তার কু-প্রভাবেই এই মৃত্যু। এরপর ওই বৃদ্ধাকে ডাইন বলে চিহ্নিত করে একাংশ গ্রামবাসী। তাঁর পরিবারকে আর্থিক জরিমানাও করা হয়। এ দিন সকালে কয়েকজন গ্রামবাসী হঠাত্ই বৃদ্ধার বাড়িতে চড়াও হয়ে তাঁকে শারীরিক ভাবে নিগ্রহ করে বলে অভিযোগ। পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। তারপর আর ওই বৃদ্ধা আর নিজের বাড়িতে ফেরার ঝুঁকি নেননি। তিনি আত্মীয়ের বাড়িতে চলে গিয়েছেন। তাঁর ছেলে-বৌমাও আত্মীয়বাড়ি চলে গিয়েছেন।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “এখনও কিছু এলাকায় কুসংস্কার রয়ে গিয়েছে। ডাইন বলে যে কিছু নেই, এটা সকলকে বুঝতে হবে। এ দিন খবর পেয়ে পুলিশ- প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপই করেছে।” পুলিশের দাবি, বৃদ্ধাকে হাত ধরে টানাটানি করা হচ্ছিল। তখনই ঘটনাস্থলে যান পুলিশকর্মীরা। ফলে, মারধরের ঘটনা এড়ানো গিয়েছে।
এই ধরনের সমস্যা সমাধানে সচেতনতাতেই জোর দিচ্ছে প্রশাসন। চলতি সপ্তাহেই এই এলাকায় সচেতনতা শিবির করা হতে পারে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। মেদিনীপুর (সদর)-এর মহকুমাশাসক অমিতাভ দত্ত বলেন, “একমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমেই এই ধরনের কুসংস্কার দূর করা সম্ভব। ওই এলাকায় সচেতনতা শিবির করা হবে। এমন শিবিরের ফলে এলাকার মানুষ সচেতন হবে। কুসংস্কার দূর হবে।” শালবনির বিডিও জয়ন্ত বিশ্বাসেরও বক্তব্য, “কিছু মানুষের মধ্যে যে ভুল ধারণা রয়েছে, তা ভাঙতে হবে।”