দম্পতির অপমৃত্যু নিয়ে ধন্দে পুলিশ

এক তরুণ দম্পতির অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে মেদিনীপুর শহরের বক্সীবাজার এলাকায়। গত নভেম্বরে বিয়ে হয়েছিল দেবরাজ দাঁ (২৭) এবং দোলন দাঁ (২৩)-র। সোমবার সকালে বাড়িতেই পাশাপাশি শোয়ানো অবস্থায় দু’জনের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। দেবরাজের পরিজনদের দাবি, স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই আত্মহত্যা করেছেন। দোলনের বাপের বাড়ির লোকজন এ কথা মানতে নারাজ। তাঁদের অভিযোগ, দোলনকে খুন করা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৪ ০৪:৫৮
Share:

বিয়ের ফটোতে দেবরাজ ও দোলন।

এক তরুণ দম্পতির অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে মেদিনীপুর শহরের বক্সীবাজার এলাকায়। গত নভেম্বরে বিয়ে হয়েছিল দেবরাজ দাঁ (২৭) এবং দোলন দাঁ (২৩)-র। সোমবার সকালে বাড়িতেই পাশাপাশি শোয়ানো অবস্থায় দু’জনের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। দেবরাজের পরিজনদের দাবি, স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই আত্মহত্যা করেছেন। দোলনের বাপের বাড়ির লোকজন এ কথা মানতে নারাজ। তাঁদের অভিযোগ, দোলনকে খুন করা হয়েছে।

Advertisement

দোলনের বাপের বাড়ির তরফে করা লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে মৃতার শ্বশুর, শ্বাশুড়ি ও দেওরকে আটক করেছে পুলিশ। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে গোটা ঘটনায় ধন্দে পুলিশ। তারা জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট না পেলে বলা সম্ভব নয় এটা খুন না আত্মহত্যা। জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “শহরের বক্সীবাজার এলাকায় একটি ঘটনা ঘটেছে। তদন্তে সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

খুন বা আত্মহত্যা যা-ই হোক, প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের ধারণা, পারিবারিক অশান্তির জেরেই ঘটনাটি ঘটেছে। প্রতিবেশীদের থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, শ্বাশুড়ি সুমিতা দাঁর সঙ্গে দোলনের সম্পর্ক ভাল ছিল না। মাঝেমধ্যে দু’জনের বচসা হত। রবিবারও অশান্তি হয়। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছয় যে, দোলনের মামা অরূপ চন্দ্রকে রাতেই দেবরাজদের বাড়িতে আসতে হয়। মেদিনীপুর শহরের শরৎপল্লি এলাকায় মামাবাড়িতে বড় হয়েছিলেন দোলন। তাঁর বাবা-মা থাকেন ডেবরার লোয়াদায়। গত নভেম্বরে সাইকেল দোকানের মালিক দেবরাজের সঙ্গে সম্বন্ধ করেই বিয়ে হয় দোলনের। বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যে দু’জনের এই পরিণতিতেই প্রতিবেশী থেকে পরিজন, সকলেই হতভম্ব। দোলনের মামা অরূপবাবু বলেন, “ভাগ্নি ছোট থেকে আমাদের বাড়িতে থাকত। সম্বন্ধ করেই ওর বিয়ে দিই। ওর যে এমন পরিণতি হবে, কখনও ভাবিনি।” অরূপবাবুর অভিযোগ, ছোটখাট বিষয় নিয়ে দোলনের শ্বাশুড়ি ওর সঙ্গে ঝগড়া করতেন, নির্যাতন করতেন। দোলনকে খুন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন অরূপবাবু। কাঁদতে কাঁদতে একই অভিযোগ করেন মামিমা ঝুমাদেবীও।

Advertisement

ঘটনাস্থলে তদন্তে পুলিশ।—নিজস্ব চিত্র।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে নিজেদের ঘরেই ওই দম্পতির দেহ পাওয়া যায়। বিষয়টি জানাজানি হতেই স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেন। সকাল দশটা নাগাদ পুলিশ এসে দেখে, দু’জনের দেহ মেঝেতে শোয়ানো রয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দেবরাজের পরিবারের লোকজন জানান, দোলনরা নিজেদের ঘরে আত্মহত্যা করেছেন। পরে তাঁরা দেহ মেঝেতে শুইয়ে রেখেছেন। ময়নাতদন্তের জন্য দেহ দু’টি মেদিনীপুর মেডিক্যালে পাঠিয়ে দেয় পুলিশ। পরে দোলনের মামা অরূপবাবুর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে মৃতার শ্বশুর গৌতম দাঁ, শ্বাশুড়ি সুমিতা এবং দেওর রাহুলকে আটক করে পুলিশ।

সোমবার সকালে ঘটনার কথা জানাজানি হতেই বক্সীবাজার এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। শহরের স্কুলবাজারে যেখানে দেবরাজের সাইকেলের দোকান, সেখানেও পরিবেশ ছিল থমথমে। মেয়ে-জামাইয়ের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে মেদিনীপুরে আসেন দোলনের বাবা সুকুমার দে। ভেঙে পড়েছেন তিনি। এ দিন বক্সীবাজারে দেবরাজদের বাড়িতে যান এলাকার প্রাক্তন কাউন্সিলর বিশ্বনাথ পাণ্ডব। তিনি বলেন, “দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। শুনছি, পারিবারিক অশান্তির জেরেই ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ তদন্ত করে দেখুক।” দুপুরে থানায় এসেছিলেন শরৎপল্লি এলাকার কাউন্সিলর তথা মেদিনীপুরের উপ-পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাস। তিনিও বলেন, “কয়েক মাস আগেই ওদের বিয়ে হয়েছিল। তারপর এই ঘটনা। সকলেই চাইছেন, দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হোক।”

পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে বেশ কিছু সূত্র হাতে এসেছে। ওই সব সূত্র ধরেই এগোচ্ছে তদন্ত। দ্রুত ঘটনার কিনারা করা সম্ভব হবে বলেই মনে করছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন