বৃহস্পতিবার রাত থেকে নাগাড়ে প্রবল বর্ষণে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে দেশপ্রাণ ও কাঁথি ৩ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা। কাঁথি ৩ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিকাশ বেজ জানান, মঙ্গলবার রাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত প্রবল বর্ষণে কাঁথি ৩ ব্লকের কুসুমপুর, লাউদা, কুমির্দা, সরপাই, কানাইদিঘি, মারিশদা, দুরমুঠ-সহ ব্লকের আটটি অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। জলে প্রায় ২০০টি মাটির বাড়ি সম্পূর্ণভাবে ও ৩০০টি বাড়ি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদিও পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী না পাওয়ার অভিযোগ উঠছে। ত্রাণের দাবিতে কয়েকজন শুক্রবার সকালে ভাঁইটগড়ে দিঘা-কলকাতা রাস্তা অবরোধ করে। দীর্ঘক্ষণ ধরে চলা অবরোধের জেরে দিঘা-কলকাতা সড়কে যানজট তৈরি হয়। পরে মারিশদা থানার পুলিশ গিয়ে অবরোধ তুলে দেয়।
শুক্রবার বিডিও প্রদীপ্ত বিশ্বাস ও বিকাশ বেজ কাঁথি ৩ ব্লকের বিভিন্ন জলমগ্ন এলাকাগুলি ঘুরে দেখেন। বিডিও জানান, ইতিমধ্যেই প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম পঞ্চায়েতকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক কুইন্ট্যাল করে চিড়ে ও গুড় এবং মোট এক হাজার ত্রিপল দেওয়া হয়েছে। তাছাড়াও ৭৫টি ত্রাণ শিবির খুলে জলবন্দি মানুষদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ দিন ডিওয়াইএফের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ঝাড়েশ্বর বেরার নেতৃত্বে আটজনের এক বাম প্রতিনিধি দল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলি পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজনের সঙ্গে কথা বলেন। ঝাড়েশ্বর বেরার অভিযোগ, “বৃহস্পতিবার রাত থেকে অবিরাম বর্ষণে গোটা ব্লকে প্রচুর বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। নিরাশ্রয় মানুষদের অন্যত্র সরানো হলেও পঞ্চায়েত ও ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্গতদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়নি। তাই প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে বিডিওর কাছে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য ত্রাণ ও ত্রিপলের দাবি জানানো হয়েছে।”
প্রবল বৃষ্টিতে দেশপ্রাণ ব্লকের আমতলিয়া, আঁউরাই, ধোবাবেড়িয়া, সরদা, বসন্তিয়া অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকার মানুষজন জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তরুণ জানা জানান, আঁউরাই অঞ্চলের সবক’টি বাগদা চাষের ভেড়ি-সহ পুকুর ভেসে যাওয়ায় শুধু বাগদা চাষেই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও ব্লকের বামুনিয়া, দারিয়াপুর ও চালতি অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ায় কয়েক হাজার মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। ব্লকের বিডিও সত্যজিৎ মুখোপাধায়, সভাপতি তরুণ জানা ও জেলা শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ মামুদ হোসেন সকাল থেকেই বিভিন্ন জলমগ্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। মামুদ হোসেন জানান, অতিবর্ষণের জেরে দেশপ্রাণ ব্লকে কয়েক হাজার কাঁচা বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে ৮০০ বাড়ি সম্পূর্ণভাবে ও ৯ হাজার বাড়ি আংশিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাঁথি মহকুমার অন্য ব্লকগুলির বিভিন্ন এলাকাও জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।