দিঘায় ক্ষতির মুখে মত্‌স্যজীবীরা

নাব্যতা কমায় বাড়ছে ট্রলার দুর্ঘটনা

দিঘা মোহনায় চড়া পড়ে নাব্যতা কমার ঘটনা নতুন নয়। দীর্ঘ দিন ড্রেজিং না হওয়ার ফলেই এই অবস্থা। এমনই অভিযোগ তুলে একাধিকবার সরব হয়েছেন এলাকার মত্‌স্যজীবীরা। গত ৩১ অগস্ট মাছ শিকার করে ফেরার পথে মোহনার চরের কাছে বাঁধে ধাক্কা খেয়ে উল্টে হয়ে যায় শ্রীকৃষ্ণ নামে একটি ট্রলার। নিখোঁজ ছিলেন ওই ট্রলারে থাকা ১২ জন মত্‌স্যজীবী। ঘটনার দু’দিন পর এর মধ্যে ১১জনের খোঁজ মিললেও বুধবার ক্ষণিকা ঘাট থেকে উদ্ধার করা হয়েছে নিতাই মাইতি (৪৫) নামে এক মত্‌স্যজীবীর দেহ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দিঘা শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:৫০
Share:

চড়া পড়ে কমে গিয়েছে দিঘা মোহনার সমুদ্র খাঁড়ির নাব্যতা (বাঁ দিকে)। গভীরতা কমায় এই গ্রোয়েন বাঁধে ধাক্কা খেয়ে বাড়ছে ট্রলার দুর্ঘটনা (ডান দিকে)। ছবি: সোহম গুহ।

দিঘা মোহনায় চড়া পড়ে নাব্যতা কমার ঘটনা নতুন নয়। দীর্ঘ দিন ড্রেজিং না হওয়ার ফলেই এই অবস্থা। এমনই অভিযোগ তুলে একাধিকবার সরব হয়েছেন এলাকার মত্‌স্যজীবীরা। গত ৩১ অগস্ট মাছ শিকার করে ফেরার পথে মোহনার চরের কাছে বাঁধে ধাক্কা খেয়ে উল্টে হয়ে যায় শ্রীকৃষ্ণ নামে একটি ট্রলার। নিখোঁজ ছিলেন ওই ট্রলারে থাকা ১২ জন মত্‌স্যজীবী। ঘটনার দু’দিন পর এর মধ্যে ১১জনের খোঁজ মিললেও বুধবার ক্ষণিকা ঘাট থেকে উদ্ধার করা হয়েছে নিতাই মাইতি (৪৫) নামে এক মত্‌স্যজীবীর দেহ। আর এই ঘটনার জেরে ফের সামনে এসেছে মোহনার খাঁড়ির ড্রেজিং সমস্যা। দিঘা ফিশারমেন অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্সের পক্ষ থেকে ফের সমস্যার সমাধানের দাবিও জানানো হয়েছে। তবে ওই সংগঠনের অভিযোগ, রাজ্য মত্‌স্য দফতরের কাছে বারবার দাবি জানানো সত্ত্বেও কোনও সমাধান হয়নি।

Advertisement

মত্‌স্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দিঘা মোহনা রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক মত্‌স্য আরোহণ কেন্দ্র। বতর্মানে প্রায় দেড় হাজার ট্রলার ছাড়াও তিনশোর কাছাকাছি ভুটভুটি নিয়ে মত্‌স্যজীবীরা সমুদ্র থেকে মাছ শিকার করে আনেন। দিঘা ফিশারমেন অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সচিব শ্যামসুন্দর দাস জানান, ভরা মরসুমে দিঘা মোহনায় প্রতিদিন ৪৫০-৫০০ মেট্রিক টন সামুদ্রিক মাছ কেনাবেচা হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার কোটি টাকা। এর মধ্যে সত্তর থেকে আশি শতাংশ মাছই বিদেশের বাজারে রফতানি করে বছরে ২০০ কোটি টাকারও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আমদানি হয়। খাঁড়ির নাব্যতা কমে যাওয়ার সমস্যায় শুধু দিঘা মোহনাই নয়, খাঁড়ির অন্য প্রান্তে সরকারের শঙ্করপুর মত্‌স্য দফতরের অস্তিত্ত্বই সঙ্কটের মুখে।

শঙ্করপুর মত্‌স্য বন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, ভরা বর্ষায় মাছ ধরার মরসুম চলছে। সারা বছর ধরে এই সময়টার দিকেই তাকিয়ে থাকেন মোহনার কয়েক হাজার মত্‌স্যজীবী। কিন্তু দিঘা মোহনার খাঁড়িতে পলি জমে নাব্যতা কমে যাওয়ায় সমুদ্রখাঁড়ি সঙ্কীর্ণ হয়ে গিয়েছে। একমাত্র জোয়ার ছাড়া অন্য কোনও সময় শঙ্করপুর মত্‌স্যবন্দরে ঢুকতে পারছে না কোনও মাছ ধরার ট্রলার। ফলে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন মত্‌স্যজীবীরা।

Advertisement

শ্যামসুন্দরবাবু জানান, অবিলম্বে খাঁড়িতে ড্রেজিং শুরু না করা হলে শঙ্করপুর মত্‌স্য বন্দর ও দিঘা মোহনার মত্‌স্য অবতরণ কেন্দ্রের কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে জীবিকাচ্যুত হবেন এই পেশার সঙ্গে যুক্ত হাজার চল্লিশেক মানুষ। দিঘা ফিশারমেন অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রণবকুমার কর জানান, ২০০৪ সালে মত্‌স্য দফতরের পক্ষ থেকে দিঘা মোহনা ও শঙ্করপুরের মাঝের সমুদ্রখাঁড়িতে ড্রেজিং করা হয়। সেই সময়ই কেন্দ্রীয় সরকারের জলসম্পদ ও শক্তি দফতরের নিয়ন্ত্রাণে থাকা পুনের সেন্ট্রাল ওয়াটার পাওয়ার রিসার্চ সেন্টারের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে দিঘা মোহনায় সমুদ্রের তলদেশ পর্যন্ত গ্রোয়েন পদ্ধতিতে ৫০০ মিটার চোরা কংক্রিটের প্রাচীর করা হয়েছিল। এর ফলে সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাসে মোহনার ভাঙন ঠেকানো গেলেও তারপর থেকে রাজ্য মত্‌স্য দফতর কোনও সক্রিয় ভূমিকা না নেওয়ায় নাব্যতা কমতে কমতে চড়ার সৃষ্টি হয়েছে। ড্রেজিংয়ের কাজ না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন অ্যাসোসিয়েশনের সহ সম্পাদক পিনাকী কর, স্বপন জানা, তরুণ দাস রফিকুল ইসলাম প্রমুখ ট্রলার মালিকেরা। তাঁদের অভিযোগ, বারবার মত্‌স্য দফতর ও মত্‌স্যমন্ত্রীকে জানিয়েও শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতি ছাড়া আর কোনও সমাধান মেলেনি।

খাঁড়িতে চড়া পড়া ও তার ফলে দুর্ঘটনার কথা স্বীকার করে মত্‌স্য দফতরের পূর্ব মেদিনীপুরের সহ-মত্‌স্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) সুরজিত্‌ বাগ বলেন, “মত্‌স্য দফতর থেকে খাঁড়ির ড্রেজিং করা নিয়ে উচ্চমহলে জানানো হয়েছে। আশা করা যায় আগামী দিনে এই সমস্যা মিটে যাবে।” পশ্চিমবঙ্গ মত্‌স্য নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দিঘা মোহনায় গ্রোয়েন বাঁধ মেরামত ও খাঁড়িতে ড্রেজিংয়ের জন্য মত্‌স্য দফতর ও নিগমের পক্ষ থেকে ১৩ কোটি টাকার একটি পরিকল্পনা তৈরি করে নাবার্ডের কাছে পাঠানো হয়েছে। সবুজ সঙ্কেত পেলেই কাজ শুরু হবে।”

তবে সেই সবুজ সঙ্কেত কবে আসে, তার অপেক্ষাতেই রয়েছেন শঙ্করপুর ও দিঘা মোহনার মত্‌স্যজীবী ও ব্যবসায়ীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন