নিলাম হচ্ছে আলু রফতানির টোকেন, ক্ষোভ

ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানোর ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে রাজ্য সরকার। কোন ব্যবসায়ী ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠাতে পারবেন, তার জন্য চালু হয়েছে ‘টোকেন’ (বাইরের রাজ্যে আলু পাঠানোর লিখিত ছাড়পত্র) পদ্ধতি। কিন্তু এ নিয়ে আলু ব্যবসায়ীদের মধ্যেই তীব্র ক্ষোভ-অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এমনকী কোন ব্যবসায়ী আলু রফতানি করতে পারবেন, তা ঠিক করতে নিলাম হচ্ছে বলেও অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে টোকেন পদ্ধতি বাতিল করার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানানোর সিদ্ধান্ত নিল পশ্চিমবঙ্গ প্রগ্রতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:০৪
Share:

ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানোর ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে রাজ্য সরকার। কোন ব্যবসায়ী ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠাতে পারবেন, তার জন্য চালু হয়েছে ‘টোকেন’ (বাইরের রাজ্যে আলু পাঠানোর লিখিত ছাড়পত্র) পদ্ধতি। কিন্তু এ নিয়ে আলু ব্যবসায়ীদের মধ্যেই তীব্র ক্ষোভ-অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এমনকী কোন ব্যবসায়ী আলু রফতানি করতে পারবেন, তা ঠিক করতে নিলাম হচ্ছে বলেও অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে টোকেন পদ্ধতি বাতিল করার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানানোর সিদ্ধান্ত নিল পশ্চিমবঙ্গ প্রগ্রতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি।

Advertisement

শনিবার সমিতির কোর কমিটির বৈঠক ছিল হুগলির আরামবাগে। সেই বৈঠকেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সমিতির রাজ্য সম্পাদক বরেন মণ্ডল বলেন, “বিভ্রান্তি ছড়ানোয় টোকেন পদ্ধতি বাতিলের জন্য সরকারের কাছে লিখিত আবেদন জানাব। সেই সঙ্গে বাইরের রাজ্যে যাতে আরও বেশি আলু পাঠানোর আনুমতি দেওয়া হয়, সেই আবেদনও করা হবে। নাহলে ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে।” আগামী বুধবার আলু নিয়ে টাস্ক ফোর্সের বৈঠক রয়েছে। তার আগে মঙ্গলবারই মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদারের কাছে এ ব্যাপারে লিখিত আবেদন জানানো হবে বলে বরেনবাবু জানান।

সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রাজ্য সরকারকে দিনে ১৩ টাকা কেজি দরে ২০০ মেট্রিক টন আলু দিলে তবেই বাইরের রাজ্যে ১১০০ টন আলু নিয়ে যেতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। কোন ব্যবসায়ীর আলু রাজ্যের বাজারে যাবে আর কোন ব্যবসায়ীর আলু ভিন্ রাজ্যে পাঠানো হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতিকে। এ জন্য সমিতি চালু করেছে টোকেন ব্যবস্থা। লটারির মাধ্যমে ওই টোকেন বিলি হচ্ছে। সমিতি সূত্রের খবর, ঠিক হয়েছিল লটারিতে যে ব্যবসায়ীর নাম উঠবে তিনি ২৭ হাজার টাকা সমিতিকে দেবেন। তার মধ্যে ২৫ হাজার টাকা রাখা থাকবে ক্ষতিপূরণ বাবদ। ২ হাজার টাকা থাকবে সমিতির খরচ বাবদ। কারণ, রাজ্য সরকারের সঙ্গে বৈঠক, রাস্তায় আলুর গাড়ি ধরলে সেই সমস্যা মেটানো, এ সবের জন্য যাতায়াত, খাওয়া-সহ বিভিন্ন খরচ রয়েছে। সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, লটারির জন্য টাকা দিতে হবে জেনে ব্যবসায়ীদের একাংশই প্রস্তাব দেন, “২৭ হাজার নয়, ৪৭ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে রাজি। যার ক্ষমতা রয়েছে সে নিলামে নিক। লটারি চলবে না।” এরপর একাংশ ব্যবসায়ীর চাপে নিলাম চালু হয় বলে অভিযোগ। বেশি লাভের আশায় লক্ষাধিক টাকা পর্যন্ত দামে ওই টোকেন তাঁরা কিনেছেন বলে দাবি একাংশ ব্যবসায়ীর।

Advertisement

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, সমিতির চন্দ্রকোনা টাউন শাখায় গত বুধবার ৮১ হাজার টাকা ও বৃহস্পতিবার ১ লক্ষ ১১ হাজার টাকায় এক একটি আলুর গাড়ি নিলামে উঠেছে। এই এক গাড়ি (১৬ মেট্রিক টন) আলু রাজ্যের খোলাবাজারে বিক্রি করলে ২ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা মিলত। অর্থাৎ নিলামের দাম ধরলে প্রতি গাড়ি আলুর দাম দাঁড়াচ্ছে ৩ লক্ষ ৫৭ হাজার টাকা। তা-ও নিলামের চড়া টাকা দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ, এক গাড়ি আলু ওড়িশা নিয়ে বিক্রি করলে মিলবে ৪ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা। গাড়ি ভাড়া ও আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ ২৫-৩০ হাজার টাকা বাদ দিলেও নিশ্চিত লাভ থাকবে ২৫ হাজার টাকার বেশি। অর্থাৎ ৫ গাড়ি আলু পাঠালে দিনে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকার বেশি লাভ।

আলু নিয়ে গঠিত টাস্ক ফোর্সের সদস্য তথা আলু ব্যবসায়ী সমিতির উপদেষ্টা দিলীপ প্রতিহার বলেন, “টোকেন নিলাম হচ্ছে জানার পরেই প্রতিবাদ জানাই। এখন সকলে তা বুঝে টোকেন পদ্ধতি বাতিলের জন্য দরবার করবে বলে ঠিক করেছে।” নিলামের কথা অস্বীকার করে সমিতির রাজ্য সম্পাদক বরেনবাবুর দাবি, “লটারি হচ্ছে। তবে নিলামের কথা ঠিক নয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন