মিষ্টির সঙ্গে রয়েছে চানাচুর, চকোলেটের প্যাকেট।—নিজস্ব চিত্র।
নববর্ষের মিষ্টিতে থাবা বসিয়েছে ফাস্ট ফুড!
বছরে একাধিকবার দাম বেড়ছে চিনি-ছানা, দুধ-সহ মিষ্টির তৈরির নানা উপকরণের। এর জেরে খাবারের প্যাকেটে কাঁচাগোল্লা, ক্ষীররোল, ছানার পায়েস, সরবড়া, ক্ষীর প্যাটিসের বদলে এখন কার্যত ‘দখল’ নিয়েছে ফাস্ট ফুড। বদলে জাঁকিয়ে বসেছে কেক, পেস্ট্রি, প্যাটিস। কোথাও আবার চানাচুর, চকোলেট। ব্যতিক্রম নয় সদ্য শুরু ১৪২১ বঙ্গাব্দের হালখাতাও।
নববর্ষের প্রথম দিনটি বাঙালিদের কাছে বরাবারই অন্য রকম। সাধারণত, দিনটি প্রায় উত্সবের চেহারা নেয়। এত দিন নানা দোকানের বিভিন্ন ধরনের প্যাকেটে মিষ্টিই ছিল প্রধান ভরসা। কখনও সখনও থাকত সিঙাড়া বা নিমকি। কিন্তু, যত এগোচ্ছে, সেই প্যাকেটে অনুপ্রবেশ ঘটছে ফাস্ট ফুডের। তুলনায় কমছে মিষ্টি, সিঙাড়া বা নিমকির চাহিদা।
কেন? ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, ফাস্ট ফুডের ব্যাপারে অর্ডার দিতে ঝক্কি অনেক কম। মেলেও সহজে। মিষ্টির তুলনায় থাকেও অনেক দিন। অন্য দিকে, বেড়েই চলছে দিনদিন চিনি, দুধ, ছানার দাম। ঘাটালের মিষ্টি ব্যবসায়ী বিশ্বনাথ দত্ত, ভক্তি ঘোষেরা বলেন, “অথচ, সে ভাবে বাড়ছে না মিষ্টির দাম। কেবল বাড়ছে লোকসানের বহর।” বেশির ভাগই মিষ্টির দোকানেই একই চিত্র। অবস্থা দেখে তাঁরা বলছেন, “মিষ্টি তৈরি করছি। কিন্তু, ফাস্ট ফুডের অর্ডারই বেশি।” মিষ্টি ও ফাস্ট ফুড দিয়েই তাঁরা অর্ডারি প্যাকেট তৈরি করছেন। এতে লাভও বেশি হচ্ছে বলে তাঁরা মানছেন। দাসপুরের সজল পাল, চন্দ্রকোনার অমর আদকে বলেন, “মিষ্টির আগের সেই বাজার আর নেই! আগে পয়লা বৈশাখে মিষ্টির যোগান দিতে ঘাম ছুটত। সেই জায়গাটা এখন অনেকটাই নিয়েছে ফাস্ট ফুড।”
আগে ছানার দাম ছিল কিলোগ্রাম প্রতি ৭০-৭৫ টাকা। এখন তা বাড়তে বাড়তে দাঁড়িয়েছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। দুধ আগে ছিল কেজি প্রতি ২০ টাকা, তা এখন ঠেকেছে ৩০ টাকায়। চিনির দামও আকাশছোঁয়া। এর ফলে আগে যে কাঁচাগোল্লার দাম ছিল ৩ টাকা, এখন তার দাম ঠেকেছে ৫ টাকায়। তাতেও বেশির ভাগ মিষ্টি ব্যবসায়ী আগের মতো লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না।
তবে, শুধু হালখাতাই নয়, এখন বিভিন্ন সভা-সমিতি, রাজনৈতিক অনুষ্ঠানেও একই চিত্র। প্যাকেটে দু’তিন ধরনের মিষ্টি রেখে বাকিটা থাকছে নানা রকমের ফাস্ট ফুড। থাকছে কেক, পেস্ট্রি, প্যাটিস অথবা ভুজিয়া, ঝুরিভাজা। আবার কখনও থাকছে
খাস্তা গজা।
সাধ থাকলেও, সাধ্য না থাকায় মিষ্টির সংখ্যা কমিয়ে ফাস্ট ফুড ও নানা নোনতা দিয়েই প্যাকেট তৈরির অর্ডার দিচ্ছেন দোকান মালিকেরা। তাতে একটু হলেও সাশ্রয় হচ্ছে। ঘাটাল শহরে একাধিক বড় কাপড় থেকে ভুষিমাল ব্যবসায়ীদের কথায়, মিষ্টি দিয়ে প্যাকেট তৈরি করলে প্যাকেটের যা দাম পড়ছে ফাস্ট ফুড মিশিয়ে প্যাকেট তৈরি করলে তার অন্তত কুড়ি থেকে তিরিশ শতাংশ কম দাম পড়ছে।
এ ভাবেই ক্রমশ কোনঠাসা হচ্ছে মিষ্টি, কদর বাড়ছে ফাস্ট ফুডের।