বেহাল দিঘা-কলকাতা সড়ক। —নিজস্ব চিত্র।
পিচ্ছিল রাস্তায় বাস ও লরি উল্টে যাওয়ায় যানজট তৈরি হল দিঘা-কলকাতা রাস্তার মগরাজপুর থেকে চণ্ডীপুর অংশে।
যানজটে চরম দুর্ভোগের শিকার হন নিত্যযাত্রী থেকে পর্যটকেরা। অনেকে বাসের মধ্যেই রাত কাটাতে বাধ্য হন। বাস উল্টে যাওয়ায় আহত হন ১৬ জন যাত্রী। দিঘা-কলকাতা রাস্তার পাশে খালের মাটি কেটে গাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পথে মাটির কিছু অংশ রাস্তায় পড়ে যায়। সোমবার সন্ধ্যায় ঝড়-বৃষ্টির জলে মাটি ভিজে মগরাজপুর থেকে চণ্ডীপুর পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে যায়। পিচ্ছিল রাস্তায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায় একটি বাস ও লরি। ফলে এ দিন রাতে ওই রাস্তায় সমস্ত গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায় বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশের উদ্যোগে সোমবার রাত ১১টা নাগাদ একদল শ্রমিককে ওই রাস্তার জল কাদা সরানোর কাজে নামানো হয়। মঙ্গলবার সকাল ৯ টা নাগাদ রাস্তা পরিষ্কারের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
পুলিশ ও সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দিঘা-কলকাতা রাস্তার ধারে চণ্ডীপুর ব্লকের নরঘাট-গড়গ্রাম পর্যন্ত মগরাজপুর খাল সংস্কারের কাজ চলছে। সেচ দফতর নিযুক্ত ঠিকাদার সংস্থা ওই খাল খননের কাজ করছে। খাল থেকে মাটি কেটে ফেলা হচ্ছে চণ্ডীপুর ফুটবল ময়দানে। ওই খাল থেকে যন্ত্রচালিত মেশিন দিয়ে মাটি কেটে তা ট্রাক্টর ও লরিতে ভরে কয়েক কিলোমিটার দূরে চণ্ডীপুর ফুটবল ময়দানে নিয়ে আসা হচ্ছে। ফুটবল ময়দানে গাড়িতে করে মাটি নিয়ে যাওয়ার পথে মাটির একাংশ গাড়ি থেকে রাস্তার উপর পড়ছে। এভাবেই মগরাজপুর থেকে চণ্ডীপুর বাজার পর্যন্ত ওই রাস্তার প্রায় তিন কিলোমিটার অংশে মাটির স্তর পড়ে।
সোমবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ বেশ কিছুক্ষণ ঝড়-বৃষ্টি চলে। চণ্ডীপুরের কাছে রাস্তার উপরে পড়ে থাকা ওই মাটি জলে ভিজে কাদায় পরিণত হয়ে গোটা রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে যায়। এরফলে ওই রাস্তার বৃন্দাবনপুরের কাছে দিঘা-হাওড়া রুটের একটি যাত্রীবাস, একটি লরি ও একটি ট্যাক্সি মিলিয়ে মোট তিনটি গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। বাস উল্টে ১৬ জন যাত্রী আহত হয় বলেও অভিযোগ। তাঁদের স্থানীয় চণ্ডীপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। উল্টে যাওয়া লরি ও বাস রাস্তার উপর পড়ে থাকায় যানজট তৈরি হয়। দিঘা ও কলকাতা অভিমুখে চলাচলকারী গাড়ি আটকে পড়ায় দুর্ভোগে পড়েন নিত্যযাত্রী থেকে পর্যটকেরা। বেশ কিছু গাড়ি নরঘাট থেকে ভগবানপুর হয়ে গ্রামীণ সড়কে চলাচল করে। পুলিশের হস্তক্ষেপে এ দিন রাতেই ওই সড়কের উপর জমে থাকা জলকাদা সরানোর জন্য প্রায় ৬০ জন শ্রমিককে কাজে নামানো হয়। মঙ্গলবার ভোরে ক্রেন নিয়ে এসে রাস্তার উপর উল্টে থাকা গাড়িগুলি সরানো হয়। তারপর মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে ওই রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
গড়িয়া থেকে স্ত্রী ও মেয়েক নিয়ে দিঘা বেড়াতে যাচ্ছিলেন দেবদত্ত বিশ্বাস। বাসের মধ্যেই সারা রাত কাটাতে তাঁরা বাধ্য হন। মঙ্গলবার সকালে দেবদত্তবাবু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “রাতের মধ্যে দিঘা পৌঁছে যাওয়ার জন্য সোমবার বিকেলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম। কিন্তু এমন দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হবে জানা ছিল না। বেড়াতে যাওয়ার আনন্দটাই মাঝপথে নষ্ট হয়ে গেল।” কলকাতার ধর্মতলা থেকে বাসে চেপে নিজের বাড়ি ফিরছিলেন কাঁথির রামনগরের বাসিন্দা শঙ্কর জানা। কিন্তু রাতে চণ্ডীপুরের কাছে বাস আটকে পড়ায় মঙ্গলবার সকালেও বাড়ি ফেরা হয়নি। কলকাতার একটি দোকানের কর্মী শঙ্করবাবু বলেন, “দোকানের কাজ সেরে বাসে করে বাড়িতে যাচ্ছিলাম। ভেবেছিলাম রাত ১২টা নাগাদ বাড়িতে পৌঁছে যেতে পারব। কিন্তু চণ্ডীপুরে এসে আটকে গেলাম। কখন বাড়িতে পৌঁছাব জানিনা।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গাড়ি করে মাটি নিয়ে যাওয়ার সময় গাফিলতির জন্যই এই ঘটনা ঘটেছে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের কৃষি ও সেচ দফতরের কর্মাধ্যক্ষ বুদ্ধদেব ভৌমিক অবশ্য বলেন, “ওই খালের মাটি কেটে তুলে ট্রাক্টর ও লরিতে করে দূরে নিয়ে যাওয়ার সময় কিছু মাটি রাস্তায় পড়েছিল। বৃষ্টির কারণেই ওই মাটি জলে ভিজে সড়ক পিচ্ছিল হয়ে যায়। এরফলে গাড়ি চলাচলে সমস্যা হয়েছে। খালের মাটি তুলে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আরও নজর দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।”