পরিষ্কার করা হয়নি অরবিন্দনগরের মাঠ। —নিজস্ব চিত্র।
পুজো মিটেছে। কিন্তু মাঠ ফেরেনি আগের চেহারায়। শহরের অধিকাংশ মাঠেই যত্রতত্র পড়ে রয়েছে আবর্জনা। ফলে সমস্যায় পড়ছে মাঠে খেলতে আসা ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা। শুধু তাই নয়, মাঠগুলিতে পড়ে রয়েছে পুজোর স্টলের পেরেকও। মেদিনীপুর পুরসভার পুর-পারিষদ (কনজারভেন্সি) শিপ্রা মণ্ডল বলেন, “মাঠ পরিষ্কারের ব্যবস্থা হয়েছে। কাউন্সিলরদের নিজ নিজ এলাকার মাঠগুলো দ্রুত পরিষ্কার করতে বলা হয়েছে।”
মেদিনীপুর শহরে খেলাধুলোর উপযোগী মাঠের সংখ্যা খুব বেশি নয়। সব থেকে বড় মাঠ রয়েছে গোলকুয়াচকের কাছে, কলেজ মাঠ। এই মাঠে সকাল-বিকেলে অনেকে খেলতে আসে। কলেজ মাঠে অবশ্য দুর্গাপুজো হয় না। তবে রাঙামাটি, বার্জটাউন, বিধাননগর, শরৎপল্লি, অরবিন্দনগর, জুগনুতলার মাঠে পুজো হয়। পুজোর ক’দিন এই সব মাঠে মেলাও বসে। মেলা মানে হরেক স্টল। এক-একটি স্টলে রকমারি খাবার। পুজো দেখতে বেরিয়ে অনেকেই মেলার মাঠে জমিয়ে আড্ডা দেন।
মেলায় বসা স্টলগুলি থেকে পুজো কমিটিগুলির বাজেটের একটা বড় অংশ আসে। স্টলগুলোর সঙ্গে চুক্তি করেন পুজো উদ্যোক্তারা। কোনও স্টল থেকে দিনপিছু ৩ হাজার টাকা আদায় হয়। কোনও স্টল থেকে ৫- ৬ হাজার টাকা আবার কোনও স্টল থেকে ১০-১২ হাজার টাকা আয় হয়। এক-একটি বড় পুজো মণ্ডপের আশেপাশে অন্তত ২৫-৩০টি স্টল থাকে। গেল বার অক্টোবরের মাঝামাঝি পুজো ছিল। পুজোর দিনে বৃষ্টি হয়। ফলে, বৃষ্টির জলে পুজোটা অনেকেরই মাটি হয়ে যায়। পুজো-কর্তাদেরও মুখ ভার হয়। কারণ, মাস কয়েকের সব চেষ্টাই কার্যত মাঠে মারা গিয়েছিল! দুর্যোগে অনেক কিছুই লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল। পুজোর দিনে মাঝে-মধ্যেই বৃষ্টি হওয়ায় প্রায় সব মাঠেই কাদা জমে যায়। জল-কাদায় মেলাও পণ্ড হয়। পরিস্থিতি এমনই হয়েছিল যে বিক্রেতারাও কথা মতো স্টল ভাড়া দিতে পারেননি। আবার পুজো-কর্তারাও বিক্রেতাদের বেশি জোরাজুরি করতে পারেননি।
এ বার অবশ্য পুজোর ক’দিন আবহাওয়া ভালই ছিল। ফলে, কমবেশি সব স্টলেই ভাল বিক্রি হয়েছে। বিক্রি ভাল হওয়ায় মাঠগুলোয় নোংরা-আবর্জনাও জমেছে বেশি। কারণ, অধিকাংশ স্টলই তো হয় ফাস্ট ফুডের, ঠাণ্ডা পানীয়, আইসক্রিম, ফুচকা, ভেলপুরি প্রভৃতির। প্রায় সকলেই খাবার খেয়ে ঠোঙা, প্যাকেট মাঠের মধ্যেই ফেলে দেন। মেদিনীপুর শহরে মাঠের সংখ্যা কম। ওই সব মাঠ খেলাধুলোর উপযোগী না থাকলে সমস্যা হয়। স্থানীয় মানুষের মধ্যে অসন্তোষও দেখা দেয়। মাঠ পরিষ্কার না হলে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের খেলাধুলোর ক্ষেত্রে যে সমস্যা হবে, তা মানছেন সকলেই। অরবিন্দনগরের বাসিন্দা সীমা বেরা বলেন, “ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা বিকেলবেলা মাঠে খেলাধুলো করে। মাঠগুলো পরিষ্কার না হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে।” একই ভাবে, বিধাননগরের বাসিন্দা অতনু নায়েকের মতেও, “পুজোর পরেও মাঠগুলো পরিষ্কার না হওয়ায় শিশুদের খেলাধূলায় সমস্যা হচ্ছে।”
পরিস্থিতি দেখে পুজো উদ্যোক্তারাও নিজ নিজ এলাকার মাঠ পরিষ্কার করতে উদ্যোগী হয়েছেন। রাঙামাটি সর্বজনীনের অন্যতম উদ্যোক্তা গোপালচন্দ্র কর্মকার বলেন, “মণ্ডপ খোলার কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে মাঠের কিছুটা পরিষ্কার করা হয়েছে। মণ্ডপ খোলার কাজ শেষ হয়ে গেলে পুরো মাঠই পরিষ্কার করা হবে।” অরবিন্দনগর সর্বজনীনের অন্যতম উদ্যোক্তা কার্তিক ধরের কথায়, “মাঠে নোংরা-আবর্জনা জমে থাকলে সমস্যা হবেই। ইতিমধ্যে মাঠ পরিষ্কারের কাজ শুরু করা হয়েছে। তৎপরতার সঙ্গে মণ্ডপ খোলার কাজ চলছে। মণ্ডপ খোলার কাজ শেষ হলে পুরো মাঠই পরিষ্কার করা হবে।” একই বক্তব্য, শরৎপল্লী সর্বজনীনের অন্যতম উদ্যোক্তা অরিজিৎ সামন্তের। তাঁর কথায়, “যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মাঠ পরিষ্কার করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।”