পাঁশকুড়ার রাতুলিয়া বাজারে কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুঁইয়ার প্রচার। —নিজস্ব চিত্র।
প্রাক্তন সেচমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে কারও আর্জি ক্ষীরাই-বাক্সী খাল সংস্কার করতে হবে।
আবার কারও আর্জি কাঁসাই’য়ের ভাঙা নদী বাঁধ মেরামতি করার ব্যবস্থা করুন।
সোমবার পাঁশকুড়া এলাকায় ভোট প্রচারে আসেন ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী তথা রাজ্যের প্রাক্তন সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। প্রাক্তন সেচমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে এমনই নানা দাবি জানালেন পাঁশকুড়ার মানুষ।
পাঁশকুড়ার রাতুলিয়া বাজারে এ দিন সকালে দোকানদার ও বাজারে আসা এলাকার বাসিন্দাদের কাছে গিয়ে তাঁকে সমর্থনের আবেদন জানান মানসবাবু। পাঁশকুড়ার গোবিন্দনগর এলাকার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা মানসবাবুকে কাছে পেয়ে নদী, বাঁধ, খাল সংস্কার নিয়ে তাদের নানা দাবির কথা জানান। রাতুলিয়া বাজারে মানসবাবুকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসেন স্থানীয় বাসিন্দা প্রৌঢ় হিমাংশু নন্দী। তিনি মানসবাবুকে বলেন, “আমরা জানি, আপনি কেলেঘাই-কপালেশ্বরী নদী সংস্কারের ব্যবস্থা করেছেন। আপনার উপর আমাদের ভরসা আছে। এবার আমাদের এলাকার ক্ষীরাই-বাক্সী খাল সংস্কারের ব্যবস্থা করে দিন।” হিমাংশুবাবুর আর্জি শুনে মানসবাবু আশ্বাস দেন, “আমি দীর্ঘ দিন ধরে কেলেঘাই-কপালেশ্বরী সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছিলাম। সেচমন্ত্রী হিসেবে মাত্র এক বছর ছিলাম। যেটুকু সময় ও সুযোগ পেয়েছি কাজ করেছি। আমার পরবর্তী পরিকল্পনা ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ করা। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ হলে ওল্ড ও নিউ কাঁসাই-এই দুই নদী সংস্কারের পাশাপাশি ক্ষীরাই-বাক্সী খালও সংস্কার করা হবে। আপনারা যদি আমাকে সমর্থন করেন তাহলে সেই কাজে সুবিধা হবে।”
স্থানীয় জল নিকাশির সমস্যা প্রতিকারের জন্য মানসবাবুর কাছে আবেদন জানান রাতুলিয়া-মেদিনীপুর গ্রামের বাসিন্দা সুদর্শন শীট। মানসবাবু তাঁকেও আশ্বস্ত করে বলেন, “আমার উপর ভরসা রাখুন। পাঁশকুড়া এলাকার জল নিকাশির সমস্যা দূর করার জন্য আমি উদ্যোগী হব।” এ দিন মানসবাবু স্থানীয় বেনাগলসা, গোবিন্দপুর, মহাপুর গ্রামে প্রচারে যান। স্থানীয় বাসিন্দারা মানসবাবুর কাছে আর্জি জানান, গ্রামের দক্ষিণপল্লিতে কাঁসাইনদীর বাঁধের অবস্থা দীর্ঘ দিন ধরে বেহাল। আপনি নদীবাঁধ মেরামতির ব্যবস্থা করে দিন। নদী বাঁধ মেরামতির জন্য সেচ দফতরের আদিকারিকদের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন কংগ্রেস প্রাথীর্।
পাঁশকুড়ায় ভোট প্রচারে এসে স্থানীয় বাসিন্দাদের একের পর এক দাবির কথা শুনে মানসবাবু বলেন, “আসলে আমি মন্ত্রী হিসেবে অল্প সময়ে যেসব কাজের চেষ্টা করেছিলাম তা দেখেই মানুষের এই প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। আমি চাই, পাঁশকুড়া, পিংলা, কেশপুর, ডেবরা, দাসপুর, ঘাটাল এলাকাতেও সবংয়ের মতো সার্বিক উন্নয়ন করতে। সেজন্যই এলাকার মানুষের কাছে সমর্থন চাইছি।” এ দিন প্রচারের সময় সারদা কাণ্ড প্রসঙ্গে মানসবাবু সাংবাদিকদের বলেন, “সারদার আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে কংগ্রেস সিবিআই তদন্ত দাবি করেছে। কারণ এই কেলেঙ্কারি শুধু এরাজ্যে সীমাবদ্ধ নয়। অসম, ত্রিপুরা, ওড়িশা রাজ্যেও এই সংস্থার আর্থিক কেলেঙ্কারি হয়েছে। সামগ্রিকভাবে তদন্তের জন্যই আমরা সিবিআই তদন্ত দাবি করেছি। এর পিছনে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। এটা এখন সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন বিষয়। সুপ্রিম কোর্ট কি রায় দেয়, আমরা তার অপেক্ষায় রয়েছি।” তিনি আরও বলেন, “বাংলার মানুষ দেখছে, যে মুখ্যমন্ত্রী অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতেন, আর্থিক বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে মুখ খুলতেন, ছোটখাট বিষয়ে সিবিআই তদন্ত দাবি করতেন। সেই মুখ্যমন্ত্রী এখন সিবিআই তদন্তের বিরোধিতা করছেন। বাংলার মানুষ এতে বিস্মিত।”
প্রচারে মানসবাবুর সঙ্গে থাকা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কংগ্রেস সভাপতি বিকাশ ভূঁইয়া জানান, জেলার লোকসভা প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচারের জন্য কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীকে ডেবরা, পাঁশকুড়া ও খড়্গপুরে সভা করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলাম। আগামী ৮ মে ডেবরায় রাহুল গাঁধীর জনসভা করার সম্ভাবনা রয়েছে।