প্রচুর জমি অনাবাদি, সেচ এলাকা বাড়াতে পরামর্শ স্ট্যান্ডিং কমিটির

জেলার প্রচুর জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে রয়েছে। জলাভাবে চাষাবাদ হয় না। পরিস্থিতি দেখে সেচ-এলাকা বাড়ানোর পরামর্শ দিল রাজ্য বিধানসভার কৃষি ও মৎস্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটি। দফতরের কাজকর্মের মূল্যায়ন করতে শুক্রবার পশ্চিম মেদিনীপুরে আসেন এই কমিটির প্রতিনিধিরা। জেলায় এসে কয়েকটি এলাকা পরিদর্শনও করেন তাঁরা। পরে কমিটির চেয়ারম্যান বনমালি হাজরা বলেন, “এই জেলায় বেশ কিছু জমি অনাবাদি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:২৮
Share:

মেদিনীপুর সার্কিট হাউসে বৈঠক। নিজস্ব চিত্র।

জেলার প্রচুর জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে রয়েছে। জলাভাবে চাষাবাদ হয় না। পরিস্থিতি দেখে সেচ-এলাকা বাড়ানোর পরামর্শ দিল রাজ্য বিধানসভার কৃষি ও মৎস্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটি। দফতরের কাজকর্মের মূল্যায়ন করতে শুক্রবার পশ্চিম মেদিনীপুরে আসেন এই কমিটির প্রতিনিধিরা। জেলায় এসে কয়েকটি এলাকা পরিদর্শনও করেন তাঁরা। পরে কমিটির চেয়ারম্যান বনমালি হাজরা বলেন, “এই জেলায় বেশ কিছু জমি অনাবাদি। কিছু নলকূপ খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। সেগুলো মেরামত করে সচল করতে হবে। আমাদের সরকার মাত্র তিন বছর হল ক্ষমতায় এসেছে। কৃষির উন্নতিতে সরকার সব রকম চেষ্টা করছে। বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে চাষিদের হাসিমুখই দেখতে পেয়েছি।”

Advertisement

জলের অভাবে চাষ মার খাওয়া পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় নতুন নয়। ফি বছরই এমন ঘটে। জলাভাবে সময় মতো ধান রোওয়ার কাজই করতে পারেন না অনেকে। বৃষ্টি কম হলে সমস্যা জটিল হয়। জেলায় মোট কৃষি জমি রয়েছে প্রায় ৭ লক্ষ ৭৫ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে সেচ সেবিত মাত্র ৩ লক্ষ ৩০ হাজার হেক্টর জমি। জল-সঙ্কট সব থেকে বেশি জঙ্গলমহলে। এই জেলার জঙ্গলমহলে মোট কৃষি জমি রয়েছে প্রায় ২ লক্ষ ১৩ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে সেচের সুবিধে রয়েছে ১ লক্ষ ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে। পরিস্থিতি বদলাতে অবশ্য ইতিমধ্যে উদ্যোগী হয়েছে জেলা প্রশাসন। ‘জল ধরো, জল ভরো’ প্রকল্প রূপায়িত হচ্ছে। এ জন্য পুকুর, চেক ড্যাম তৈরি হচ্ছে। জেলার উপর দিয়েই বয়ে গিয়েছে কংসাবতী, সুবর্ণরেখা। তা-ও বিস্তীর্ণ এলাকায় সেচের জল পৌঁছয় না। গেল বার যেমন ৭ লক্ষ ৭৫ হাজার হেক্টর কৃষি জমির মধ্যে ৪ লক্ষ ৯০ হাজার ৪৮৪ হেক্টর জমিতে আমন চাষ সম্ভব হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে মেদিনীপুর সার্কিট হাউসে বৈঠকও করেন স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যেরা। ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ, অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত) সুশান্ত চক্রবর্তী, কৃষি-সেচ কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ, মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ সূর্য অট্ট, স্ট্যান্ডিং কমিটির অন্যতম সদস্য তথা কৃষি দফতরের পরিষদীয় সচিব শুভাশিস বটব্যাল প্রমুখ। জানা গিয়েছে, বৈঠকে কৃষি ও মৎস্য দফতরের নানা কাজকর্ম নিয়ে কথা হয়। কিছু সমস্যার কথাও উঠে আসে। জেলার সেচ প্রকল্পগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ এবং পুনরায় খননের জন্য অর্থের প্রয়োজন। বিষয়টি স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যানকে জানান কৃষি-সেচ কর্মাধ্যক্ষ নির্মলবাবু। জানানো হয়, বিকল্প চাষের জন্য বীজ, সার সরবরাহের পরিমাণ বাড়ালে ভাল, শস্যবিমার টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রে সরলীকরণ দরকার, মার্টির উর্বরতা শক্তি হ্রাসকারী সার ও কীটনাশক ব্যবহারকারী চাষিদের জন্য গ্রাম পঞ্চায়েতস্তরে সতর্কীকরণ কর্মশালারও প্রয়োজন রয়েছে।

Advertisement

স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান বনমালীবাবু পরে জানান, আলু বীজের ক্ষেত্রে রাজ্য স্বনির্ভর হতে চাইছে। বনমালীবাবুর কথায়, “আমরা চাইছি না বাইরে থেকে আলু বীজ নিয়ে আসতে। পঞ্জাবের ছাপ থাকলেই সেই বীজ ভাল, তা নয়। অনেক সময়ই পঞ্জাবের বীজ ভাল মানের হয় না। আমরা পর্যাপ্ত আলু বীজ বাংলায় তৈরি করেই চাষিদের দেব।” সুগন্ধী ধান চাষে উৎসাহ দিতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান। মাছের জন্য অন্ধ্রপ্রদেশের দিকে, মুরগির খাবারের জন্য বিহার-ঝাড়খণ্ডের দিকে আর বেশি দিন তাকিয়ে থাকতে হবে না- বলেও বুঝিয়ে দেন বনমালীবাবু। তিনি বলেন, “ভুট্টা চাষ ভাল হচ্ছে। আগামী দিনে ভুট্টা চাষের জমির পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে।” জেলায় কৃষি পেনশন প্রাপকের সংখ্যা মাত্র ৮,৮২৯ জন। কিষান ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যাও বাড়ছে না। কেন? জেলা পরিষদের কৃষি-সেচ কর্মাধ্যক্ষ নির্মলবাবু বলেন, “কিছু ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে। বিষয়টি চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি। উনি সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।”

স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রতিনিধিরা এ দিন কেশপুরের আনন্দপুর, খড়্গপুর গ্রামীণের খেলাড় প্রভৃতি এলাকায় যান। সরেজমিনে কয়েকটি প্রকল্প পরিদর্শন করেন। আনন্দপুরে কৃষি দফতরের একটি গবেষনা কেন্দ্র রয়েছে। খেলাড়ে মৎস্য প্রকল্প রয়েছে। মেদিনীপুরের বীজ খামারটিও পরিদর্শন করেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন