লক্ষ্যমাত্রায় কাটছাঁট করেও সুফল মেলেনি।
চলতি আর্থিক বছরে স্বচ্ছ ভারত অভিযানে জেলা পরিষদ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় প্রায় দেড় লক্ষ শৌচালয় নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়। পরে শ্রমিক সঙ্কটের দরুন লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৪৩ হাজার করা হয়। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে ২০১৪-১৫ আর্থিক বছর শেষ হতে আর দু’মাস সময় বাকি থাকলেও শৌচালয় নির্মাণ হয়েছে মাত্র ৬৯৬১টি। এত অল্প সময়ের মধ্যে বাকি কাজ শেষ করা সম্ভব কিনা, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে প্রশাসনের অন্দরে। প্রশাসনের সাফাই, এত বিপুল সংখ্যক শৌচালয় নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমিক অমিল। তাই শেষ মুহূর্তে প্রকল্পে দ্রুততা আনতে বিভিন্ন ঠিকাদারি সংস্থাকে প্রকল্পের কাজে যুক্ত করতে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। ইতিমধ্যে সাতটি সংস্থাকে বরাতও দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) পাপিয়া ঘোষ রায়চৌধুরী বলেন, “মিস্ত্রি পাওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কথা হয়েছে। কিন্তু তাদের পরিকাঠামো অতি দুর্বল থাকায় আশাজনক ফল মিলছে না। দ্রুত গতিতে প্রকল্প রূপায়ণে কী পদক্ষেপ করা যায় তা নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা চলছে।”
স্বচ্ছ ভারত অভিযানে প্রতিটি বাড়িতে শৌচালয় তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুধু শৌচালয় করলে হবে না, তা ব্যবহারও করতে হবে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার প্রায় অর্ধেক বাড়িতেই শৌচালয় নেই! এমনকী আগে যে সব গ্রাম পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতি নির্মল গ্রাম বা নির্মল পঞ্চায়েত সমিতির পুরস্কার নিয়ে এসেছিল, পরবর্তীকালে সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে সেখানেও বহু বাড়িতে নেই শৌচালয়। প্রশাসনিক পরিসংখ্যান বলছে, জেলায় মোট পরিবারের সংখ্যা ১১ লক্ষ ৪৬ হাজার ৬২২টি। তার মধ্যে শৌচালয় রয়েছে এমন পরিবারের সংখ্যা ৫ লক্ষ ৮৪ হাজার ৮১৭টি। আর শৌচাগারহীন পরিবারের সংখ্যা ৫ লক্ষ ৬১ হাজার ৮০৫টি। প্রতিটি বাড়িতে শৌচালয় তৈরি করতে উদ্যোগী হয় প্রশাসন। ঠিক হয়, ২০১৭ সালের মধ্যে জেলার প্রতিটি পরিবারের জন্য শৌচালয় নির্মাণ করা হবে।
স্বচ্ছ ভারত অভিযানে প্রথম ধাপে অর্থাৎ ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে ৬০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১ লক্ষ ৬৩ হাজার ১৬টি পরিবারে শৌচাগার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সেই অনুযায়ী স্ব-সহায়ক দল নিয়োগ, মিস্ত্রিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রমিক অমিল। ফলে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৩০টি গ্রাম পঞ্চায়েত ধরা হয়। যেখানে প্রায় ৪৩ হাজার শৌচাগার নির্মাণ করার কথা। চলতি আর্থিক বছর শেষ হতে মাত্র দু’মাস বাকি। দেখা যাচ্ছে, এখনও পর্যন্ত শৌচালয় নির্মাণ হয়েছে মাত্র ৬৯৬১টি! জেলায় এই প্রকল্প রূপায়ণ করতে হলে ২০১৭ সালের মধ্যে প্রায় ৬ লক্ষ নতুন শৌচালয় নির্মাণ করতে হবে। এমন ঢিমেতালে কাজ চললে দু’বছরে প্রকল্প কতটা রূপায়ণ হবে, তা নিয়ে সংশয়ে প্রশাসনও। চন্দ্রকোনার বাসিন্দা শ্রীকান্ত পানের বাড়িতেও শৌচালয় নেই। তাঁর বক্তব্য, “স্বচ্ছ ভারত অভিযানের মাধ্যমে শৌচালয় নির্মাণের কথা শুনেছি। কী ভাবে আবেদন করতে হবে বুঝতে পারছি না।”
তাই এ বার বাধ্য হয়ে বিভিন্ন ঠিকাদারি সংস্থার শরনাপন্ন হয় প্রশাসন। কিন্তু সেখানেও রয়েছে সমস্যা। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে বিভিন্ন জেলাতেও প্রকল্পের কাজ চলছে। শৌচাগার তৈরিতে পারদর্শী সংস্থাগুলি একাধিক জেলাতে কাজ নিয়েছে। ফলে জেলা জুড়ে তাঁরা কাজ করতে চাইছেন না। তাছাড়াও একাধিক জায়গাতে কাজ নেওয়ার কারনে ট্যাঙ্ক তৈরির রিং পর্যন্ত মিলছে না। কাজে গতি আনতে তাই এক একজন আধিকারিককে প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপর নজরদারি করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা পরিষদের সচিব দিব্যনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “বর্তমানে প্রতিটি পরিবারের তালিকা (শৌচাগার রয়েছে ও নেই) ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হচ্ছে। আবার কাজে গতি না আনলে টাকা মিলবে না। তাই যত দ্রুত সম্ভব কাজ করতে নজরদারি চালাচ্ছি।” শালবনির বাসিন্দা গোপাল সাহার কথায়, “শৌচালয় নির্মাণের কথা শুনেছি। তবে এই প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার জন্য কী করতে হবে, বুঝতে পারছি না।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রকল্পে ১২ হাজার ৯০০ টাকায় শৌচালয় নির্মাণ করা হবে। যেখানে উপভোক্তাকে দিতে হবে মাত্র ৯০০ টাকা। বাকি টাকা দেবে সরকার। আগে শুধু শৌচালয় নির্মাণ করা হত। এখন শৌচালয় জলের ব্যবস্থা রাখতে ট্যাঙ্কও তৈরি করা হবে। তার জন্য ২ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। যদিও প্রথমেই জলের ব্যবস্থার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে না। প্রথমে শৌচালয় নির্মাণ। পরে জলের ব্যবস্থা। তাই এখন সেই টাকা পঞ্চায়েতে রেখে দেওয়া হচ্ছে। শৌচালয় নির্মাণের পর তা ব্যবহার করা হচ্ছে কি না খতিয়ে দেখতে নিয়োগ করা হবে কর্মীও।
তাই সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা নিয়ে সংশয় রয়েই যাচ্ছে!