বাণিজ্যিক ভাবে আনারস চাষ শুরু হল পশ্চিমে

আগেও হত, তবে বিচ্ছিন্ন ভাবে চাষিদের মর্জি-মাফিক। উৎপাদনের প্রায় সবটাই লেগে যেত ঘরের কাজে। এ বার চাষিদের দিয়ে সেই আনারস বাণিজ্যিক ভাবে ফলাতে উদ্যোগী হল পশ্চিম মেদিনীপুরের উদ্যান পালন দফতর। দফতরের জেলা আধিকারিক রণজয় দত্ত বলেন, “আনারস অর্থকরী ফল। সঠিক ভাবে মিশ্র চাষেও খরচের প্রায় তিনগুণ লাভ পাওয়া যায়।”

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৪ ০১:২০
Share:

বড় গাছের নীচে চলছে আনারস চাষ। —নিজস্ব চিত্র।

আগেও হত, তবে বিচ্ছিন্ন ভাবে চাষিদের মর্জি-মাফিক। উৎপাদনের প্রায় সবটাই লেগে যেত ঘরের কাজে। এ বার চাষিদের দিয়ে সেই আনারস বাণিজ্যিক ভাবে ফলাতে উদ্যোগী হল পশ্চিম মেদিনীপুরের উদ্যান পালন দফতর। দফতরের জেলা আধিকারিক রণজয় দত্ত বলেন, “আনারস অর্থকরী ফল। সঠিক ভাবে মিশ্র চাষেও খরচের প্রায় তিনগুণ লাভ পাওয়া যায়।”

Advertisement

গত আর্থিক বছরে জেলায় সাড়ে চার লক্ষ আনারসের চারা বিলিয়েছিল উদ্যান পালন দফতর। একাধিক ব্লকের শতাধিক চাষিকে চারার সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল প্রয়োজনীয় সারও। সবটাই ছিল নিখরচায়। এ বার ওই চারা থেকে ফলন পাবেন চাষিরা। এ বার থেকে ধারাবাহিক ভাবে ফি-বছরই এই চাষ করাতে উদ্যোগী হয়েছে দফতর। শুরু হয়েছে প্রচার।

এখনই জেলায় দেড় হাজারের বেশি হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হচ্ছে বলে খবর। আগে এই চাষ বাণিজ্যিক ভাবে হতই না। কোনও চাষি শখ করে চাষ করতেন। তার সরকারি কোনও হিসাবও থাকত না। গত আর্থিক বছর থেকে এই চাষের উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। চাষিদের নিখরচায় চারা এবং সার বিলিয়ে আগ্রহ বাড়ানো হচ্ছে। দফতরের জেলা আধিকারিক বলেন, “ইতিমধ্যেই জেলার ডেবরা, জামবনী, গড়বেতা, দাঁতন, কেশিয়াড়ি, ঝাড়গ্রাম-সহ একাধিক ব্লক থেকে চাষিরা দফতরের এসে আনারস চাষে উৎসাহ দেখাচ্ছেন। দফতর থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং নানা সাহায্যও পাচ্ছেন।”

Advertisement

আনারস চাষে বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। কেমন? সাধারণত এই চাষ হয় উঁচু এলাকায়। সেচের খুব একটা প্রয়োজন হয় না। তবে মাঝেমধ্যে জৈব সার ছাড়াও ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম ছড়াতে হয়। গাছের বৃদ্ধির জন্য অক্সিন (এক প্রকার হরমোন) এবং আনারসের কমলা রঙের জন্য অল্প পরিমাণে ইফিলিন জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হয়। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল খেতের পরিচর্যা।

আনারস চাষ করে খুশি গড়বেতার উপরজবার শেখ জামালউদ্দিন। তিনি বলেন, “আমি দীর্ঘ দিন ধরেই মিশ্রচাষ হিসাবে আনারসের চাষ করছি। খরচের চেয়ে লাভ প্রায় তিনগুণ বেশি পাই। ফলন হওয়ার পরে সেই গাছ থেকেই চারা তৈরি করে ফের রোপন করি।” একই রকম ভাবে দাসপুরের টালিভাটার রবীন্দ্র বৈদ্য আম এবং জামরুল বাগানে আনারসের চাষ করছেন। রবীন্দ্রবাবুও বলেন, “এই চাষে লাভ ভালই। এ বার বাণিজ্যিক ভাবে জমিতে আনারস চাষ করব ভাবছি।”

জেলা উদ্যানপালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জাতীয় উদ্যানপালন মিশনের উদ্যেগে এমনিতেই যে কোনও চাষি ফুল বা ফলের চাষ করলে সংশ্লিষ্ট চাষিদের খরচের অর্ধেক টাকা ফেরৎ দেওয়া হয়। নতুন চাষে উৎসাহ দিতেই এই ভাতা। তবে এই টাকা পাওয়ার শর্ত হল, চাষিদের নিজস্ব জমিতে চাষ করতে হবে এবং অবশ্যই খরচের সব নথি সংশ্লিষ্ট দফতরে দেখাতে হবে। দফতরের কর্মীরা সরেজমিনে ঘুরে চাষের প্রমাণ পেলেই চাষিরা হাতেনাতে খরচের অর্ধেক টাকা পেয়ে যাবেন।

আনারস একক ভাবে ছাড়াও যে কোনও গাছ বা ফলগাছ যা লম্বা হয়ে উঠে গিয়েছে তার তলায় বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করা যায়। যেমন জামরুল, নারকেল, আম গাছের তলায় আনারসের মিশ্রচাষ সম্ভব। পশ্চিম মেদিনীপুরে মূলত কিউ গোত্রের আনারস চাষ হয়। এর চারা মেলে উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়িতে। সরকারি ভাবে সেই চারা এনে কখনও কখনও চাষিদের মধ্যে বিলি করা হয়। চাষিরা ফলন পাওয়ার পরে ওই গাছ থেকেই ফের চারা তৈরি করতে পারেন।

কেউ বেশি মাত্রায় চাষ করতে চাইলে তাঁকে জেলা উদ্যানপালন দফতরের গিয়ে যোগাযোগ করতে হবে। দফতর থেকেই শিলিগুড়ি থেকে চারা আনাতে সাহায্য করা হয়। তবে চারা আনার খরচ কিংবা চারার দাম দিতে হয় চাষিকেই। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এক একটি চারার দাম ৫-৬ টাকা। প্রতি হেক্টরে ৬০-৬৫ হাজার চারা প্রয়োজন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন