বেতন মেলেনি দু’মাস, সঙ্কটে দিঘার নুলিয়ারা

বেতন মেলেনি টানা দু’মাস। সঙ্কটে দিঘার সমুদ্র সৈকতে কর্মরত অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতর কর্তৃক নিযুক্ত ১৯ জন নুলিয়া। সমুদ্রের ধারে সারাদিন পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সব সময় সজাগ থাকেন প্রশিক্ষিত এই নুলিয়ারা।

Advertisement

সুব্রত গুহ

দিঘা শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৫৯
Share:

বেতন মেলেনি টানা দু’মাস।

Advertisement

সঙ্কটে দিঘার সমুদ্র সৈকতে কর্মরত অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতর কর্তৃক নিযুক্ত ১৯ জন নুলিয়া। সমুদ্রের ধারে সারাদিন পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সব সময় সজাগ থাকেন প্রশিক্ষিত এই নুলিয়ারা। অথচ গত সেপ্টেম্বর মাসে কাজ শুরুর পর থেকে একবারও বেতন না পাওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা।

ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ নুলিয়া রতন দাস জানালেন, গত দু’মাস ধরে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সমুদ্র সৈকতে কাজ করতে হচ্ছে। সারাদিন কাজ করে দিনের শেষে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে কার ভাল লাগে। এখন সংসার চালানোই মুশকিল হয়ে পড়ছে। বাধ্য হয়ে একবেলা, আধবেলা উপোস করেও থাকতে হচ্ছে। দিঘার সৈকতে ডুবতে থাকা দুই পর্যটককে রতনবাবু অসীম সাহসিকতার সঙ্গে বাঁচান। রতনবাবুর সাহসিকতার জন্য মমতা বন্দোপাধ্যায় কলকাতার এক অনুষ্ঠানে তাঁকে সংবর্ধনা দিয়েছিলেন।

Advertisement

সৈকতে নুলিয়া হিসেবে কর্মরত নিরঞ্জন শীট, তপন জানা, নির্মল দল ও সুকুমার পাত্ররা জানান, প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত সমুদ্রের ধারে কাজ করতে হয়। তাছাড়াও রোজ দিঘা থানা থেকে চারটি স্পিড বোট নিয়ে রিকশায় করে সমুদ্রের পাড়ে আসতে হয়। দিনের শেষে ফের ওই স্পিড বোটগুলি থানায় ফেরত দিয়ে আসতে হয়। এত পরিশ্রমের পরেও বেতন পাচ্ছি না। আগে রতনবাবু-সহ ছ’জন দিঘা-শঙ্কপুর উন্নয়ন পর্ষদ (ডিএসডিএ)-এর হয়ে চুক্তির ভিত্তিতে দিঘায় নুলিয়া হিসেবে কাজ করতেন। মাসে চার হাজার টাকা বেতন পেতেন তাঁরা। সম্প্রতি দিঘায় নুলিয়াদের এক প্রশিক্ষণ শিবিরের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে রাজ্যের অসামরিক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জাভেদ খানের কাছে ওই প্রশিক্ষিত নুলিয়াদের দিঘার সৈকতে নিয়োগ করার আবেদন জানান পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুকেশকুমার জৈন। পর্যটন দফতরের দেওয়া চারটি স্পিড বোটও পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজে লাগানোর কথা বলেন জেলা পুলিশ সুপার। অনুষ্ঠান মঞ্চেই জাভেদ খান পুলিশ সুপারের আবেদনে সম্মতি জানিয়ে ওই প্রশিক্ষিতদের দিঘার সৈকতে নিয়োগ করার কথা বলেন। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতর ওই ছ’জন-সহ মোট ১৯ জনকে দিঘা সৈকতে নুলিয়া হিসেবে নিয়োগ করে।

অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত নিয়ামকের দায়িত্বে থাকা তমলুকের মহকুমাশাসক শুভাশিস বেজ জানান, অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত দৈনিক ৩৩৮ টাকা পারিশ্রমিকের চুক্তিতে অস্থায়ীভাবে ওই নুলিয়াদের দিঘার সৈকতে নিয়োগ করা হয়। প্রতি মাসে ২৮ দিন কাজ দেওয়ার চুক্তির ভিত্তিতে তাঁদের নিয়োগ করা হয়। তবে চলতি মাসেই তাঁদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে।

প্রশ্ন, সেপ্টেম্বর মাস থেকে কাজ শুরু করলেও ওই ১৯ জন নুলিয়ার বেতন না পাওয়ার কারণ কী? পূর্ব মেদিনীপুর জেলা অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের আধিকারিক প্রণব দাসচৌধুরী জানিয়েছেন, ওই ১৯ জনকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত দিঘার সৈকতে নুলিয়া হিসেবে কাজ করতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যেই তাঁদের বকেয়া বেতন দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই প্রসঙ্গে শুভাশিসবাবুর বক্তব্য, “ওই নুলিয়াদের উপস্থিতির হার ও কাজের রিপোর্টের ভিত্তিতেই তাঁদের শীঘ্রই পারিশ্রমিক দেওয়া হবে।”

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে ছুটির সময় দিঘায় প্রচুর পর্যটকের ভিড় হয়। অথচ সেই সময় সৈকতে নুলিয়ারা না থাকলে যে কোনও সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। এই প্রশ্নের উত্তরে প্রণববাবু বলেন, “জেলা প্রশাসন এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। প্রয়োজনে প্রশাসন সৈকতে নতুন করে নুলিয়া রাখার ব্যবস্থা করবে।” কর্মচ্যুত নুলিয়াদের কাজ হারানো প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “প্রয়োজনে জেলা প্রশাসন তাঁদের ফের নিয়োগ করতে পারে।” অন্য দিকে, দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পষর্দের নির্বাহী আধিকারিক সুজন দত্ত জানান, অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতর আমাদের ছ’জন নুলিয়াকে কাজে নিয়েছিল। তাই গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে পর্ষদের পক্ষ থেকে ওই নুলিয়াদের বেতন দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে ডিসেম্বর থেকে প্রতিরক্ষা দফতর তাঁদের কাজে না রাখলে আমরাই ফের ওই ছ’জনকে নিয়োগ করব।” তবে বাকি ১৩ জন নুলিয়াদের প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি সুজনবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন