বিদ্যাসাগর ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতি তৃণমূলের, জয়ী শুভেন্দু

বিদ্যাসাগর সমবায় ব্যাঙ্কের নির্বাচনে বিপুল জয় পেল তৃণমূল। জিতলেন শুভেন্দু অধিকারীও। নির্বাচনে নিজ ক্ষেত্রে তিনি সর্বাধিক ভোট পেয়েছেন। শুভেন্দুবাবু বলেন, “দুই মেদিনীপুরে এই ব্যাঙ্কের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। দীর্ঘদিন ব্যাঙ্কের ক্ষমতা সিপিএম কুক্ষিগত করে রেখেছিল। কৃষকেরা সুবিধে পাননি। সিপিএম নেতারা ঋণ নিয়ে শোধ করেননি। সমবায়ের সদস্যরাই আমাদের জয়ী করেছেন।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৪ ০০:৫৯
Share:

কেশপুরে ভোট দিতে এলেন শুভেন্দু অধিকারী। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

বিদ্যাসাগর সমবায় ব্যাঙ্কের নির্বাচনে বিপুল জয় পেল তৃণমূল। জিতলেন শুভেন্দু অধিকারীও। নির্বাচনে নিজ ক্ষেত্রে তিনি সর্বাধিক ভোট পেয়েছেন। শুভেন্দুবাবু বলেন, “দুই মেদিনীপুরে এই ব্যাঙ্কের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। দীর্ঘদিন ব্যাঙ্কের ক্ষমতা সিপিএম কুক্ষিগত করে রেখেছিল। কৃষকেরা সুবিধে পাননি। সিপিএম নেতারা ঋণ নিয়ে শোধ করেননি। সমবায়ের সদস্যরাই আমাদের জয়ী করেছেন।”

Advertisement

বিদ্যাসাগর ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতিতে ১২ জন ডিরেক্টর। আগেই চার প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে এক জন সিপিএম সমর্থিত। তৃণমূল সমর্থিত ৩ জন। সোমবার ৮টি আসনে ভোট হয়। এর মধ্যে দু’টি আসনে তৃণমূলের প্রার্থী ছিল না। বাকি ৬টিতেই তৃণমূল সমর্থিতরা জিতেছেন। হারের পরে সন্ত্রাসের অভিযোগ করছে বামেরা। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী বামেদের একমাত্র সদস্য শিশির মহাপাত্র বলেন, “সুষ্ঠু ভাবে নির্বাচন হলে কখনওই এই ফল হত না।” সন্ত্রাসের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। জেলার অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার অফ কো-অপারেটিভ সোসাইটি (এআরসিএস) তথা অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার মদনমোহন ঘোষও বলেন, “সুষ্ঠু ভাবে নির্বাচন হয়েছে। আমার কাছে অভিযোগ আসেনি।”

সোমবার ভোটগ্রহণ হয় কেশপুর কলেজে। সকাল থেকে এলাকায় উত্তেজনাও ছিল। একে একে আসেন জেলা তৃণমূলের নেতারা। ছিলেন দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়। শুভেন্দুবাবুও ভোট দিতে কেশপুরে আসেন। সিপিএম নেতা-কর্মীদের ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের আশপাশে দেখা যায়নি। ব্যাঙ্ক নির্বাচন সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করতে জেলা তৃণমূলের তরফে একটি কমিটি গড়া হয়েছিল। কমিটির কনভেনর তথা দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ বলেন, “ব্যাঙ্কের নির্বাচনে আমরা ঐক্যবদ্ধ ভাবেই লড়াই করেছিলাম। আমাদের লড়াই ছিল সিপিএমের বিরুদ্ধে। নির্বাচনের ফলেই প্রমাণ হয়েছে, মানুষ আর সিপিএমের পাশে নেই।” জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান তথা মেদিনীপুরের বিধায়ক মৃগেন মাইতির বক্তব্য, “বিদ্যাসাগর ব্যাঙ্কের নির্বাচনে বিপুল জয় পেয়েছি। আমরা ভোটারদের কাছে কৃতজ্ঞ।”

Advertisement

অকৃষি ক্ষেত্রের দু’টি আসনে জিতেছেন শুভেন্দু অধিকারী এবং মধুসূদন গাঁতাইত। এ ক্ষেত্রে ভোটার ছিলেন ৩২৭ জন। ভোট দেন ২৫০ জন। শুভেন্দুবাবু পেয়েছেন ২৪৫টি ভোট। মধুসূদনবাবু ২৩৮টি ভোট। আর বাম প্রার্থী গৌরাঙ্গ দাস পেয়েছেন ৬টি ভোট। কৃষি ক্ষেত্রে জয়ী তৃণমূল সমর্থিতদের মধ্যে রয়েছেন বুলবুল হাজরা, সন্দীপ ঘোষ, অঞ্জনকুমার বেরা। দুই মেদিনীপুর জেলায় ‘বিদ্যাসাগর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কে’র ৩৮টি শাখা রয়েছে। বাম আমলে ব্যাঙ্কের নিয়ন্ত্রণ ছিল সিপিএমের হাতে। রাজ্যে পালাবদলের পরে অবস্থা পাল্টায়। একাংশ কর্মীও তৃণমূল প্রভাবিত সংগঠনে যোগ দেন।

গত বছর ২ জুন ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতিতে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। মনোনয়ন-পর্বও মিটে যায়। তখন তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছিল। এক দিকে সাংসদ মুকুল রায়ের অনুগামীরা, অন্য দিকে শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামীরা। এক পক্ষ প্রচারপত্রে দু’টি আসনে শুভেন্দু অধিকারী এবং মধুসূদন গাঁতাইতকে নির্বাচিত করার আবেদন জানায়। অন্য পক্ষ প্রচার করে মধুসূদনবাবু দলের মনোনীত প্রার্থী হন। ওই দু’টি আসনে তৃণমূল মনোনীত প্রার্থী হলেন শুভেন্দু অধিকারী এবং নারায়ণ সাঁতরা। মধুসূদনবাবু মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের (বালক) সহ-শিক্ষক। শুভেন্দু-অনুগামী বলে পরিচিত। আর নয়াগ্রাম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নারায়ণবাবু মুকুল-অনুগামী বলে পরিচিত।

তৃণমূলের প্রচার-পাল্টা প্রচার যখন জমে উঠেছে, তখনই বিদ্যাসাগর ব্যাঙ্কের নির্বাচন স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয় রাজ্য সমবায় নির্বাচন কমিশন। পরে ঠিক হয়, ১০ মার্চ ভোট হবে। এ বার কোন্দল ঠেকিয়ে পরিচালন সমিতির দখল নিতে তৎপর হয় তৃণমূল। নারায়ণ সাঁতরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। চলতি মাসের মধ্যেই ব্যাঙ্কের নতুন পরিচালন সমিতি গঠিত হওয়ার কথা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন