বাম-বিজেপির কার্যালয়ে হামলা, আলোড়ন শহরে

এক রাতে একের পর এক বিরোধী রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় চাপানউতোর শুরু হয়েছে মেদিনীপুরে। দোলের আগের রাতে বিজেপি ও বাম দলগুলির একাধিক কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় শহরবাসী হতবাক। শেষ কবে শহরের বুকে এমন কাণ্ড ঘটেছে, তা মনে করতে পারছেন না কেউই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৫ ০০:৫৭
Share:

কোতবাজারে সিপিএম কার্যালয়ে পুড়ে গিয়েছে আসবাব। —নিজস্ব চিত্র।

এক রাতে একের পর এক বিরোধী রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় চাপানউতোর শুরু হয়েছে মেদিনীপুরে। দোলের আগের রাতে বিজেপি ও বাম দলগুলির একাধিক কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় শহরবাসী হতবাক। শেষ কবে শহরের বুকে এমন কাণ্ড ঘটেছে, তা মনে করতে পারছেন না কেউই।

Advertisement

বাম-বিজেপি দু’পক্ষই অবশ্য দলীয় কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছে। মেদিনীপুরে সিপিএম অফিসে হামলার পাশাপাশি কলকাতার যাদবপুরে লেনিনের মূর্তি নষ্ট করার নিন্দা করেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। শুক্রবার তিনি বলেন, “প্রশাসন কি আঙুল চুষছে? না ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে বসে আছে? পৃথিবীর কোথাও বামপন্থীরা লেনিনের মূর্তি ভাঙে না, যা তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা করেছে।” সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক তরুণ রায়ের কথায়, “তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই ঘৃণ্য এই ঘটনা ঘটিয়েছে।” বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়েরও অভিযোগ, “শহরে সন্ত্রাসের আবহ তৈরি করার জন্য তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা হামলা চালিয়েছে।” অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের বক্তব্য, “এই সব ঘটনার সঙ্গে দলের কেউ জড়িত নয়।”

ঠিক কী উদ্দেশে, কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তা বুঝে উঠতে পারছে না পুলিশও। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “তদন্ত চলছে। সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” প্রাথমিক ভাবে পুলিশ মনে করছে, কয়েকজন মিলে পরিকল্পনা করেই একের পর এক কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে। দুষ্কৃতীদের উদ্দেশ্যই ছিল, কিছু একটা ঘটিয়ে শহরে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে দেওয়া।

Advertisement

বুধবার রাতে হামলা চালানো হয় সিপিআইয়ের জেলা কার্যালয়ে, বিজেপির জেলা কার্যালয়ে, সিপিএমের এক লোকাল কমিটি ও এক শাখা কমিটির কার্যালয়ে এবং ডিওয়াইএফের জেলা কার্যালয়ে। মেদিনীপুর শহরের রবীন্দ্রনগরে সিপিআইয়ের জেলা কার্যালয় রয়েছে। বুধবার রাতে সেখানে জনা কয়েক দুষ্কৃতী হানা দেয়। জানলার গ্রিল ভাঙার চেষ্টা করে। কিছু পতাকা-ফেস্টুন পুড়িয়ে দেয়। সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক সন্তোষ রাণা বলেন, “মেদিনীপুর শহরে এমন ঘটনা ভাবা যায় না। শহরে সন্ত্রাস ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে।” সিপিএমের কোতবাজার শাখা কার্যালয়েও হামলা চালানো হয়। সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই কার্যালয়টি। বহু নথিপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া, স্থানীয় এক বাসিন্দা বাড়ি মেরামতির জন্য কিছু জিনিসপত্র এই কার্যালয়ে এনে রেখেছিলেন। আগুনে সেই সব জিনিসপত্রও পুড়ে গিয়েছে। দলের ৬ নম্বর লোকাল কমিটির কার্যালয়ের কাছে কিছু পতাকা-ফেস্টুন টাঙানো ছিল। দুষ্কৃতীরা সেই সব খুলে আগুন লাগিয়ে দেয়। কেরানিতলায় দলের এক কার্যালয়ের সামনে শহিদবেদি ভেঙে দেওয়া হয়। সিপিএমের শহর জোনাল সম্পাদক সারদা চক্রবর্তী বলেন, “দিন কয়েক আগেই শহরে পিপলস্‌ কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের নির্বাচনে পুলিশ-প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা বহু নাগরিকের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। এরপর ওরা আরও আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। এমন ঘটনায় শহরের শান্তিপ্রিয় মানুষ উদ্বিগ্ন।” কর্নেলগোলায় ডিওয়াইএফের জেলা কার্যালয়েও পোস্টার-ফেস্টুন খুলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ডিওয়াইএফের জেলা সম্পাদক দিলীপ সাউয়ের অভিযোগ, “তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা শহরেও গুন্ডামি শুরু করেছে।”

শহরের সুভাষনগরে বিজেপির জেলা কার্যালয়েও হামলা চালানো হয় বুধবার রাতে। বিজেপি-র জেলা কার্যালয়ের সামনে থাকা সাইন বোর্ড খুলে ফেলে ভাঙার চেষ্টা হয়। কিছু পতাকা-ফেস্টুন পুড়িয়ে দেওয়া হয়। বিজেপির দলের শহর সভাপতি অরূপ দাসের দাবি, “বিজেপির উত্থানে যে শাসক দল উদ্বিগ্ন, এই ঘটনা তার প্রমাণ।”

বৃহস্পতিবার সকালে বিরোধীদের একাধিক কার্যালয়ে হামলার কথা জানাজানি হয়। খবর পেয়ে আসে পুলিশ। ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেলে মেদিনীপুর শহরে প্রতিবাদ মিছিল করে বামফ্রন্ট। নেতৃত্বে ছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীপক সরকার, দলের জেলা সম্পাদক তরুণ রায়, সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক সন্তোষ রাণা, সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য কীর্তি দে বক্সী, দলের শহর জোনাল সম্পাদক সারদা চক্রবর্তী প্রমুখ। মিছিল থেকে আগামী দিনে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার স্বার্থে, মেদিনীপুর শহরের জনজীবনে শান্তি রক্ষার স্বার্থে ও তৃণমূলের এই গুন্ডামির বিরুদ্ধে সকলকে সরব হওয়ার আবেদন জানানো হয়। তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেনবাবুর পাল্টা

বক্তব্য, “দলের নামে কুত্‌সা-অপপ্রচার করতেই বিরোধীরা এই সব ঘটনা ঘটিয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন