বেহাল পার্কেই বড়দিনের উপচানো ভিড়

শহরের পার্ক, চিড়িয়াখানার বেহাল অবস্থা নিয়ে মেদিনীপুরবাসীর অভিযোগ দীর্ঘদিনের। প্রশাসনিক উদ্যোগে কোনওটারই হাল ফেরেনি। কিন্তু বড়দিন বলে কথা। বৃহস্পতিবার অগত্যা বেহাল পাক-চিড়িয়াখানাতেই ভিড় জমালেন শহরের বাসিন্দারা। সপ্তাহ কয়েক আগেও খুব একটা শীত ছিল না। তবে দিন কয়েক হল শীত পড়েছে ভালই। একদিকে নরম রোদ। অন্যদিকে হিমেল হাওয়া।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:১৯
Share:

মেদিনীপুরে কংসাবতী রেল সেতুর সামনে চলছে চড়ুইভাতি। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ

শহরের পার্ক, চিড়িয়াখানার বেহাল অবস্থা নিয়ে মেদিনীপুরবাসীর অভিযোগ দীর্ঘদিনের। প্রশাসনিক উদ্যোগে কোনওটারই হাল ফেরেনি। কিন্তু বড়দিন বলে কথা। বৃহস্পতিবার অগত্যা বেহাল পাক-চিড়িয়াখানাতেই ভিড় জমালেন শহরের বাসিন্দারা।

Advertisement

সপ্তাহ কয়েক আগেও খুব একটা শীত ছিল না। তবে দিন কয়েক হল শীত পড়েছে ভালই। একদিকে নরম রোদ। অন্যদিকে হিমেল হাওয়া। এই সময় শহরের পার্কগুলোয় বেশি ভিড় জমে। ছবিটা এ বার এতটুকুও যে বদলায়নি, তার প্রমাণ মিলল বড়দিনের সকালে। শীতের রোদ গায়ে মেখে বড়দিনের সকাল থেকেই পার্কে ভিড় জমিয়েছেন প্রচুর মানুষ। মেদিনীপুর শহরে মাত্র দু’টি পার্ক রয়েছে। একটি অরবিন্দ শিশুদ্যান এবং চিড়িয়াখানা। অন্যটি পুলিশ লাইন পার্ক। শহরতলিতে অবশ্য আরও দু’টি পার্ক রয়েছে। গোপ পার্ক এবং ক্ষুদিরাম পার্ক। কিন্তু নতুন করে সাজানো হয়নি পার্কগুলো। আগে ময়ূর থাকত। এখন নেই। আছে বলতে পাখি, রাজহাঁস, শেয়াল, গিনিপিগ, পায়রা, খরগোস। শহরের বাসিন্দা কল্পনা সাহা, কৃষ্ণা রায়দের কথায়, “শিশুদ্যানের পরিবেশটা ভাল। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা চিড়িয়াখানায় এসে পশু-পাখি দেখে মজাও পায়। তবে নতুন করে সাজানো না হলে আগামী দিনে শিশুদ্যানের রং ফিকে হয়ে যাবে।”

কেন হাল ফিরছে না পার্কগুলোর? কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, পার্কের জন্য আলাদা করে কোনও অর্থ বরাদ্দ হয় না। টিকিট বিক্রি করে যে অর্থ আসে, তা দিয়েই পার্ক চলে। মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক অমিতাভ দত্তর আশ্বাস, “অর্থ সাহায্য এলে শিশুদ্যানটি নতুন করে সাজানো হবে।” একই আশ্বাস দিয়েছেন জেলা পরিষদের বন কর্মাধ্যক্ষ কাজী আব্দুল হামিদ। তাঁর কথায়, “শহর- শহরতলির পার্কগুলো কী ভাবে সাজানো যায় তা দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান হলেই পার্কগুলো নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা হবে।”

Advertisement

বুধবার রাত থেকেই শহরের গির্জাগুলো সাজানো হয়েছে আলোর মালায়। দিনভর শহরের কেকের দোকানগুলোয় যেমন ভিড় চোখে পড়েছে, তেমন শপিং মলগুলোয় বেশ ভিড় ছিল। বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে বৃহস্পতিবার শহরের এক শপিং মলে হাজির হয়েছিলেন কলেজ পড়ুয়া অন্তরা চৌধুরী। বড়দিনের পরিকল্পনা কী? অন্তরা বলছিলেন, “বন্ধুদের সঙ্গে চুটিয়ে আড্ডা মারব। খাওয়াদাওয়া তো আছেই। এরই ফাঁকে বন্ধুদের সঙ্গে টুকটাক কেনাকাটা করলাম।” পিকনিক করতে অনেকে এ দিন জড়ো হন নদীর ধারেও। মেদিনীপুর শহরের পাশেই রয়েছে কংসাবতী নদী। নদীর দু’দিকে প্রচুর খোলা জায়গা। শীতকালীন ছুটির দিনে বাড়িতে বসে থাকতে কারই বা মন চায়। হোক না তরকারিতে একটু বেশি নুন, কিংবা মাংসে একটু বেশি ঝাল, পিকনিকে যে খাওয়াটাই বড় নয়, সকলে মিলে আনন্দ করাটাই বড়। শহরের বাসিন্দা ঋতম বসাক, সৌরভ দাসদের কথায়, “বড়দিনে পিকনিক করাটা মাস্ট!”

বড়দিনে মেলাও বসেছে। বৃহস্পতিবার থেকেই শহরের চার্চ স্কুল মাঠে এই মেলা শুরু হয়েছে। চলবে নতুন বছরের গোড়া অবধি। এ দিন সন্ধ্যায় মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। দুপুর গড়ানোর আগেই মেলার মাঠে ভিড় জমতে শুরু করে। এরপর বেলা যত গড়িয়েছে, ভিড়ও তত বেড়েছে। আগে বছরের নানা সময়ই শহরে মেলা হত। এখন বড় মেলা বলতে এই একটিই। ফলে, শহরের অনেকেই বড়দিনের মেলার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। মেদিনীপুরের এই মেলায় জাঁকজমকও কম থাকে না। মাঠের বাইরেও নানা দোকান বসে। ক্রিসমাস ট্রি, গিফট্ বক্স, জিঙ্গল বেল-এর সঙ্গে রঙিন আলোয় সেজে ওঠা শহর এখন উৎসবে মাতোয়ারা। সর্বত্র খুশির আমেজটাই যেন ফুরফুরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন