দ্রুত গতিতে গড়ে উঠছে বহুতল। এক ছাদের তলায় বসতি পাতছেন বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা একাধিক পরিবার। মানুষের সংখ্যা বাড়লেও জলের উৎস থেকে গিয়েছে একই। উল্টে তা কমছে। এই পরিস্থিতিতে আগামী দিনে কিভাবে পানীয় জলের সঙ্কট মেটাতে আগেই চিন্তা শুরু করেছিল মেদিনীপুর-খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদ। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এ বার থেকে বহুতল নির্মাণ করতে হলে তার ছাদে করতে হবে জলাধার। বৃষ্টির জলে ভর্তি হওয়া ওই জল বিভিন্ন কাজে ব্যবহারও করতে পারেন আবাসিকরা। আবার তা মাটির তলায় ঢুকিয়ে দিয়ে রিচার্জও করতে পারে। এতে লাভ দু’দিক দিয়ে। একদিকে যেমন বিদ্যুৎ খরচ বাঁচবে তেমনি জলস্তরও নামবে না। ফলে জল-সঙ্কটও কমবে।
প্রাথমিকভাবে বহুতলের ক্ষেত্রেই এই নির্দেশিকা জারি করেছে পর্ষদ। যদিও অনেক আগে থেকেই বাড়ির ছাদে বৃষ্টির জল ধরে রাখার জন্য উদ্যোগী হয়েছিল সরকার। সরকারি অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পঞ্চায়েত অফিসের ছাদে জল ধরে রাখার জন্য উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল। দু’একটি ক্ষেত্রে সেই কাজ হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শেষ পর্যন্ত সেই কাজে সফলতা আসেনি। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারিভাবে এই কাজ শুরু হলে বেসরকারিভাবেও সাধারণ মানুষ নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে এই কাজ করতেন। কারণ, এই জল দিয়ে বাড়ি ধোওয়া, মোছা, গাছে দেওয়া, শৌচাগারেও ব্যবহার করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে তাঁকে বিদ্যুৎ খরচ করে পাম্প চালিয়ে জল তুলতে হবে না। আর সরকারিভাবে করার উদ্দেশ্য, বর্ষায় ধরে রাখা ওই জল পাইপ লাইনের মাধ্যমে মাটির ভেতরেও পাঠিয়ে দেওয়া যায়। তাতে মাটির ভেতরের জলস্তর দ্রুত নামবে না।
সুইডের (সারফেস ওয়াটার ইনভেস্টিগেশন ডাইরেক্টরেট) এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার মলয় ঘোষের কথায়, “বৃষ্টির সময় যত জল তার বেশিরভাগটাই নিকাশি নালা দিয়ে নদী বা খাল হয়ে সমুদ্রে চলে যায়। মাটির নীচে যতটা যায়, তা দিয়ে তা দিয়ে বেশি দিন চলে না। অথচ, প্রতিদিন জলপান, স্নান, বাসন মাজা, সেচ ও অন্যান্য কারনে মাটির নীচ থেকে যে কত জল তোলা হয় তার প্রকৃত হিসেব মেলা ভার। তাই, বৃষ্টির সময় সকলে মাটির ছাদে কিছুটা জল ধরে রাখলেও গ্রীষ্মে সঙ্কট দেখা দেবে না।” মেদিনীপুর-খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতি বলেন, “এই কারণেই বহুতলের ক্ষেত্রে প্রথম আমরা বৃষ্টি ধরে রাখার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভবিষ্যতে জলকষ্ট থেকে মানুষকে মুক্তি দিতেই এই সিদ্ধান্ত।” এতদিন বহুতল নির্মাণের জন্য যে সমস্ত শর্ত ছিল, তার সঙ্গে এবার থেকে জলাধার তৈরির শর্তটিও যোগ হল। বাড়ি তৈরির নক্সাতে ঠিক মতো জল ধরে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে কিনা তা দেখাতে হবে সুইডের ইঞ্জিনিয়ারদের। তাঁরা সবুজ সঙ্কেত দিলেই মিলবে বাড়ি তৈরির অনুমতি।
ফি বছর গ্রীষ্মে পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দেয় মেদিনীপুর ও খড়্গপুর শহরে। গ্রীষ্মকাল এলেই নলকূপগুলি বসে যায়। আবার জলস্তর নীচে নেমে যাওয়ায় কিছু নলকূপ চালু থাকলেও তা থেকে সরু জল উঠতে থাকে। জলস্তর যাতে নীচে না নামে সে জন্য সরকার জল ভর জল ধর প্রকল্প করেছে। তারই সঙ্গে রুফ টপ ট্রিটমেন্ট, ওয়াটার হার্ভেস্টিং প্রজেক্ট-সহ নানা নাম দিয়ে বাড়ির ছাদেও জল ধরে রাখার চেষ্টা চলছে। সুইড সূত্রে জানা গিয়েছে, ৫০০ বর্গমিটার ছাদে কেউ এই প্রকল্প তৈরি করলে এ রাজ্যের গড় বৃষ্টিপাতের নিরিখে বছরে প্রায় ৫ লক্ষ লিটার জল সঞ্চয় করতে পারবেন। ভূগর্ভের জলস্তর ১ মিটার উপরে থাকলে ঘন্টায় .৪ কিলো ওয়াট বিদ্যুৎও সাশ্রয় হবে। এই প্রকল্প তৈরি করতে বিপুল ব্যয় তাও নয়। বাড়ির অবস্থান ও সূযোগ সুবিধে অনুযায়ী ১ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। বর্তমানে অবশ্য কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি অফিসে এই প্রকল্প হচ্ছে। তবে তার গতি এতই মন্থর যে কহতব্য নয়। সেই
জায়গায় দাঁড়িয়ে পর্ষদের এই উদ্যোগ নিশ্চিত এক বড় পদক্ষেপ বলেই সকলের অভিমত।