নয়াদিল্লি থেকে উৎসবের ঢেউ এসে লেগেছে জেলা শহরেও। কোথাও পথচলতি মানুষকে লস্যি-লাড্ডু খাওয়ানো হচ্ছে, কোথাও আবার চায়ে পে চর্চা। চায়ে চুমুক দিতে দিতেই জায়ান্ট স্ক্রিনে নরেন্দ্র মোদীর শপথগ্রহন অনুষ্ঠান দেখলেন দলের কর্মী-সমর্থক থেকে পথচলতি মানুষ। মেদিনীপুর ও খড়্গপুর দুই শহরেই সোমবার দেখা গেল এই ছবি। বিজেপি শিবিরের এমন উৎসব শেষ কবে জেলায় দেখা গিয়েছে, বহু ভেবেও বলতে পারছেন শহরের প্রবীণ বাসিন্দারা।
বিজেপির তরফে দলীয় ভাবে আয়োজন তো ছিলই, কিছু এলাকায় স্থানীয় মানুষও উদ্যোগী হন। বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “অনেক এলাকায় স্থানীয় মানুষও নিজেরা উদ্যোগী হয়ে নানা কর্মসূচি করেন। মোদীজির ছবিতে মালা দিয়ে উৎসবে সামিল হন। আসলে মোদীজিকে নিয়ে সমাজের সবস্তরে একটা আলাদা উন্মাদনা তৈরি হয়েছে।”
সোমবার সকাল সাড়ে এগারোটা। মেদিনীপুর শহরের সাহেবপুকুর মোড়ে বিজেপি উদ্যোগে লস্যি বিলি চলছে। সেখানে হাজির দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক সোমনাথ সিংহ, ওয়ার্ড সভাপতি তরুণ সেন প্রমুখ। বিকেলে চায়ে পে চর্চার আয়োজনও ছিল। তরুণবাবুর কথায়, “সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে থেকেই আয়োজন করেছি। স্থানীয় মানুষের উৎসাহ আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছে।” সন্ধ্যায় এখানে জায়ান্ট স্ক্রিনে মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান দেখানোর ব্যবস্থা হয়েছিল সাহেবপুকুর মোড়-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায়। শহরের জেলা পরিষদ মোড়, কাঠগোলা, নজরগঞ্জ-সহ বিভিন্ন এলাকায় বড় পর্দায় চোখ রেখেছিলেন পথচলতি সাধারণ মানুষ। বিজেপির মেদিনীপুর শহর সভাপতি অরূপ দাস বলেন, “অনেক এলাকায় এলসিডি টিভি জোগাড় করতে কর্মীদের কালঘাম ছুটেছে! এলাকায় তাই টিভিতেই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান দেখানোর ব্যবস্থা করতে হয়েছে।”
খড়্গপুর সদর বিধানসভায় এ বার লিড পেয়েছে বিজেপি। ফলে, মোদীর শপথ ঘিরে উৎসবের মেজাজ ছিল রেলশহরে। কৌশল্যা, প্রেমবাজার, তালবাগিচা বাজার, ডিভিসি বাজারে সব থেকে বেশি উদ্দীপনা চোখে পড়েছে। আইআইটি সংলগ্ন প্রেমবাজারে জায়ান্ট স্ক্রিন লাগিয়ে শপথ অনুষ্ঠান দেখার সঙ্গেই চলেছে লাড্ডু বিলি। ডিভিসি ও রবীন্দ্রপল্লি এলাকাতেও সকাল থেকেই মাইক বেজেছে। দলের আহ্বায়ক তুহিন পাল বলেন, “আইআইটিতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় আমরা সংলগ্ন প্রেমবাজার ও ডিভিসি এলাকায় অনুষ্ঠান করছি। সব আয়োজন নিজেরাই চাঁদা তুলে করেছি।”
তালবাগিচা বাজারেও এ দিন সকাল থেকেই ছিল সাজসাজ রব। মুক্তিসঙ্ঘ ক্লাব প্রাঙ্গণে প্রজেক্টর এনে বড় পর্দায় শপথ অনুষ্ঠান দেখানো হয়। মিষ্টিমুখের আয়োজনও ছিল। এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত শহর সম্পাদক সুমন্ত বিশ্বাস জানান, আবহাওয়া খারাপ থাকায় নৈশভোজের আয়োজন বাতিল করা হয়েছে। তা পরে হবে। ভবাণীপুর, ঝাপেটাপুর, মালঞ্চ রোড এলাকাতেও ছিল উৎসবের মেজাজ। তবে মালঞ্চ ভগবানপুরে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে সব আয়োজন করেও বিকেলে বাতিল করতে হয়। বিজেপির ওয়ার্ড সভাপতি অভিজিৎ রায় বলেন, “এলসিডি টিভি থেকে খাওয়াদাওয়া সব আয়োজনই করেছিলাম। কিন্তু আকাশের মুখভার। তাই বাতিল করতে হল।”
এ দিন সকালে মেদিনীপুরে বিজেপি নেতা-কর্মীরা শহিদ-স্মরণ করেন। শ্যামপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে মহাত্মা গাঁধী, ক্ষুদিরাম বসুর মূর্তিতে মাল্যদান করা হয়। দিকে দিকে মোদীর কাট-আউট। লাগানো হয়েছিল। সাউন্ড বক্সে দিনভর গান বেজেছে। বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যয় বলছিলেন, “মোদীজির শপথগ্রহণ ঘিরে এই উন্মাদনা সত্যিই ভোলার নয়।”