বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। হ্যারিকেনের আলোয় এ ভাবেই চলে পড়াশোনা।
রেলের বস্তি এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগের দাবিতে একযোগে আবেদন জানিয়েছিল বাম সমর্থিত বস্তি উন্নয়ন সমিতি এবং খড়্গপুর পুরসভা। এমন প্রস্তাবকে সমর্থন করেছিল সব রাজনৈতিক দলই। বস্তিবাসীর বহু দিনের দাবি মেনে এগিয়ে এসেছিল বিদ্যুৎ বণ্টন দফতরও। পুরসভার ‘নো অবজেকশন’ পেয়ে খুঁটি পোতার কাজও চলছিল। কিন্তু, দিন তিনেক আগে রেল কতৃর্পক্ষ চিঠি দিয়ে বিদ্যুৎ দফতরকে জানিয়েছে, অনুমতি ছাড়া রেলের জমিতে কোনও নির্মাণ কাজ করা যাবে না। রেলের এই অনড় অবস্থানে থমকে গিয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ। ক্ষোভে জোরালো আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে বস্তি উন্নয়ন সমিতি।
খড়্গপুর বিদ্যুৎ বণ্টন দফতরের ইঞ্জিনিয়ার কমলকুমার মাইতি বলেন, “পুরসভার নো অবজেকশন পেয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। চলতি সপ্তাহের প্রথমে রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ওই কাজ করা যাবে না। এই পরিস্থিতিতে কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।” রেলের তরফে আপত্তির ব্যাখ্যায় খড়্গপুরের ডিআরএম গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, রেলের অনুমতি ছাড়া রেল এলাকায় যে কোনও রকমের নির্মাণ অবৈধ। তাই খুঁটি বসানোর কাজ বন্ধ করতে বলা হয়েছে।
কাজ বন্ধ হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছেন বস্তিবাসী। শান্তিনগরের কে গণেশ, নিমপুরা বস্তির এস সুধাকর রাও, চায়না টাউনের পোলা রাও বলছেন, “ছেলে মেয়েরা আলোর অভাবে পড়াশুনো করতে পারে না। গরমে অহসনীয় অবস্থা হয়। এ ভাবে কী বাস করা যায়?” তাঁর প্রশ্ন, “ভোটের অধিকার আছে, বিদ্যুতের অধিকার কেন থাকবে না?” সকলে মিলে একজোট হয়ে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।
২০০৯ সালে পুর-এলাকার পুনর্বিন্যাসের পর রেল এলাকা পুরসভার অন্তর্ভুক্ত হয়। পুরসভা সূত্রে খবর, এমন ওয়ার্ডের সংখ্যা আটটি। সেই থেকে আশা বেড়েছে বস্তিবাসীর। এরপর তেমন কিছু কাজ না এগোলেও, ২০১৩ সালের শেষে পুরসভা রেল এলাকায় জল ও বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে উদ্যোগী হয়। পুর উদ্যোগে কিছু এলাকায় জলের সমস্যা মিটেছে। কিন্তু, জট তৈরি হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া নিয়ে। খড়্গপুরের পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডে বলছেন, “আমরা রেল এলাকার মানুষের ন্যুনতম পরিষেবার কথা ভেবেই জলের ব্যবস্থা করেছি। বিদ্যুতের জন্য নো-অবজেকশন দিয়েছি। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষের আপত্তিতে কাজ হচ্ছে না।” বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনে পুর মন্ত্রককে রেল বোর্ডের সঙ্গে আলোচনার জন্য বলব।
বসেছে বিদ্যুতের খুঁটি, কিন্তু আসেনি সংযোগ।
শতাব্দী প্রাচীন রেলশহর খড়্গপুরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই বিভিন্ন প্রদেশের মানুষ এখানে বসতি গড়ে। রেলের কোয়ার্টারের গা-ঘেঁষে গড়ে উঠেছে বস্তিও। এই এলাকাগুলি রেলের পরিভাষায় ‘শেড’ বলে পরিচিত। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রেলশহরের নিমপুরা বাজার বস্তি, বোরিং বস্তি, সুপার মার্কেট বস্তি, চায়না টাউন, শান্তি নগর, পাঁচপীর, আয়মা ধোবিঘাট-সহ ৩০টি বস্তি এলাকায় কয়েক হাজার বাসিন্দার বাস। এখানকার বাসিন্দাদের বস্তির ঠিকানাতেই ভোটার কার্ড রয়েছে। ফলে তাঁদের পানীয় জল থেকে বিদ্যুতের দাবি ছিলই। বস্তি উন্নয়ন সমিতির দাবি, এ নিয়ে প্রায় ২০ বছর লড়াই চলছে। তবে রেল কর্তৃপক্ষ কোনও দিনই সে সব দাবি পূরণে উদ্যোগী হয়নি বলে অভিযোগ।
বস্তি উন্নয়ন সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরের ২০ নভেম্বর বিদ্যুৎ দফতরের অফিসে স্মারকলিপি দিয়েছিল দেয় তারা। পুরসভাও সেই প্রস্তাবকে সমর্থন করে। পুরসভার অনুমতি নিয়ে দিন কুড়ি আগে থেকে চায়না টাউন, নিমপুরা বাজার বস্তি-সহ একাধিক এলাকায় খুঁটি বসানোর কাজ শুরু হয়। খুশি ছিলেন বস্তিবাসীও। কিন্তু, তা বদলে গিয়েছে ক্ষোভে।
বস্তিবাসীর পাশে দাঁড়িয়ে বাম পরিচালিত বস্তি উন্নয়ন সমিতি জোরালো আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। সমিতির জেলা সহ-সম্পাদক অনিল দাসের দাবি, তাঁরাই প্রথম বস্তিবাসীর অধিকারের প্রশ্নে আন্দোলন শুরু করেন। তিনি বলেন, “আমরা অস্থায়ী বিদ্যুৎ সংযোগের দাবি করেছিলাম। যখন সব কিছু এগিয়ে গেল তখন রেলের এই বাধা মেনে নেওয়া যায় না।” প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন তিনি। প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়েও প্রস্তুত, বলছেন অনিলবাবু।
—নিজস্ব চিত্র