ভোট কাটাকুটির অঙ্কে জেতার স্বপ্ন বিরোধীদের

২০০৯ সালে জেলার তিন লোকসভা আসনে প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ২৫। সেখানে ২০১৪ সালে প্রার্থীর সংখ্যা সব মিলিয়ে ৩৩! পশ্চিম মেদিনীপুরে তিনটি লোকসভার আসনে ভোট এ বার দু’দফায়। আগামী ৭ মে ঝাড়গ্রাম এবং মেদিনীপুরে, ১২ মে ঘাটালে। মূল লড়াইটা চতুর্মুখী হলেও বহু নির্দল প্রার্থী রয়েছেন এবারের ভোটের ময়দানে। সবথেকে বেশি প্রার্থী রয়েছেন ঝাড়গ্রামে, ১৩ জন। কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম, বিজেপির পাশাপাশি এখানে প্রার্থী আছে ঝাড়খণ্ড (নরেন), ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা, ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টি, ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টি, অখিল ভারতীয় ঝাড়খণ্ড পার্টি, এসইউসি, আমরা বাঙালীর। আছেন দুই নির্দল প্রার্থীও।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৪ ০০:৫৬
Share:

২০০৯ সালে জেলার তিন লোকসভা আসনে প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ২৫। সেখানে ২০১৪ সালে প্রার্থীর সংখ্যা সব মিলিয়ে ৩৩!

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুরে তিনটি লোকসভার আসনে ভোট এ বার দু’দফায়। আগামী ৭ মে ঝাড়গ্রাম এবং মেদিনীপুরে, ১২ মে ঘাটালে। মূল লড়াইটা চতুর্মুখী হলেও বহু নির্দল প্রার্থী রয়েছেন এবারের ভোটের ময়দানে। সবথেকে বেশি প্রার্থী রয়েছেন ঝাড়গ্রামে, ১৩ জন। কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম, বিজেপির পাশাপাশি এখানে প্রার্থী আছে ঝাড়খণ্ড (নরেন), ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা, ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টি, ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টি, অখিল ভারতীয় ঝাড়খণ্ড পার্টি, এসইউসি, আমরা বাঙালীর। আছেন দুই নির্দল প্রার্থীও। ২০০৯ সালে এই আসনে সব মিলিয়ে ৮ জন প্রার্থী ছিলেন। গতবারের মতো এ বারও মেদিনীপুরে প্রার্থী সংখ্যা ১০। ঘাটালে এ বছর প্রার্থী ১০ জন। গতবার ছিলেন ৭ জন। কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিআই, বিজেপির পাশাপাশি লড়াইয়ে আছে এসইউসি, ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টি, পিডিএস, আমরা বাঙালী, রাষ্ট্রীয় জনাধিকার সুরক্ষা পার্টি। আছেন এক নির্দল প্রার্থীও।

২০০৯ সালে জেলার তিনটি আসনের তিনটিই দখল করে বামেরা। ঘাটাল থেকে বামেরা জেতে ১,৪৭,১৮৪ ভোটের ব্যবধানে। ঝাড়গ্রাম ও মেদিনীপুরে এই ব্যবধান ছিল যথাক্রমে ২,৯২,৩৪৫ ও ৪৮,০১৭। সেই বছর কংগ্রেস- তৃণমূল জোট হয়েছিল। অবশ্য, রাজ্যে পালাবদলের পর জেলার রাজনৈতিক মানচিত্রেও পরিবর্তন এসেছে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে এ জেলায় বিপুল সাফল্য পেয়েছে তৃণমূল। ২৯টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে ২৮টিই শাসক দলের দখলে। ৭ টি জেলা পরিষদ আসনের মধ্যে ৬৪টিই পেয়েছে তৃণমূল। ২টি সিপিএম, ১টি কংগ্রেস। এ বার মূল লোকসভা নির্বাচন লড়াইটাই চতুর্মুখী। সিপিআইয়ের দুই প্রার্থীর প্রধান প্রতিপক্ষ আবার তারকা। মেদিনীপুরে প্রবোধ পণ্ডার প্রধান প্রতিপক্ষ তৃণমূলের অভিনেত্রী প্রার্থী সন্ধ্যা রায়। ঘাটালে সন্তোষ রাণার প্রধান প্রতিপক্ষ তৃণমূলের অভিনেতা প্রার্থী দীপক অধিকারী অর্থাৎ দেব। ফলে, তারকা-আলোতে চাপ যে একটু বেশি তা বিলক্ষণ জানে বামেরা। প্রার্থীর সংখ্যা বেশি হলে ভোট কাটাকুটির সম্ভাবনা থাকেই। আর এই সম্ভাবনার মধ্যেই তৃণমূলকে হারিয়ে জেলার তিন আসনে জেতার স্বপ্ন দেখছে বিরোধীরা। বিশেষ করে বামেরা। অবশ্য কোনও দলই প্রকাশ্যে এ কথা কবুল করছে না। জেলা কংগ্রেস সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়ার দাবি, “মানুষ প্রতীক দেখে ভোট দেন। কিছু ক্ষেত্রে প্রার্থীর ইমেজ ফ্যাক্টর হয়।” বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “এ বার তরুণ ভোটার প্রচুর। আমরা নিশ্চিত, তরুণরা আমাদের দিকেই আছেন।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের দাবি, “তারকাদের নিয়ে এই আবেগটা তাৎক্ষনিক। আমাদের জেলার মানুষ রাজনীতি-সচেতন।” কী বলছে শাসক দল? জেলা তৃণমূলের সভাপতি দীনেন রায়ের প্রতিক্রিয়া, “এ বার প্রার্থীর সংখ্যা আগের থেকে বেশি। এটা ঠিক। কিন্তু মূল পার্টি একটাই! তৃণমূল। বাকি সব ভোট কাটাকুটি পার্টি! ”

Advertisement

দলীয় সূত্রে খবর, মুখে কিছু না বললেও শাসকদলের অন্দরে বিষয়টা এতটা লঘু নয়। বরং ভোট কাটাকুটির সম্ভাবনার কথা মেনেই নেতা-কর্মীদের বারবার সতর্ক করা হচ্ছে। না হলে কেন ভোট-প্রচারে জেলায় এসে তারকা-সাংসদ মিঠুন চক্রবর্তী তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়ে বলেন, “সবাই মিলে ভোট কাটাকুটির গেম খেলছে। এমন ভাবে রাজনীতি করুণ যাতে পশ্চিমবঙ্গের ভাল হয়।” এই পরিস্থিতিতে ভোট কাটাকুটিতেই জেতার স্বপ্ন দেখছে প্রধান বিরোধী পক্ষ। অন্য দিকে, মোদি-হাওয়াও আছে। বিজেপি যদি তৃণমূলের ভোট কাটে, তাহলে বামেদেরই সুবিধে হবে। বিজেপির জেলা সভাপতি তুষারবাবুর দাবি, “মানুষ তৃণমূলের বিকল্প হিসেবে এ রাজ্যে বিজেপিকে ভাবতে শুরু করেছে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের সওয়াল, “মানুষ যদি ভোট দিতে পারেন, তাহলে এ বারও জেলার ঐতিহ্য বজায় থাকবে।” অবশ্য জেলা তৃণমূলের সভাপতি দীনেনবাবুর কটাক্ষ, “বিজেপির হাওয়া যতটুকু আছে, তা কয়েকটি সংবাদমাধ্যমেই! মানুষের মধ্যে নেই।”

আপাতত, সকলের নজর ওই ১৬ মে-র দিকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন