ভোট-পর্ব মিটতেই হিসেবে ব্যস্ত সব দল

ভোটপর্ব মেটার পরে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে---কে কোথায় দাঁড়িয়ে? বিধানসভা, পঞ্চায়েত ও পুরভোটে অভূতপূর্ব সাফল্যের পরে এবার বৃত্ত সম্পূর্ণ করার ডাক দিয়েছিল তৃণমূল। বরাবর বামেদের দখলে থাকা ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রটিতে এবার কে জয়ী হবে? প্রশ্ন শুনে শাসক দল তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, এখানে তিন লক্ষেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে উমা সরেন জিতছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৪ ০১:২২
Share:

ভোটপর্ব মেটার পরে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে---কে কোথায় দাঁড়িয়ে? বিধানসভা, পঞ্চায়েত ও পুরভোটে অভূতপূর্ব সাফল্যের পরে এবার বৃত্ত সম্পূর্ণ করার ডাক দিয়েছিল তৃণমূল। বরাবর বামেদের দখলে থাকা ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রটিতে এবার কে জয়ী হবে? প্রশ্ন শুনে শাসক দল তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, এখানে তিন লক্ষেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে উমা সরেন জিতছেন। তৃণমূল প্রার্থী উমা নিজে অবশ্য বলছেন, “মুখ্যমন্ত্রী জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরিয়েছেন। সর্বত্র নিবিড় উন্নয়ন-কাজ হচ্ছে। তাই তৃণমূলই জঙ্গলমহলের একমাত্র বিকল্প। ভাল ফলের আশা করছি।” বুধবার ভোটের হার দেখে শাসক দলের নেতাদের মুখের হাসি চওড়া হয়েছে। পাশাপাশি, বিরোধী শিবিরের উদ্বেগ বেড়েছে।

Advertisement

২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভোটদানের হার ছিল ৭৭ শতাংশ। এবার ভোট পড়েছে ৮৭ শতাংশ। গতবার ২ লক্ষ ৯২ হাজার ৩৪৫টি ভোটের ব্যবধানে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের প্রার্থীকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন সিপিএমের পুলিনবিহারী বাস্কে। বিদায়ী সাংসদ পুলিনবাবু এবারও সিপিএম প্রার্থী। এবার ভোটদানের গতিপ্রকৃতি দেখে পুলিনবাবু বলছেন, “গড়বেতা ও শালবনি বিধানসভার ১০৭ টি বুথে ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে। ওই বুথগুলিতে এক তরফা ভোট লুঠ করেছে তৃণমূল। এর পরে কী বলব বলুন তো?”

বামেদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ বলেন, “জঙ্গলমহলের মানুষ সিপিএমকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ১৬ তারিখ ফল প্রকাশের পর এটা আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে।” শাসক দলের এই কথার জবাবে বামেদের একাংশ মানছেন, নেতাইয়ের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সাফল্য এসেছিল। এবার লোকসভা ভোটের মুখে ডালিম পাণ্ডে-সহ ৫ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে নেতাই স্মৃতি উসকে দিয়েছিল রাজ্য সরকার। আর বুধবার জঙ্গলমহলে ভোট গ্রহণের দিনে নেতাই-কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত অনুজ পাণ্ডের গ্রেফতারের ঘটনাটি জনসমক্ষে আনার পিছনে রাজনৈতিক কৌশল রয়েছে বলে মনে করছে বাম শিবির। সিপিএমের জেলা কমিটির এক প্রবীণ নেতার কথায়, “সাংগঠনিক ভাবে তৃণমূলের পায়ের তলায় মাটি নেই। উন্নয়নের ভাঁওতাবাজিও ধরা পড়ে গিয়েছে। চলচ্চিত্র তারকাদের প্রচারে এনেও ওরা স্বস্তিতে নেই। সেজন্যই নানা কৌশল ওদের নিতে হয়েছে। জঙ্গলমহলে পরিবর্তন ঘটেছে বটে, তবে প্রত্যাবর্তনেরও দেরি নেই।” বামেরা এই কথা বলছেন বটে, কিন্তু সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে এবার অধিকাংশ বুথে বিরোধীরা বুথ-এজেন্ট দিতে পারে নি।

Advertisement

জঙ্গলমহলে কংগ্রেসের সাংগঠনিক অবস্থা এখন নড়বড়ে। দলের নেতা-কর্মীদের একটি বড় অংশ তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। বাকিরা বসে গিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে আশার আলো দেখছেন না কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশ। দলের জেলা সহ সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, “একক ভাবে শক্তি পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে আমরা সফল। এবার আমাদের ভোটের হার বাড়বে।’’ জয়ের কথা বলছেন না কেন? সুব্রতবাবুর কৌশলী জবাব, “অর্থ ও পেশি শক্তির কাছে আমরা টিকতে পারি নি।”

কেন্দ্রে স্থিতিশীল সরকারের ডাক দিয়ে জঙ্গলমহলে দলীয় প্রার্থী বিকাশ মুদিকে জেতানোর ডাক দিয়েছিল বিজেপি। যদিও গত লোকসভা ভোটে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল ৫ শতাংশেরও কম। এবার পরিববর্তিত পরিস্থিতিতে ‘কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী, জঙ্গলমহলে বিকাশ মুদি’ স্লোগান তুলেছিল বিজেপি। ভোটপর্ব মেটার পরে বিজেপির ঝাড়গ্রাম জেলা সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত মাহাতো বলছেন, “তৃণমূল ব্যাপক রিগিং ও সন্ত্রাস করেছে। অবাধ ভোট হলে আমাদের জয় সুনিশ্চিত ছিল। তবুও আমরা আশাবাদী।”

জঙ্গলমহলে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে প্রতিবারই আঞ্চলিক ঝাড়খণ্ডি দলগুলি প্রার্থী দাঁড় করায়। এবং ওই সব প্রার্থীদের জামানত জব্দ হয়। এবার ঝাড়গ্রাম লোকসভা আসনে তৃণমূল, সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি-সহ ১৩জন প্রার্থীর মধ্যে ৫ জন আঞ্চলিক ঝাড়খণ্ডি দলের প্রার্থী। এবারও ভোটে দাঁড়িয়েছেন ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন) নেত্রী চুনিবালা হাঁসদা। গতবার চুনিবালা পেয়েছিলেন মাত্র ৪৮,১৭৫টি ভোট। চুনিবালা বলছেন, “সংগঠন ধরে রাখার জন্যই ভোটে দাঁড়িয়েছি। হার জিতটা বড় কথা নয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন