মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, তবু শহরে ফুটপাথ তৈরি নিয়ে সংশয়

রাস্তার দু’পাশে সার দিয়ে দোকান। মেদিনীপুর শহরে রাস্তার দু’পাশে কোনও ফুটপাথও নেই। তাই বাধ্য হয়ে পথচারীদের সঙ্কীর্ণ রাস্তা দিয়েই হাঁটতে হয়। ফলে প্রতি মূহুর্তে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। পরিস্থিতি দেখে শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোয় ফুটপাথ অর্থাৎ, পাথওয়ে তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, প্রশাসনিক মহলে সংশয়, হকার সমস্যার জর্জরিত শহরে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো আলাদা ভাবে ফুটপাথ তৈরি করা যাবে তো?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৪ ০০:০২
Share:

নেই ফুটপাথ। তাই বড়তলার চক রোডে বাধ্য হয়ে রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করছেন পথচারীরা। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

রাস্তার দু’পাশে সার দিয়ে দোকান। মেদিনীপুর শহরে রাস্তার দু’পাশে কোনও ফুটপাথও নেই। তাই বাধ্য হয়ে পথচারীদের সঙ্কীর্ণ রাস্তা দিয়েই হাঁটতে হয়। ফলে প্রতি মূহুর্তে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। পরিস্থিতি দেখে শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোয় ফুটপাথ অর্থাৎ, পাথওয়ে তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, প্রশাসনিক মহলে সংশয়, হকার সমস্যার জর্জরিত শহরে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো আলাদা ভাবে ফুটপাথ তৈরি করা যাবে তো?

Advertisement

পুর-কর্তৃপক্ষ আগেও রাস্তা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছেন। ঢাকঢোল পিটিয়ে কাজ শুরুও করেছেন। তবে শেষ করতে পারেননি। নানা ‘বাধা’র জেরে রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ মাঝপথেই বন্ধ করতে হয়েছে। যেটুকু সম্প্রসারণ হয়েছিল, সেটুকুও আবার এই সময়ের মধ্যে চলে গিয়েছে হকারদের দখলে! স্বাভাবিক ভাবে হকারদের সরিয়ে রাস্তা চওড়া করে আলাদা ভাবে ফুটপাথ তৈরি সম্ভব হবে কি না, সেই নিয়ে সংশয়ে থেকেই যাচ্ছে।

পুর কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, পথচলতি মানুষের সুবিধের কথা ভেবেই মুখ্যমন্ত্রী ফুটপাথ তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ কার্যকর করা হবেই। মেদিনীপুরের পুরপ্রধান প্রণব বসু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী পাথওয়ে তৈরির কথা বলেছেন। শহরে পাথওয়ে তৈরি হবে।” তবে শহরের অধিকাংশ রাস্তার দু’পাশ জবরদখল হয়ে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কী ফুটপাথ তৈরি করা আদৌ সম্ভব? প্রণববাবুর জবাব, “কেন নয়? এ ক্ষেত্রে আলোচনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।” একই দাবি উপপুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাসেরও। তিনি বলেন, “হয়তো সব রাস্তায় পাথওয়ে তৈরি করা যাবে না। যেখানে করা সম্ভব সেখানে করা হবে। মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতেই হবে!” তাঁর কথায়, “পথচারীদের সুবিধার্থেই মুখ্যমন্ত্রী পাথওয়ে তৈরির কথা বলেছেন। এ জন্য রাস্তা সম্প্রসারণ করতে হবে। তবে এ কাজে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।”

Advertisement

মেদিনীপুর শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোর মধ্যে জর্জকোর্ট রোড-কেরানিতলা, কেরানিতলা-কালেক্টরেট মোড়, কালেক্টরেট মোড়-গাঁধী স্ট্যাচু মোড়, গাঁধী স্ট্যাচু মোড়-বটতলাচক, বটতলাচক-কেরানিতলা, গোলকুয়াচক-ধর্মা অন্যতম। তার মধ্যে গোলকুয়াচক-ধর্মা রাস্তাটি আবার সবথেকে বেশি দুর্ঘটনাপ্রবণ। পরিস্থিতি দেখে আগে প্রশাসনিক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকেল ৩টে থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত শহরের মধ্যে বড় লরি ঢুকতে পারবে না। তবে পুলিশি নজরদারির ফাঁক গলে কী সকাল, কী দুপুর, শহরে লরি ঢোকেই। তাছাড়াও মেদিনীপুর শহরে রাস্তায় কোথাও লরি-ম্যাটাডোর-ট্যাক্সি স্ট্যান্ড রয়েছে। কোথাও রয়েছে গাড়ির গ্যারাজ। রাস্তার দু’পাশে বেআইনি পার্কিংও চলে। ফলে যানজটও বাড়ে।

মেদিনীপুর শহরের মধ্যে কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড রয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের উপর দিয়ে প্রায় ৮০০টি বাস চলাচল করে। প্রায় সব বাসই শহর ছুঁয়ে যায়। অন্য দিকে, শহরে আবার যত্রতত্র বাস-অটো দাঁড় করিয়ে যাত্রী তোলা হয়। ফলে, ব্যস্ত সময়ে যানজট বাড়ে। রাস্তায় ছোট-বড় গাড়ির সংখ্যাও আগের থেকে বেড়েছে। এখন শহরে মোটরবাইকের সংখ্যাও অনেক বেড়েছে। ছোট-বড় গাড়ির সংখ্যা আগের থেকে বাড়লেও শহরের রাস্তাগুলোর হাল সে ভাবে ফেরেনি। শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় ফুটপাতের প্রয়োজন রয়েছে বলে মানছেন কংগ্রেস কাউন্সিলর কৌস্তভ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, “এ জন্য পুর- কর্তৃপক্ষকেই উদ্যোগী হতে হবে। আলোচনা করতে হবে।”

পরিস্থিতি দেখে ফুটপাথ তৈরির কাজে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে হকারদের সংগঠনও। সারা বাংলা হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক শঙ্কর দাস বলেন, “মেদিনীপুর শহরে ফুটপাথ তৈরি হলে ভালই হবে। আমাদের আপত্তি নেই। তবে আগে হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। কেন্দ্রীয় আইন বলছে, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে হকার উচ্ছেদ করা যায় না।” তাঁর কথায়, “মেদিনীপুর শহরের বেশ কিছু রাস্তার দু’পাশে সরকারি জায়গা রয়েছে। ওই সব সরকারি জায়গায় হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক। তারপর রাস্তা সম্প্রসারণ হোক। ফুটপাথ তৈরি হোক।”

জেলা সফরে এসে সোমবার মেদিনীপুরে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই দিন বিকেলে শহরে এক প্রশাসনিক সভাও হয়। এই সভাতেই শহরে পাথওয়ে তৈরির নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার পাশে ত্রিফলা আলো অর্থাৎ বাতিস্তম্ভ লাগানো হয়েছে। শহরের সৌন্দর্যায়নের উদ্যোগ দেখে খুশিই হন মুখ্যমন্ত্রী। সভায় তিনি জানিয়ে দেন, রাস্তার পাশে ত্রিফলা আলোগুলো দেখতে ভাল লাগে। এ বার শহরে ফুটপাথ তৈরি করতে হবে।

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ শুনে পুরসভার এক আধিকারিকের মন্তব্য, “রাস্তা চওড়া করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যা আছে। সবটাই জানা আছে। কিন্তু, অনেক সময় কিছু করার থাকে না! এ বার কিছু চেষ্টা করতেই হবে!” শহরকে যানজট মুক্ত করতে ফুটপাথ তৈরির কাজ কতটা এগোয়, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন