বর্ধমান বিস্ফোরণ কাণ্ডে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থাকে (এনআইএ) দিয়ে তদন্ত ও রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের ভূমিকার প্রতিবাদে সারা রাজ্যের মতো দুই মেদিনীপুরে ‘সাবধান র্যালি’ করল বিজেপি নেতাকর্মীরা। তমলুকের শঙ্করআড়ায় জেলা বিজেপির অফিসের সামনে সেই কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাওয়ার পথে অন্তত তিনটি জায়গায় দলের কর্মী-সমর্থকেরা তৃণমূলের লোকেদের হাতে প্রহৃত হয়েছেন, এমনই অভিযোগ বিজেপির জেলা নেতৃত্বের।
বিজেপির পূর্ব মেদিনীপুরের সাধারণ সম্পাদক সুকুমার দাসের অভিযোগ, মহিষাদলের কালিকাকুণ্ডু, ভুপতিনগরের মাধাখালি ও পটাশপুর থেকে দলীয় সমর্থকদের তমলুকের কর্মসূচিতে আসতে বাধা দেওয়া হয়েছে। কালিকাকুণ্ডু বাসস্ট্যান্ডের কাছে দলীয় সমর্থকদের পথ আটকায় তৃণমূল কর্মীরা। কিল-চড়-ঘুষি মারে। কর্মসূচিতে না যাওয়ার হুমকি দেয়। সুকুমারবাবুর আরও অভিযোগ, মাধাখালিতেও চার কর্মী-সমর্থককে মারধর করা হয়েছে। পটাশপুরেও ট্রেকার আটকে কর্মীদের আসতে বাধা দেওয়া হয়েছে।
তমলুকের শঙ্করআড়ায় জেলা বিজেপির অফিসের সামনে পূর্বের নানা জায়গা থেকে বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা এ দিন বিকাল তিনটে নাগাদ জড়ো হন। কয়েক’শো মহিলা-সহ প্রায় দেড় হাজার সমর্থক জেলা অফিস থেকে মিছিল শুরু করে। হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়ক ধরে শহরের হাসপাতাল মোড়, জেলা প্রশাসনিক অফিস, নিমতলা মোড় হয়ে শহরের ভিতরে রাস্তা ধরে বড়বাজারে পৌঁছয় মিছিল। নেতৃত্বে ছিলেন বিজেপির জেলা সভাপতি তপন কর, জেলা সাধারণ সম্পাদক সুকুমার দাস, খেজুরির প্রাক্তন বিধায়ক স্বদেশ পাত্র, সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া উজ্জ্বল ভট্টাচার্য, যুব মোর্চার জেলা সভাপতি নীলাঞ্জন অধিকারী প্রমুখ।
বিজেপি’র জেলা সভাপতি-সম্পাদকের অভিযোগ, বর্ধমান বিস্ফোরণ কাণ্ডে জঙ্গিযোগ এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদীদের জড়িত থাকার প্রমাণ মিললেও রাজ্য সরকার এর তদন্তের জন্য জাতীয় তদন্তকারী সংস্থাকে দায়িত্ব দিতে রাজি হচ্ছে না। তাতে তদন্ত বাধা পাচ্ছে। জেলা বিজেপি সভাপতি তপন কর বলেন, “খাগড়াগড় বিস্ফোরণে এনআইএ তদন্তের দাবিতে ও বাংলাকে সন্ত্রাসবাদের আঁতুড় ঘর বানানোর প্রতিবাদেই সাবধান র্যালি।”
এ দিন তমলুকের মিছিলে যোগ দিতে যাওয়ার সময় ভূপতিনগরের মাধাখালি বাসস্ট্যান্ডে এক দল বিজেপি কর্মী আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ। বিজেপির কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী কমলেন্দু পাহাড়ি জানান, এ দিন দুপুরে ভগবানপুর ২ ব্লকের বিজেপি সভাপতি জগন্নাথ দাস-সহ জনা পনেরো বিজেপি কর্মী মিছিলে যোগ দিতে তমলুকে যাওয়ার জন্য ভূপতিনগর থানার মাধাখালি বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছিলেন। তখন কিছু তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী তাঁদের উপর চড়াও হয়। ভূপতিনগর থানার পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় বিজেপির পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত থানায় কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি।
তবে কালিকাকুণ্ডুুর ঘটনায় পারিবারিক বিবাদের প্রসঙ্গও উঠেছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, মঙ্গলবার স্থানীয় বাসিন্দা সুবাস গোস্বামীর সঙ্গে সুব্রত গোস্বামী ও তাঁর বাবা পঞ্চানন গোস্বামী ঝামেলা বাধে। সুবাসের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার হন সুব্রত তাঁর বাবা পঞ্চানন মণ্ডল। সুব্রতর অভিযোগ, তাঁরা বিজেপি সমর্থক হওয়ায় তৃণমূল সমর্থক সুবাসের অভিযোগে তাঁদের ধরা হয়েছে। তবে মহিষাদলের ওসি বাসুকি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এর মধ্যে রাজনীতি নেই।”
পশ্চিম মেদিনীপুরেও বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়। বিজেপির এই বিক্ষোভ থেকে দলের জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়-সহ ৭৪ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে সকলকেই ব্যক্তিগত বন্ডে ছেড়ে দেওয়া হয়। দুপুরে মেদিনীপুর পুলিশ লাইনে তাঁদের খাওয়ারও ব্যবস্থা করা হয় পুলিশের উদ্যোগে, যা সচরাচর দেখা যায় না। তুষারবাবুর অভিযোগ, “কালেক্টরেট মোড়ে আমাদের বক্তব্য রাখার কথা ছিল। সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে কী ভাবে বাংলায় বড় নাশকতার ছক কষছে তৃণমূল, তাই আমরা মানুষকে বলতাম। পুলিশ চায়নি তা বলি।”
পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের অভিযোগ উড়িয়ে পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “মেদিনীপুর শহরে কর্মসূচি হবে, অথচ পুলিশকে জানানো হবে না? আইনশৃঙ্খলা দেখা পুলিশের কাজ। পুলিশ সেটাই করেছে।” বিজেপির জেলা সভাপতি তুষারবাবুর অবশ্য দাবি, “এই কর্মসূচির জন্য কোতয়ালি থানায় গিয়ে অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। পুলিশ অনুমতি দেয়নি। আমরা পুলিশ সুপারের কাছে ই-মেলও পাঠিয়েছিলাম।”