বাবার হাতে মিষ্টিমুখ প্রত্যয়ের (বাঁ দিকে)। মায়ের আদরে গোপাল ( ডান দিকে) ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।
২০০৯ সালের পর প্রতি বছর মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের আগে থেকে স্কুলের শিক্ষকরা আশায় থাকতেন এ বার মেধা তালিকায় কোনও ছাত্র স্থান পাবে। কিন্তু প্রতিবারই দোরগোড়ায় পৌঁছে স্বপ্ন পূরণ হত না। এতদিনের হতাশা বৃহস্পতিবার কেটে গেল মাধ্যমিকের ফল ঘোষণার পরই। তমলুক হ্যামিল্টন হাই স্কুলের এতদিনের সব চাহিদা পূরণ করে দিল মেধা তালিকায় স্কুলের দুই পরীক্ষার্থীর যুগ্ম ষষ্ঠ স্থান। এই স্কুলের ছাত্র প্রত্যয় চন্দ ও গোপালচন্দ্র সাঁতরার এই সাফল্যে তাই যারপরনাই খুশি পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক শহরের দেড়শ বছরের প্রাচীন এই স্কুল।
স্কুলের দুই পড়ুয়ার ৬৭৭ নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় ষষ্ঠ স্থান পাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে স্কুলের ছারা। পাশাপাশি আনন্দে মাতেন শিক্ষক ও পরিচালন সমিতির সদস্যরাও। ফলাফল জানতে আসা অভিভাবকদের স্কুলের উদ্যোগে মিষ্টিও বিলি করা হয়েছে। স্কুলের প্রাধন শিক্ষক সোমনাথ মিশ্র জানান, ১৯৩৬ সালে স্কুলের ছাত্র অমলেশ ত্রিপাঠী তৎকালীন স্কুল ফাইনাল পরীক্ষায় রাজ্যে প্রথম স্থান পেয়েছিলেন। ২০০৯ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় স্কুলের ছাত্র রঞ্জিবুল ইসলাম রাজ্যের মেধা তালিকায় নবম স্থান দখল করেছিল। এরপর অনেকেই মেধা তালিকার কাছাকাছি গিয়েও তালিকার চৌকাঠ পেরোতে পারেনি। তা নিয়ে শিক্ষকদের আফশোস ছিলই। এ দিনের যুগ্ম ফল সেই সব কষ্ট দূর করে দিয়েছে।
হ্যামিল্টন হাই স্কুল থেকে এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল ১৯৬ জন। প্রথম বিভাগ পাওয়া ১৩৩ জনের মধ্যে ৭৮ জন স্টার পেয়েছে। সোমনাথবাবুর কথায়, “বেশ কয়েক বছর ধরে উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষার মেধা তালিকায় আমাদের একাধিক ছাত্র স্থান পেয়েছে। তবে গত কয়েক বছর ধরে মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় স্থান না পাওয়ায় শিক্ষক-অভিভাবক মহলে নানা প্রশ্ন ছিল। আজ তার নিরসন হয়েছে।”
এ দিন মার্কশিট নিতে এসেছিল পরীক্ষার্থী রামকৃষ্ণ কর। নিজে ৬৪৭ নম্বর পাওয়া রামকৃষ্ণ বলে, “আমাদের দুই সহপাঠী প্রত্যয় ও গোপাল মেধা তালিকায় এত ভাল ফল করেছে জেনে খুব খুশি হয়েছি।” ৬২৪ নম্বর পাওয়া আর এক ছাত্র সন্দীপ সামন্ত বলেন, “ওরা দু’জনেই স্কুলের পরীক্ষায় ক্লাসে প্রথম অথবা দ্বিতীয় স্থান নিত। মাধ্যমিকে দু’জনে একই নম্বর পেয়ে স্থান পাওয়ায় আমরা সকলেই খুশি।” মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশের হারে গত কয়েক বছরের মত এবারও রাজে শীর্ষস্থানে রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা। এ বার জেলার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের পাশের হার ৯৫.০৪ শতাংশ। মেধা তালিকায় যুগ্ম ষষ্ঠ স্থান দখল করা ছাড়াও দশম স্থানে রয়েছে হলদিয়া সেন্ট জেভিয়ার্স হাইস্কুলের ছাত্র অদ্রীশ পাণ্ডা।