মেদিনীপুর কলেজের এই লাল-সাদা বোর্ডটি নিয়েই বিতর্ক। সৌমেশ্বর মণ্ডলের তোলা ছবি।
কলেজ থেকে লাল রঙের সাইন বোর্ড সরানোর জন্য খেপে উঠেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)।
ঘটনাস্থল সম্প্রতি স্বশাসিতের মর্যাদা পাওয়া মেদিনীপুর কলেজ, যেখানকার ছাত্র সংসদ থেকে বাম-বিদায় ঘটেছে ২০১১ সালে।
স্বশাসিত হওয়ার পরে কলেজের নাম লেখা দু’টি সাইন বোর্ড লাগানো হয়। একটি লাল-সাদা, অন্যটি নীল-সাদা। লাল রঙের ‘গ্লো-সাইন বোর্ড’ নিয়েই আপত্তি টিএমসিপি-র। ছাত্র সংসদে ক্ষমতাসীন টিএমসিপি গত শনিবার থেকে দফায় দফায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছে গিয়ে দরবার করছে। সোমবারও টিএমসিপি কর্মীরা অধ্যক্ষের কাছে গিয়ে দাবি করেন, লাল সাইনবোর্ড সরাতে হবে। তাতে কলেজ চত্বরের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে!
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুধীন্দ্রনাথ বাগ বলেন, “কয়েকজন ছাত্র আপত্তি জানিয়েছেন। আমি তাঁদের বুঝিয়ে বলেছি, কোনও উদ্দেশ্য নিয়ে নয়, রাতের অন্ধকারে বেশি উজ্জ্বল দেখাবে বলেই লাল রং ব্যবহার করা হয়েছে। ওঁদের আপত্তি নিয়ে কিছু ভাবছি না।”
মেদিনীপুর শহরের টিএমসিপি নেতা তথা সংগঠনের জেলা সাধারণ সম্পাদক বুদ্ধ মণ্ডলের বক্তব্য, “লাল রঙের বোর্ড নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের আপত্তি আছে। কর্তৃপক্ষের লাল বোর্ড সরানো উচিত।” টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরিরও বক্তব্য, “ছাত্রছাত্রীরা যেখানে লাল রঙের বোর্ডের ক্ষেত্রে আপত্তি জানিয়েছেন, সেখানে ওই বোর্ড সরিয়ে দেওয়াই ভাল। লাল ছাড়া আর কি রং নেই!”
বামপন্থীদের মনে পড়ানোর জন্যই কি লাল রংকে ব্রাত্য করতে চাওয়া হচ্ছে? এ বার দুই টিএমসিপি নেতার জবাব, “না না, বাইরে নীল-সাদা, ভিতরে লাল। কেমন বেমানান লাগছে না?” এ প্রসঙ্গে টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডার মন্তব্য, “নিয়ে কী হয়েছে, দেখতে হবে।”
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে বিশেষ এক-একটি রঙের অনুষঙ্গে চিহ্নিত করার চল রয়েছে এ রাজ্যে। সংশ্লিষ্ট দলের পতাকার রং-ই এ ক্ষেত্রে বিচার্য। যেমন বামপন্থী দলগুলির রং লাল, কংগ্রেস বা তৃণমূলের সবুজ, বিজেপি-র গেরুয়া। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পছন্দের রং হিসেবে বর্তমানে নীল-সাদা রংও তৃণমূলের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে। রাস্তার রেলিং থেকে বিভিন্ন সরকারি ভবনের রং বদলে নীল-সাদা করা হচ্ছে, বিভিন্ন জায়গায় মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের মঞ্চে টাঙানো হচ্ছে নীল-সাদা কাপড়।
রং নিয়ে রাজনৈতিক চাপান-উতোর নতুন নয়। বেশ কিছু দিন আগে পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুরে প্রাণিসম্পদ দফতরের এক অনুষ্ঠানের মঞ্চ লাল কাপড় দিয়ে তৈরি করায় শেষমেশ অনুষ্ঠান বাতিল হয়ে গিয়েছিল। বলা হয়েছিল, অনুষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা সিপিএম পরিচালিত পঞ্চায়েত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে লাল কাপড়ে মঞ্চ বেঁধেছে। মাস কয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রী আসবেন বলে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পরিষদ সভাঘরের লাল পর্দা পাল্টে সবুজ করা হয়। বাড়িতে নীল-সাদা রং করলে কর ছাড় দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত সম্প্রতি কলকাতা পুরসভা নিয়েছে, বিতর্ক হয়েছে তা নিয়েও। এ বার মেদিনীপুর কলেজে লাল রঙের বোর্ড লাগানো নিয়ে টিএমসিপি-র আপত্তির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলি। এসএফআইয়ের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক সৌগত পণ্ডা বলেন, “রং নিয়ে বেশি না ভেবে টিএমসিপি বরং ছাত্রছাত্রীদের ন্যায্য দাবিগুলো নিয়ে ভাবুক!” ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি মহম্মদ সইফুলের আবার কটাক্ষ, “দিদি যেখানে নীল-সাদা রং পছন্দ করেন, সেখানে ভাইরা অন্য রং পছন্দ করবেন কী করে!”