জেলা স্কুল পরিদর্শকের নির্দেশ অমান্য করে এক শিক্ষককে স্কুলে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের দখলে থাকা পরিচালন সমিতির বিরুদ্ধে। হাজিরা খাতায় সই করতে না দেওয়ায় ওই শিক্ষক বেতন পাননি বলেও অভিযোগ। এমন ঘটনাই ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা রোড সারদাময়ী হাইস্কুলে।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৮৯ সাল থেকে এই স্কুলে শিক্ষকতা করছেন মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা সুশান্তকুমার মান্না। তিনি শুধু তৃণমূল সমর্থিত পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনের সদস্য নন, সংগঠনের হয়ে গড়বেতা-১, ২, ৩-এই তিনটি ব্লকের সংগঠনের কাজকর্ম দেখভালেরও দায়িত্বে রয়েছেন। সম্প্রতি সাধারণ বদলির জন্য তিনি আবেদন জানিয়েছিলেন। এরপর মেদিনীপুর শহরেরই একটি স্কুলে তাঁর বদলিও হয়ে যায়। কিন্তু পরে সহকর্মীদের জোরাজুরিতে তিনি ফের চন্দ্রকোনার স্কুলে থাকারই সিদ্ধান্ত নেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক, জেলা স্কুল পরিদর্শককে লিখিতভাবেও তা জানিয়ে দেন। সেই মর্মে গত বছরের ৫ ডিসেম্বর স্কুল পরিচালন সমিতিও বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয় যে, সুশান্তবাবুকে ছাড়া হবে না।
কিন্তু স্কুল পরিদর্শকের নির্দেশ প্রাথমিকভাবে না মানা নিয়ে স্কুল পরিচালন সমিতির সদস্যদের মধ্যে বিতর্ক তৈরি হয়। সেজন্য ফের বৈঠক ডাকা হয় গত ২২ ডিসেম্বর। সেখানে সুশান্তবাবুকে স্কুল থেকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু প্রথবারের সিদ্ধান্ত এ বার বদলে গেল কেন?
সুশান্তবাবুর অভিযোগ, তিনি স্কুলের বিভিন্ন দুর্নীতির বারবার প্রতিবাদ করাতেই তৃণমূলের একটি গোষ্ঠী চাইছে তিনি অন্য স্কুলে বদলি হয়ে যান। সেকারণেই প্রথমে তাঁকে স্কুলে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও ফের সিদ্ধান্ত বদল হয়। এ ব্যাপারে স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক তথা এলাকার দাপুটে তৃমমূল নেতা আকাশদীপ সিংহ বলেন, “প্রথম বৈঠকের এরকম সিদ্ধান্ত নেওয়া আমাদের উচিত হয়নি। ওই সিদ্ধান্তের পরই জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছ থেকে ওঁর বদলির চিঠি আসে। তাতে ১৫ দিনের মধ্যে সুশান্তবাবুকে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ ছিল। ফলে আইন বাঁচাতে তড়িঘড়ি বৈঠক ডেকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।”
কিন্তু তারপর তো ফের স্কুল পরিদর্শক ওই শিক্ষককে চন্দ্রকোনার স্কুলেই কাজে বহাল থাকার অনুমতি দিয়েছেন? তাহলেও তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না কেন? স্কুলের প্রধান শিক্ষক বুদ্ধদেব বন্দ্যোপাধায় বলেন, “এ ব্যাপারে পরিচালন সমিতি সিদ্ধান্ত নেয়। তাঁদেরই জিগ্যেস করুন।” আর পরিচালন সমিতির সম্পাদক আকাশদীপ সিংহের কথায়, “সরকারি নিয়ম মেনেই তাঁকে স্কুলে ঢুকতে বারণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরাও জেলা স্কুল পরিদর্শককে চিঠি দেওয়ার পাশাপাশি আইনি পরামর্শ নিচ্ছি।” জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) অমরকুমার শীল বলেন, “ওই শিক্ষককে নিয়মিত ভাবে হাজিরা খাতায় সই করার কথা ও মাইনে দেওয়ার কথা বলেছি। এতেও কাজ না হলেও উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাব। তাঁদের নির্দেশ মতোই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।”