লোকসভা নির্বাচনের আগেও তাঁদের শীতল সম্পর্কের দূরত্ব মোছেনি। কিন্তু নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ের পরে অন্তত ‘সৌজন্যের’ খাতিরে দলের সাংসদকে নিজেই সংবর্ধনা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন হলদিয়ার বিধায়ক শিউলি সাহা। তবে বৃহস্পতিবার সেই অনুষ্ঠানেও দলীয় কোন্দল আড়াল করতে পারা গেল না। অনুষ্ঠানে শুভেন্দু এলেও গরহাজির থাকলেন জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি তথা প্রাক্তন বিধায়ক তুষার মণ্ডল। জেলায় যিনি শুভেন্দু অনুগামী বলে পরিচিত।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর অনুপস্থিতির কারণ, শিউলির সংবর্ধনায় থাকতে চাননি তিনি। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি জানান, দলীয় ভাবে ওই অনুষ্ঠান হলে তিনি উপস্থিত থাকার কথা ভাবতে পারতেন। কিন্তু শিউলিদেবীর উদ্যোগে যেহেতু ওই অনুষ্ঠান তাই সেখানে থাকতে চাননি তিনি।
দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে ‘বিরোধ’ মিটে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন শিউলি সাহা। লোকসভা ভোটের আগে শুভেন্দুকে পুনর্নির্বাচিত করতে বেশ কিছু জনসভাও করেছিলেন তিনি। দলীয় ঐক্য বোঝাতে সেখানে একত্রে দেখা গিয়েছিল শুভেন্দু-শিউলিকে। তমলুকের সাংসদ হিসাবে ফের জয়ের পরে সেই ঐক্যের সূত্র ধরেই শিউলিদেবীর উদ্যোগে বৃহস্পতিবার শুভেন্দুকে সাংসদ হিসাবে সংবর্ধনা দেওয়া হয় সুতাহাটা সুবর্ণজয়ন্তী হলে।
সেখানে শুভেন্দুকে ‘যুবনায়ক’ ও ‘মানবদরদী’ বলে সম্বোধন করে শিউলিদেবী বলেন, “নির্বাচনে আমরা একে অপরকে জিততে সাহায্য করেছি। একসঙ্গে আছি, একসঙ্গে থাকব। এই পথেই ২০১৬ সালে সাফল্য আসবে।” আপ্লুত শুভেন্দুও শিউলিদেবীকে কৃতঞ্জতা জানিয়ে বলেন, “বিধায়িকা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। সাংসদ হিসাবে আমি তাঁকে বিধায়িকা নির্বাচনে সাহায্য করেছিলাম। তেমনই তিনিও পাল্টা সহযোগিতা করেছেন।”
শুভেন্দু আরও বলেন, “২০১২ পুরভোটে ও ২০১৩ পঞ্চায়েত ভোটে আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল। সে সব সরিয়ে এ বারের নির্বাচনে বড় সাফল্য এসেছে।” এ দিনও ঐক্যের বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, “সাংগঠনিক ভাবে আমি আমি নীতিতে বিশ্বাসী না হয়ে আমরা আমরায় বিশ্বাসী হতে হবে। হাতে দু’বছর সময় আছে দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।”
তবে এই ঐক্যের মধ্যেও তুষার ঘিষ্ঠদের কাছে জানান, সংবর্ধনা দেওয়া হয় দলের তরফে। সেখানে আসেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি ও সংস্থা। কিন্তু এ দিনের সভা তেমনি ভাবে হচ্ছে না বলে মন্তব্য তাঁর। তুষারবাবু বলেন, “আমার আপত্তি দলে জানিয়েছি।” আর এক নেতা প্রাক্তন জেলা পরিষদ সদস্য আনন্দময় অধিকারী বলেন, “মাইকে প্রচার হয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু আমাকে উদ্যোক্তাদের তরফে কেউ জানাননি।”
মালদা-মুর্শিদাবাদে দলীয় দ্বন্দ্বের জেরে তৃণমূলের ভোট কমা নিয়ে ক্ষুব্ধ তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কড়া পদক্ষেপ নিয়েছেন। দলীয় সূত্রে খবর, লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরে সব জেলাকেই দলীয় দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সেই প্রসঙ্গ তুলে তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের মত, স্বাভাবিক ভাবে শুভেন্দুও দলনেত্রীর বিরাগভাজন না হয়ে এখন ঐক্যের বার্তাই তুলে ধরতে চাইবেন। সে জন্যই তিনি শিউলির আমন্ত্রণ রক্ষা করেছেন।