শিশু উদ্যানের জমিতে বাজার, ভাঙার নির্দেশ

শিশু উদ্যান তৈরি করার নাম করে নেওয়া হয়েছিল জমি। আর অনুমতি মেলার পরেই সেই জমিতে উঠল চার তলার মার্কেট কমপ্লেক্স। এমনই অভিযোগ উঠল এগরা পুর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তাই অবৈধ নির্মাণ হিসেবে গণ্য করে এগরার ওই মার্কেট কমপ্লেক্সটিকে ভাঙার নির্দেশ দিয়েছে এগরা মহকুমা প্রশাসন।

Advertisement

কৌশিক মিশ্র

এগরা শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৪ ০১:৩৩
Share:

এই মার্কেট কমপ্লেক্সই ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।—নিজস্ব চিত্র।

শিশু উদ্যান তৈরি করার নাম করে নেওয়া হয়েছিল জমি। আর অনুমতি মেলার পরেই সেই জমিতে উঠল চার তলার মার্কেট কমপ্লেক্স। এমনই অভিযোগ উঠল এগরা পুর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তাই অবৈধ নির্মাণ হিসেবে গণ্য করে এগরার ওই মার্কেট কমপ্লেক্সটিকে ভাঙার নির্দেশ দিয়েছে এগরা মহকুমা প্রশাসন।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এগরা শহরের দিঘা মোড়ের কাছে যেখানে ওই আবাসন গড়ে উঠেছে সেই জায়গাটি আসলে পূর্ত দফতরের। পুর কর্তৃপক্ষ ওই জায়গায় প্রথমে একটি শিশু উদ্যান করার জন্য পূর্ত দফতরের থেকে অনুমতি চেয়েছিল। ২০১১ সালের ১৫ নভেম্বর পূর্ত দফতর সেই অনুমতি মঞ্জুর করেছিল। তবে সেই সঙ্গে লিখিত বয়ানে বলা হয়েছিল, ওই জায়গায় কোনও স্থায়ী নির্মাণ করা যাবে না। কথা হয়েছিল, পরবর্তীকালে পূর্ত দফতর প্রয়োজনে ওই জায়গা ফেরতও নিতে পারে। ২০১২ সালের ২৮ জুন শিশু উদ্যানের বদলে মার্কেট কংপ্লেক্স গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আরও এক মাস পর একজন ঠিকাদারের সঙ্গে যৌথভাবে ওই মার্কেট কমপ্লেক্স গড়ার কাজ শুরু করে এগরা পুরসভা।

কিন্তু এই কমপ্লেক্স গড়ার খবর ছড়াতেই পূর্ত দফতর এই নির্মাণটির বিষয়ে জানায় জেলাশাসক ও এগরার মহকুমাশাসককে। এরপরই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে প্রশাসন। গত ৭ ফেব্রুয়ারি নির্মাণ কাজ বন্ধের নোটিস দেওয়া হয়। সেই সময় এগরার পুরপ্রধান স্বপন নায়ক বলেছিলেন, “নির্মাণটি অবৈধ নয় বরং প্রশাসনের নোটিসটাই বেআইনি।” এই সময় মার্কেট কমপ্লেক্সটির ঠিকাদার অরিন্দম কর মহাপাত্র হাইকোর্টে নির্মাণটির কাজ বন্ধ যাতে না হয় তার আবেদন জানান। গত ১১ এপ্রিল সব পক্ষের শুনানির পর আদালত অরিন্দম কর মহাপাত্রের আবেদন খারিজ করে মহকুমাশাসককে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দেয়।

Advertisement

এগরার মহকুমাশাসক অসীমকুমার বিশ্বাস এ বিষয়ে পুরসভা, দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার ও পূর্ত দফতরকে বৈঠকে ডাকেন গত ১৯ মার্চ। এরপর গত ২৩ এপ্রিল তিনি একটি নোটিস জারি করেন। লোকসভা নির্বাচন চলায় গত ১৭ মে মহকুমাশাসক পুর কর্তৃপক্ষ ও অরিন্দম কর মহাপাত্রকে ২৪ মে-র মধ্যে পূর্ত দফতরের ওই জায়গা থেকে অবৈধ নির্মাণের সব সরঞ্জাম সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন। ওই সময়ের মধ্যে নির্দেশ না মানা হলে আগামী ৫ জুন ওই অবৈধ নির্মাণের সব সরঞ্জাম সরানোর ব্যবস্থা নেবে প্রশাসনই। পূর্ত দফতরের তমলুকের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার শঙ্করনারায়ণ সাহা বলেন, “ওই আবাসনটি অবৈধ। তাই সেটি ভাঙার ব্যাপারে যথোচিত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

এ বিষয়ে ফোনে স্বপন নায়ক বলেন, “পূর্ত দফতরের ওই এলাকার চারপাশে হকারদের দোকান ছিল। মার্কেট কমপ্লেক্সে ওদের পুনর্বাসন দিয়ে যাতে ওখানে শিশু উদ্যান করা যায়, তার চেষ্টা করেছিলাম।” কিন্তু ওই জায়গায় তো স্থায়ী নির্মাণের কোনও অনুমতি দেয় নি পূর্ত দফতর? তার অবশ্য উত্তর মেলেনি।

অন্য দিকে মার্কেট কমপ্লেক্সটির ঠিকাদার অরিন্দম কর মহাপাত্র বলেন, “গত ১১ মার্চ আদালতের নির্দেশমতো আমি পুরসভায় ওই মার্কেট কমপ্লেক্সটির ক্ষতিপূরণ বাবদ খরচের হিসাব জমা দিয়েছি। এখনও কোনও উত্তর পাইনি। এখন আদালত বন্ধ। এরপর ক্ষতিপূরণ না পাওয়া পর্যন্ত আবাসনটি না ভাঙার আবেদন করব।” এগরার মহকুমাশাসক অসীমকুমার বিশ্বাস বলেন, “ওই অবৈধ নির্মাণের বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন