সংখ্যালঘুরা বঞ্চিতই, প্রচারে বাম-দাবি

গত ৩৪ মাসে তৃণমূল সরকার সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিয়ে খেলে ব্যর্থতা ঢাকতে কোটি কোটি টাকার বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে রাজ্যের সংখ্যালঘুদের কার্যত ভাঁওতা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ সিপিএমের। ‘সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিয়ে তৃণমূলের ছিনিমিনি’ শীর্ষক ২৪ পাতার এই প্রচার পুস্তিকায় সিপিএমের অভিযোগ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মতো জরুরি প্রশ্নে তৃণমূল সরকার অত্যন্ত সংকীর্ণ মনোভাব নিয়ে কাজ করছে।

Advertisement

সুব্রত গুহ

কাঁথি শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৪ ০১:১৯
Share:

সিপিএমের প্রকাশিত পুস্তিকা।—নিজস্ব চিত্র।

নন্দীগ্রামের পরে এ বার রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়নে বঞ্চনা নিয়ে প্রচার পুস্তিকা বের করল সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। পুস্তিকায় তথ্যের ভিত্তিতে দেখানো হয়েছে গত তিন বছরে সংখ্যালঘুদের অবস্থার ‘প্রকৃত’ চিত্র। তুলনামূলক ভাবে তুলে ধরা হয়েছে পূর্বতন বাম সরকারের সময়ে সংখ্যালঘুদের ‘উন্নয়নে’ সাফল্যের কথা।

Advertisement

গত ৩৪ মাসে তৃণমূল সরকার সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিয়ে খেলে ব্যর্থতা ঢাকতে কোটি কোটি টাকার বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে রাজ্যের সংখ্যালঘুদের কার্যত ভাঁওতা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ সিপিএমের। ‘সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিয়ে তৃণমূলের ছিনিমিনি’ শীর্ষক ২৪ পাতার এই প্রচার পুস্তিকায় সিপিএমের অভিযোগ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মতো জরুরি প্রশ্নে তৃণমূল সরকার অত্যন্ত সংকীর্ণ মনোভাব নিয়ে কাজ করছে। প্রচার পুস্তিকায় বলা হয়েছে, ২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল তাদের নির্বাচনী ইস্তেহার ও ‘ভিশন ডকুমেন্ট’ প্রকাশ করে রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিয়ে নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও গত ৩৪ মাসে কিছুই করেনি। সংখ্যালঘুদের চাকরিতে অগ্রাধিকার, কর্মসংস্থানে প্রাধান্য দেওয়া, নতুন দশ হাজার মাদ্রাসার অনুমোদন, সংখ্যালঘুদের জন্য আলাদা হাসপাতাল, মাদ্রাসাগুলিতে কারিগরি শিক্ষার জন্য বিশেষ বাজেট বরাদ্দ, ৫৬টি মার্কেটিং হাব তৈরি করে ৫৬ হাজার সংখ্যালঘু ছাত্রদের কাজের বন্দোবস্ত করার ঢালাও প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে কোনও কিছুই করেনি তৃণমূল সরকার। সিপিএমের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই সংখ্যালঘু দফতরের মন্ত্রী হয়েও দফতর নিয়ে, এমনকী বিধানসভাতেও সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিয়ে বিরোধীদের আনা কোনও প্রশ্নের জবাব দিতে মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত থাকেন না।

পুস্তিকায় বলা হয়েছে, সংখ্যালঘু উন্নয়নে মাল্টি সেক্টোরাল ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রকল্পে (এমএসডিপি) ২০১১ সালের মার্চ পযর্ন্ত বাম সরকার শেষ পাঁচ বছরে সংখ্যালঘু উন্নয়নে ৫০৯ কোটি ৩১ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা পেয়ে তার প্রায় ৯৫ ভাগ অর্থ খরচ করতে পেরেছিল। সেখানে ২০১১-১২ সালে কেন্দ্রীয় সরকার ওই খাতে রাজ্যকে ১০২ কোটি ৮ লক্ষ ২৩ হাজার টাকা দিলেও খরচ হয়েছে ৮৮ কোটি ৬৬ লক্ষ ৭৯ হাজার টাকা। ২০১২-১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই খাতে ২০০ কোটি ৫৫ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা পেয়েও খরচ হয়েছে মাত্র ১৬ কোটি ৯৯ লক্ষ ৭ হাজার টাকা! যা ১২ শংতাশেরও কম। এমএসডিপি প্রকল্পে দেশের ৯০টি সংখ্যালঘু প্রধান এলাকায় বাড়ি, স্কুলবাড়ি, অতিরিক্ত ক্লাসঘর-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতিতে কেন্দ্রীয় সরকার অর্থ দিয়ে থাকে। এই প্রকল্পে থাকা রাজ্যের ১২টি জেলার জন্য ২০১২-র মার্চ থেকে ২০১৩-র সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪৫০ কোটিরও বেশি টাকা পেয়ে তৃণমূল সরকার এখনও পযর্ন্ত ৪৮৩টি হ্যান্ডপাম্প লাগানো ছাড়া আর কিছুই করে উঠতে পারেনি। সংখ্যালঘুদের ঋণ দেওয়ার মাত্রাও কমে গিয়েছে। ২০১১-১২ আর্থিক বছরে ২৮৪৩ জন সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম থেকে ৮ কোটি ৫৯ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা শিক্ষা ঋণ পেলেও পরের বছরে সেই ঋণ পেয়েছেন মাত্র ১৬২৪ জন।

Advertisement

অন্য দিকে, সংখ্যালঘুদের জন্য বাম আমলে উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে বলা হয়েছে, ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্টই প্রথম দেশের মধ্যে এ রাজ্যে সংখ্যালঘু দফতর চালু করে। এ ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম, রাজ্য উর্দু আকাদেমি, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড স্থাপন ও মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকীকরণ ও তাকে মাধ্যমিক শিক্ষার সমতুল্য করার অবদান বাম সরকারের। এ ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ ওয়াকফ বোর্ড পরিচালিত ১০টি হোস্টেল, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এবং মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন ও উর্দু আকাদেমিকে সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি দিয়েছিল বাম সরকার।

কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী ও দলের রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস সিংহ বলেন, “এই পুস্তিকা পেয়ে মানুষ, বিশেষত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ চিনতে ও বুঝতে পারবেন রাজ্যের শাসকদলের প্রকৃত চরিত্র। রাজ্যের সংখ্যালঘু মানুষদের নিয়ে তৃণমূল আদতে রাজ্যে ভোট রাজনীতি করছে।” পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের জেলা সম্পাদক ও জেলা শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ মামুদ হোসেন অবশ্য সিপিএমের দাবি মানতে নারাজ। তাঁর কথায়, “গত ৩৪ বছর ধরে এ রাজ্যে বামফ্রন্ট বিশেষ করে সিপিএম সংখ্যালঘু উন্নয়নের নামে যে জঘন্য রাজনীতি করেছে তা মানুষ জানেন। সংখ্যালঘুদের প্রকৃত উন্নয়ন আদৌ হয়নি। তাই এখনও অধিকাংশ সংখ্যালঘু মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন