গ্রামপঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের সভায় এ বার তৃণমূলের একাংশের বিরুদ্ধে সই জালিয়াতির অভিযোগ তুলল দলের অন্য গোষ্ঠী।
১৩ সদস্য বিশিষ্ট সামসাবাদ গ্রামপঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান অতনু জানার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন উপ-প্রধান সবিতা মণ্ডল-সহ তৃণমূলের ৮ জন সদস্য। কিন্তু প্রধানের বিরুদ্ধে ওই অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেওয়ার পর তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল চরমে ওঠে। অনাস্থা প্রস্তাব সমর্থন করা উপ-প্রধান পরে প্রস্তাবে সমর্থন করতে রাজি হননি বলে অভিযোগ। ফলে সবিতাদেবীকে বাড়ি থেকে অপহরণের অভিযোগ ওঠে প্রধানের অনুগামীদের বিরুদ্ধে। আবার সবিতাদেবীর শ্বশুরকেও অপহরণের অভিযোগ উঠেছিল। আবার উপ-প্রধানকে ফিরিয়ে আনার জন্য পাল্টা হিসেবে তাঁর বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের অপর গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। সব মিলিয়ে প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব ঘিরে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে সামসাবাদ এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল।
পরিস্থিতি সামাল দিতে শুক্রবার অনাস্থা প্রস্তাব নিয়েডাকা সভায় নিরাপত্তার জন্য পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয় গ্রামপঞ্চায়েত অফিস চত্বরে। এদিন পঞ্চায়েত অফিসের কাছাকাছি তৃণমূলের সমর্থকরা সহ কয়েক’শ লোক হাজির ছিলেন। ব্লক প্রশাসনের তরফে পঞ্চায়েত উন্নয়ন আধিকারিকের উপস্থিতিতে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে সভা হয়। জানা গিয়েছে, এ দিন সভায় পঞ্চায়েত প্রধান অতনু জানা-সহ তাঁর অনুগামী সদস্যরা গরহাজির ছিলেন। অনাস্থা প্রস্তাব সমর্থন করে সভায় ৭ জন উপস্থিত হয়েছে বলে সাক্ষর করা হয়। অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে সভায় ভোটাভুটিতে ৭-০ ব্যবধানে অনাস্থা প্রস্তাব পাশ হয়ে যায় বলে উপস্থিত পঞ্চায়েত সদস্যদের দাবি।
কিন্তু এই ঘটনার পরই অভিযোগ ওঠে ওই গ্রামপঞ্চায়েতের উপ-প্রধান সবিতা মণ্ডল সভায় উপস্থিত না হলেও তাঁর উপস্থিতি দেখানো হয়েছে। এ নিয়ে তৃণমূলেরই একাংশ ব্লক ও জেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছে। নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা তথা পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি শেখ সুফিয়ানের অভিযোগ, “গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে এ দিন সভায় উপ-প্রধান সবিতাদেবী উপস্থিত ছিলেন না। তাঁর জায়গায় অন্য একজনকে উপস্থিত করে সবিতাদেবীর সই জাল করে তাঁকে উপস্থিত দেখানো হয়েছে। দলেরই একাংশ নেতার মদতেই এমন ঘটনা।” অভিযোগের বিষয়ে তৃণমূলের নন্দীগ্রাম-১ ব্লক সভাপতি মেঘনাদ পাল বলেন, “অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে সভায় উপ-প্রধান সহ আমাদের দলের সাতজন সদস্য উপস্থিত ছিল বলেই জানি। উপ-প্রধানের সই জাল করার অভিযোগ ঠিক নয়।” তবে এ দিনের অনাস্থা প্রস্তাবের সভা প্রসঙ্গে নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের বিডিও অমর্ত্য চক্রবর্তী বলেন, “উপ-প্রধানের উপস্থিতি নিয়ে অভিযোগ পেয়েছি। এ নিয়ে তদন্তও চলছে। অনাস্থা প্রস্তাব পাশ হয়েছে কি না এখনই বলা যাবে না।”
পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বলেন, “অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে সভায় উপ-প্রধানের উপস্থিতি নিয়ে সই জাল করার বিষয়ে ফোনে অভিযোগ পেয়েছি। হলদিয়ার মহকুমাশাসককে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।” হলদিয়ার মহকুমাশাসক শঙ্কর নস্কর বলেন, “সভায় উপ-প্রধানের উপস্থিতি নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে ব্লক প্রশাসনের কাছ থেকে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।”