সময়ের পরে মাইক, পুলিশ পেটাল তৃণমূল নেতাকে

রাত ১০টা পরেও মাইক বাজিয়ে চলছিল জলসা। অভিযোগ পেয়ে মাইক বাজানো বন্ধ করতে গিয়ে পুলিশ লাঠিপেটা করল তৃণমূল কাউন্সিলর ও তাঁর অনুগামীদের। মেদিনীপুর শহরের সোমবার রাতের ঘটনা। যে আমলে শাসকদলের হামলা থেকে বাঁচতে থানার ভিতরে সেঁধিয়ে ফাইল মাথায় দিয়ে আত্মরক্ষা করতে দেখা গিয়েছে পুলিশকে (আলিপুর-কাণ্ড), সেখানে তাদের এই ‘ভূমিকায়’ গুঞ্জন শুরু হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৪১
Share:

রাত ১০টা পরেও মাইক বাজিয়ে চলছিল জলসা। অভিযোগ পেয়ে মাইক বাজানো বন্ধ করতে গিয়ে পুলিশ লাঠিপেটা করল তৃণমূল কাউন্সিলর ও তাঁর অনুগামীদের। মেদিনীপুর শহরের সোমবার রাতের ঘটনা। যে আমলে শাসকদলের হামলা থেকে বাঁচতে থানার ভিতরে সেঁধিয়ে ফাইল মাথায় দিয়ে আত্মরক্ষা করতে দেখা গিয়েছে পুলিশকে (আলিপুর-কাণ্ড), সেখানে তাদের এই ‘ভূমিকায়’ গুঞ্জন শুরু হয়েছে।

Advertisement

মেদিনীপুর শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্মাল্য চক্রবর্তী গত বছর থেকে গির্জা এলাকায় সরস্বতী পুজো চালু করেছেন। পুজো উপলক্ষে সোমবার রাতের জলসার মূল উদ্যোক্তাও তিনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, রাত ১০টার পরেও তারস্বরে মাইক বাজিয়ে অনুষ্ঠান চলছিল। অভিযোগ পেয়ে কোতয়ালি থানার পুলিশ গিয়ে অনুষ্ঠান বন্ধ করার কথা বললে কাউন্সিলরের সঙ্গে তাদের বচসা শুরু হয়। উত্তেজনা বাড়ে। পুলিশ লাঠি চালায়। লাঠির ঘা পড়ে নির্মাল্যবাবু, তাঁর বাবা নন্দদুলাল চক্রবর্তী এবং স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের গায়ে।

নির্মাল্যবাবুর অভিযোগ, পুলিশ বিনা প্ররোচনায় লাঠি চালায়। এমনকী, মহিলা পুলিশ ছাড়াই মহিলাদের উপরেও চড়াও হয়। তাঁর দাবি: “তখন সবে রাত ১০টা ৫ বাজে। মঞ্চে বাউল গান হচ্ছিল। পুলিশ কোনও কথা না বলে হঠাৎই পেটাতে শুরু করে।”

Advertisement

পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, তারা ঘটনাস্থলে যায় রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ। উদ্যোক্তাদের জানানো হয়, শহরের সব জায়গায় রাত ১০টার পরে মাইক বাজানো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বলা হয়। জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, “উদ্যোক্তারা কথা শুনতে চাননি। উল্টে বচসা শুরু করেন। এক পুলিশকর্মীর কলার ধরে এক জন টানাটানি শুরু করে। আক্রান্ত হওয়াতে বাধ্য হয়ে লাঠি চালানো হয়।” তবে এ ব্যাপারে পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। মোবাইলে ফোন, এসএমএস করা হলেও জবাব মেলেনি।

পুলিশ সূত্রের খবর, এ রাজ্যে শাসক দলের নেতা-কর্মীদের হাতে আকছার আক্রান্ত হওয়ায় নিচুতলার পুলিশকর্মীদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। পুলিশ মহলেই রসিকতা চালু হয়েছে, তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা পুলিশকে মন্দিরের ঘণ্টা মনে করেন। ইচ্ছে হলেই ‘বাজিয়ে’ দেন। সেখানে পুলিশ লাঠি চালানোর সিদ্ধান্ত নিতে অস্বস্তিতে পড়ল না? রাজ্য পুলিশের এক কর্তার বক্তব্য, “কখনও কখনও দাঁড়ি টানতে হয়। নিজেদের সম্মান বলেও তো একটা বস্তু আছে।”

গির্জা এলাকার এই ঘটনায় গুঞ্জন শুরু হয়েছে বিরোধীদের মধ্যে। রাজ্যের সর্বত্র তৃণমূলের কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ ‘এমন কড়া ব্যবস্থা’ নেবে কি না, সে প্রশ্ন তুলেছেন সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি নেতারা।

তৃণমূল শিবির অবশ্য বেজায় ক্ষুব্ধ। দলের অন্দরের খবর, পুলিশের ‘ভূমিকা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে মঙ্গলবার সকালেই তড়িঘড়ি বৈঠকে বসেন এলাকার নেতারা। কাউন্সিলরের গায়ে হাত তোলার আগে কেন পুলিশ পুর-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন মনে করল না, এই প্রশ্নও ওঠে। সিদ্ধান্ত হয়, সাত জনের একটি প্রতিনিধি দল তৃণমূলের শহর-সভাপতি আশিস চক্রবর্তীর নেতৃত্বে পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে যাবে।

কিন্তু পুলিশ তো তার কাজ করেছে? আশিসবাবু বলেন, “যা ঘটেছে, তা অনভিপ্রেত। কারণ তো জানতেই হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন