হারানো গ্রামবাংলা ফিরছে পুজোর শহরে

পুজোর শহরে ধরা পড়বে গ্রাম বাংলার আমেজ। নতুন প্রজন্মের কাছে পুরনো দিনের গন্ধ ফিরিয়ে দিতে উদ্যোগী হয়েছে মেদিনীপুরের একাধিক পুজো কমিটি। নিখুঁত ভাবে সব দিক তুলে ধরতে দিন-রাত এক করে কাজ চলছে মণ্ডপে মণ্ডপে।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৫ ০১:৪০
Share:

পাহাড়ের কোলে গ্রাম রূপ পাচ্ছে মেদিনীপুরের অশোকনগর সর্বজনীনে ।

পুজোর শহরে ধরা পড়বে গ্রাম বাংলার আমেজ। নতুন প্রজন্মের কাছে পুরনো দিনের গন্ধ ফিরিয়ে দিতে উদ্যোগী হয়েছে মেদিনীপুরের একাধিক পুজো কমিটি। নিখুঁত ভাবে সব দিক তুলে ধরতে দিন-রাত এক করে কাজ চলছে মণ্ডপে মণ্ডপে।

Advertisement

শহরের বাড়মানিকপুর সর্বজনীনের মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে পুরনো দিনের চৌহদ্দি বাড়ির আদলে। চৌহদ্দি বাড়িতে একটাই দরজা থাকে। বাকি সব জানলা। মণ্ডপেও একটা দরজা দিয়েই ঢুকতে হবে। মধুবনি রেখাচিত্র দিয়ে বাড়ির দেওয়ালে ফুটিয়ে তোলা হবে রামায়ণের দৃশ্যাবলি। মণ্ডপ চত্বরে থাকবে গাছগাছালি। তা থেকে নামবে ঝুরি। প্রতিমাতেও সাবেকিয়ানার ছাপ। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা রাজনারায়ণ দত্ত বলেন, ‘‘আমরা আধুনিক প্রজন্মের কাছে পুরনো দিনের কাহিনি তুলে ধরতে চাইছি। আদি পুজো বলতে যা বোঝায়, এ বার আমাদের থিম সেটাই।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আধুনিক প্রজন্মের অনেকের কাছেই চৌহদ্দি বাড়ির ধারণা নেই। থাকার কথাও নয়। আমরা সেই পুরনো ঘরানায় ফিরে যাচ্ছি। আশা করি, আমাদের পুজো দর্শকদের একটা আলাদা অনুভূতি দেবে।’’


বাড়মানিকপুরে মণ্ডপ হচ্ছে চৌহদ্দি বাড়ির আদলে ।

Advertisement

মেদিনীপুরের অশোকনগর সর্বজনীনের থিম এ বার গ্রাম-বাংলা। মণ্ডপে পাহাড়ি গ্রাম ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন উদ্যোক্তারা। থাকবে পাহাড়। পাহাড়ের কোলে ঝর্না। নদী, কুমির, বক, ধান জমি, বটগাছ, কৃত্রিম ভাবে সব কিছুই বানানো হচ্ছে। চড়াই-উতরাই পথে গা ছমছমে পরিবেশ থাকবে মণ্ডপে। পুজো কমিটির সম্পাদক সুব্রত রায় বলেন, ‘‘পুজোয় এ বার আমরা হারিয়ে যাওয়া গ্রাম-বাংলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।’’ প্রতিমাও মানানসই। মনে হবে, গুহার ভিতরে পাথর কেটে তৈরি প্রতিমা রয়েছে। পুজো কমিটির সাংস্কৃতিক বিভাগের প্রধান কল্যাণময় ঘোষ জানালেন, পুজোর ক’দিন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, শঙ্খবাদন, ধুনুচি নাচের আয়োজনও থাকবে।

সাবেক পুজোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে থিম পুজোর চল। বেশ কয়েক বছর হল থিম পুজোর স্রোতে গা ভাসিয়েছে শহর মেদিনীপুর। শহরে ছোট- বড় পুজোর ফারাক মুছে দেয় এই থিমই। কারণ, শহরে কোনও কোনও পুজোর বাজেট যেমন দশ-বারো লাখ থাকে, তেমন কোনও কোনও পুজোর বাজেট দেড়- দু’লাখও থাকে। ভিড় টানার নিরিখে বড় বাজেটের পুজোগুলো এগিয়েই থাকে। ফি বছর তাদের মধ্যে নজরকাড়ার প্রতিযোগিতা চলে। শরত্‌পল্লি সর্বজনীনের মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে বরোদা হাউসের আদলে। পুরোটাই বাঁশের কাজ। পুজো কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক শুভাশিস ঘোষ বলেন, ‘‘বছর কয়েক ধরে আমরা থিম পুজো শুরু করেছি। থিম পুজোর টানে দর্শকদের ভিড়ও বেড়েছে। আশা করি, এ বারও আমাদের মণ্ডপে প্রচুর ভিড় হবে।’’

মেদিনীপুর শহর এবং আশপাশের এলাকায় শতাধিক সর্বজনীন পুজো হয়। ছোট বাজেটের পুজোগুলোর পক্ষে বড় বাজেটের পুজোগুলোকে ছাপিয়ে যাওয়া সত্যিই কঠিন। তবে বছর কয়েক হল ছবিটা বদলেছে। থিম পুজো করে দর্শকদের ভিড় টানছে ছোট বাজেটের পুজোগুলোও। মণ্ডপ থেকে প্রতিমা, সবেতেই নতুনত্ব আনার চেষ্টা করেন উদ্যোক্তারা। বাড়মানিকপুর সর্বজনীনের অন্যতম উদ্যোক্তা রাজনারায়ণ দত্ত বলছেন, ‘‘পুজোয় গ্রাম্য আদল থাকলে সেই পুজো দর্শকদের টানবেই। কারণ, দর্শকরা সব সময়ই চান, শহরের বুকে নতুন কিছু দেখতে। মাটির গন্ধটা তো আমাদের সকলের কাছেই একটু অন্য রকম।’

ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন