খরচের হিসেব দিতে না পারলে বরাদ্দ মিলবে না। রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের এই হুঁশিয়ারির পর নড়েচড়ে বসল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ। দ্রুত গতিতে কাজ করা তো রয়েছেই, কাজ যতটা এগিয়েছে সেই খরচের হিসেবও সঙ্গে সঙ্গে দিতে হবে এই বার্তা নিয়ে পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কর্মাধ্যক্ষরা! জেলা পরিষদে তৃণমূলের দলনেতা অজিত মাইতির কথায়, “জেলা বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত হবে তা মেনে নেওয়া যাবে না। তাই পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে সঠিক পথে পরিচালিত করে সেই কাজ দ্রুত করার জন্যই এ বার কর্মাধ্যক্ষদেরও পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের সচিব দিব্যনারায়াণ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “সব ক্ষেত্রে বরাদ্দ খরচ হয়নি এমন নয়। অনেক ক্ষেত্রেই কাজ শেষ না হলেও অনেকটা করে এগিয়ে গিয়েছে। কিন্তু তার জন্য যে খরচ হয়েছে তার হিসাব দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির কিছু ক্ষেত্রে গাফিলতি রয়েছে। খরচের হিসাব না দিলে পরের বছরের বরাদ্দ মিলবে না। এটা বোঝাতে আমরাও যেমন ব্লকে ব্লকে যাচ্ছি, তেমনই এ বার কর্মাধ্যক্ষরাও যাচ্ছেন।”
চলতি মাসের ৬ তারিখ রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর একটি বৈঠক ডেকেছিল। তৃতীয় ও ত্রয়োদশ অর্থ কমিশনের খরচের হিসাব দেখতে গিয়ে পঞ্চায়েত দফতরের কর্তাদের মাথায় হাত। বেশিরভাগ জেলায় এই প্রকল্পের বরাদ্দ অর্থ খরচ করতে পারেনি। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা যে হিসাব দিয়েছিল, তাতে দেখা যাচ্ছে তৃতীয় অর্থ কমিশনের বরাদ্দ টাকার ৭৭ শতাংশ অর্থ খরচ করতে পেরেছে। আর ত্রয়োদশ অর্থ কমিশনের বরাদ্দ অর্থের মাত্র ৭১ শতাংশ অর্থ খরচ করতে পেরেছে। এই বরাদ্দ অর্থ চলতি আর্থিক বছরের নয়। তৃতীয় অর্থ কমিশনের টাকা শেষ পেয়েছিল ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে। তা-ও প্রথম কিস্তির টাকা। আর ত্রয়োদশ অর্থ কমিশনে শেষ টাকা পেয়েছিল ২০১৩-১৪ অর্থ বর্ষে। তাও প্রথম কিস্তির।
নিয়ম মেনে টাকা খরচ না করতে পারায় বিগত দু’বছর তৃতীয় অর্থ কমিশনের কোনও বরাদ্দ পায়নি জেলা। এমনকী তার আগের বছরের দ্বিতীয় কিস্তির টাকাও মেলেনি। আর ত্রয়োদশ অর্থ কমিশনের ক্ষেত্রে বিগত বছরের পাশাপাশি তার আগের বছরের দ্বিতীয় কিস্তির টাকা থেকেও বঞ্চিত হয়ছে জেলা। এই পরিস্থিতিতে চলতি আর্থিক বছরেও টাকা খরচ করতে না পারলে আরও একটি বছর বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত হবে জেলা। ধাক্কা খাবে উন্নয়ন। এই পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়েই এ বার কর্মাধ্যক্ষদেরও মাঠে নামতে হয়েছে।
এক একজন কর্মাধ্যক্ষকে একাধিক পঞ্চায়েত সমিতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতিকে দেওয়া হয়েছে সবং, পিংলা, কৃষি কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ডেবরা, বিনপুর-১,২ ও জামবনি, মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ সূর্য অট্টকে দেওয়া হয়েছে নারায়ণগড়, কেশিয়াড়ি, খড়্গপুর-১ ও ২ ব্লক। এ ভাবেই কর্মাধ্যক্ষদের ব্লক ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। সূর্য অট্ট, নির্মল ঘোষদের কথায়, “সব ক্ষেত্রেই কাজ হয়নি এমন নয়। কিন্তু নানা কারণে খরচ হয়ে যাওয়ার টাকার হিসেব পাঠানোর ক্ষেত্রে কিছু গাফিলতি রয়েছে। সকলে ভাবছেন, কাজ শেষ হলে এক সঙ্গে খরচের হিসেব পাঠাবেন। কিন্তু তা করলে তো হবে না। যা খরচ হচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে সেই হিসেবটা যাতে পাঠিয়ে দেন তা বোঝাতেই আমরা ব্লকে ব্লকে যাচ্ছি। পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদের সঙ্গে কথা বলছি।”