হলেই গণধর্ষণ, বক্স বন্ধের সিদ্ধান্ত

সিনেমা হলে শো চলাকালীনই বক্সের মধ্যেই ঘটে গণধর্ষণ ধর্ষণের ফলে কিশোরী মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে নেমে এমনই তথ্য পেল পুলিশ। চন্দ্রকোনার ওই হল মালিক এবং তিন কর্মীকে আটক করা হয়েছে। গণধর্ষণে অভিযুক্ত এক জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। চন্দ্রকোনার ডিঙাল কামারগেড়িয়া গ্রামের বছর ষোলোর ওই কিশোরী রবিবার সন্ধ্যায় ঘাটাল হাসপাতালে মারা যায়। পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে খবর, মৃত্যুর আগে চিকিৎসকদের ওই কিশোরী চন্দ্রকোনা শহরে এক সিনেমা হলের নাম জানিয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঘাটাল শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:০১
Share:

সিনেমা হলে শো চলাকালীনই বক্সের মধ্যেই ঘটে গণধর্ষণ ধর্ষণের ফলে কিশোরী মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে নেমে এমনই তথ্য পেল পুলিশ। চন্দ্রকোনার ওই হল মালিক এবং তিন কর্মীকে আটক করা হয়েছে। গণধর্ষণে অভিযুক্ত এক জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

Advertisement

চন্দ্রকোনার ডিঙাল কামারগেড়িয়া গ্রামের বছর ষোলোর ওই কিশোরী রবিবার সন্ধ্যায় ঘাটাল হাসপাতালে মারা যায়। পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে খবর, মৃত্যুর আগে চিকিৎসকদের ওই কিশোরী চন্দ্রকোনা শহরে এক সিনেমা হলের নাম জানিয়েছিল। সেই সূত্র ধরে তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ওই হলের বক্সে গণধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছিল। হলের মালিক রূপকুমার গোস্বামী ও তিন কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “চন্দ্রকোনার ওই সিনেমা হলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ধৃত হল মালিক ও কর্মীদের জেরা করা হচ্ছে।” বক্সে ওই কাণ্ড ঘটেছে বলে জেরায় হল মালিক স্বীকার করেছেন।

প্রেক্ষাগৃহে বক্সের ঘেরাটোপে নানা অশালীন আচরণ চলে বলে দীর্ঘ দিনের অভিযোগ। কিন্তু এই ঘটনার পরে নড়ে বসেছে পুলিশ-প্রশাসন। পুলিশ সুপার বলেন, “জেলার সব প্রেক্ষাগৃহে এ বার তল্লাশি চালানো হবে। বক্স ব্যবস্থা থাকলে প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ করা হবে।” বক্স আছে এমন অনেক প্রেক্ষাগৃহের নামও পুলিশ জানতে পেরেছে।

Advertisement

মৃত কিশোরীর বাড়ি চন্দ্রকোনার ডিঙাল কামারগেড়িয়া গ্রামে। তার মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে গণধর্ষণ ও তার ফলে মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত করছে পুলিশ। মৃতার মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে সোমবার টোটন কর্মকার নামে বছর সাতাশের যুবককে ধরে পুলিশ। তাঁর বাড়ি চন্দ্রকোনার লালসাগরে। পুলিশ সুপারের দাবি, “গোয়ালতোড়-শালবনি সংলগ্ন এলাকা বাবুইবাসা থেকে ধৃত টোটন এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত।” মৃতার মা জানান, রবিবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ চন্দ্রকোনা শহরে এক আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিল তাঁর মেয়ে। বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ ঘাটাল-ডিঙাল রুটের এক ট্রেকারচালক ওই কিশোরীর মাকে জানান, মেয়েকে ঘাটাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, রবিবার বিকেলে ঘাটালের রাধানগরে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় ওই কিশোরীকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে এক মহিলা এবং এক যুবক তাকে গাড়িতে করে এনে ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করান। রবিবার রাতেই ওই মহিলা ও যুবককে আটক করে পুলিশ। তবে জেরা করে জানা যায়, তাঁরা শুধু ওই কিশোরীকে রাস্তা থেকে তুলে এনে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। এ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরই পুলিশ দু’জনকে ছেড়ে দেয়।

পুলিশ তদন্তে জেনেছে, ঘাটাল-হাওড়া রুটের একটি বাসে টোটনই ওই মেয়েটিকে রাধাননগরে নামিয়ে দিয়ে বেপাত্তা হয়ে যায়। তবে তাদের সঙ্গে আরও দু’জন ছিল বলে পুলিশের অনুমান। কারণ ওই কিশোরীর ব্যাগে বাসের চারটি টিকিট ছিল। তা ছাড়া, সিনেমা হলের বক্সেও চার জনের টিকিট কাটা হয়েছিল। কিন্তু টোটনের সঙ্গে ওই কিশোরীর পরিচয় কী ভাবে হয়েছিল, তা নিয়ে ধন্দে পুলিশ। ওই কিশোরীর বাবা, মা-ও জানিয়েছেন, টোটন নামে কাউকে তাঁরা চেনেন না। টোটন বিবাহিত। বছর দেড়েকের ছেলে রয়েছে তাঁর। একটি ড্যান্স ট্রুপের সঙ্গে যুক্ত টোটন বিহারে থাকেন। মাঝেমধ্যে চন্দ্রকোনার বাড়িতে আসেন।

কিশোরী মৃত্যুর আগে চন্দ্রকোনার একটি সিনেমা হলের নাম জানিয়ে গিয়েছে, হাসপাতাল সূত্রে এই তথ্য জানতে পেরে এ দিন সকালে তল্লাশি অভিযান শুরু করে পুলিশ। চন্দ্রকোনা শহরের দু’টি হলে তল্লাশি চালানো হয়। তারই একটিতে বক্সে রক্তের নমুনা পাওয়া যায়। ওই প্রেক্ষাগৃহের শৌচাগারে মিলেছে রক্তের দাগ। পুলিশ জানিয়েছে, রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানো হবে। সিনেমা হলের বক্সে গণধর্ষণের কথা চাউর হতেই এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার প্রতিবাদে ঘাটালে মিছিল করে কংগ্রেস ও সিপিএমের মহিলা সমিতি। থানায় ডেপুটেশন দেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন