Migrant Labours Harrasment

‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে ওড়িশায় আটক বীরভূমের পরিযায়ী শ্রমিকেরা! যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, চিন্তায় পরিবার, উদ্যোগী রাজ্য

পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার নলহাটি দু’নম্বর ব্লকের বাসিন্দা ওই পরিযায়ী শ্রমিকেরা। প্রায় এক সপ্তাহ যাবৎ ওই শ্রমিকদের আত্মীয়পরিজন তাঁদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করতে পারেননি। আটক করার পরে তাঁদের থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৫ ১২:০০
Share:

—প্রতীকী ছবি।

ওড়িশায় কাজ করতে যাওয়া পশ্চিমবঙ্গের ১৬ জন শ্রমিককে আটক করেছে সে রাজ্যের পুলিশ। ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে গত ২৫ জুন তাঁদের আটক করেছে ওড়িশার রেমুনা থানার পুলিশ। ওই শ্রমিকেরা পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার নলহাটি দু’নম্বর ব্লকের বাসিন্দা। প্রায় এক সপ্তাহ যাবৎ ওই শ্রমিকদের আত্মীয়পরিজন তাঁদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করতে পারেননি। আটক করার পর তাঁদের থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। ওই পরিযায়ী শ্রমিকরা কেমন আছেন, তা জানতে তাঁদের একমাত্র ভরসা রেমুনা থানার পুলিশ। তাই উৎকণ্ঠায় রয়েছে শ্রমিকদের পরিবার।

Advertisement

তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে গত সপ্তাহে নলহাটি বিধানসভা এলাকার তৃণমূলের যুবনেতা আবু জায়েদ রানার দ্বারস্থ হন পরিবারের সদস্যেরা। সেই যুবনেতা মারফত খবর পান স্থানীয় বিধায়ক অশোক চট্টোপাধ্যায়। হাসনের চিকিৎসক-বিধায়ক কথা বলেন আটক পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে। ওই শ্রমিকদের ভারতীয় নাগরিকত্বের যাবতীয় প্রমাণ সংগ্রহ করে তিনি বিষয়টি জানান বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায়কে। বিধায়ক এবং জেলাশাসক যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে তা পাঠিয়ে দেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের কাছে। আটকে থাকা ওই শ্রমিকদের রাজ্য সরকারের উদ্যোগে বাড়ি ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিধায়ক অশোক বলেন, ‘‘আমরা ওই শ্রমিকদের নাগরিকত্বের যাবতীয় প্রমাণ মুখ্যসচিবের কাছে জমা দিয়েছি। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। যত দিন ওই শ্রমিকরা বাড়ি না ফিরে আসেন, তত দিন আমাদের চেষ্টা চলবে।’’

গত ২৫ জুন বীরভূমের বাসিন্দা মোট ১৭ জনকে আটক করে রেমুনা থানার পুলিশ। পরদিন মহম্মদ জহিরুল নামে এক শ্রমিককে মুক্তি দেওয়া হয়। সেই খবরে স্বস্তি ফিরেছে জহিরুলের পরিবারে। তাঁর পরিবারের তরফে রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। বস্তুত, রাজ্য সরকারের পাশাপাশি পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদও ওই শ্রমিকদের মুক্ত করতে উদ্যোগী হয়েছে।

Advertisement

গত কয়েক মাসে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের আটক করার ঘটনা বারবার ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলার শাসকদল তৃণমূল। গত ১০ জুন মুম্বই পুলিশ ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে পাঁচ জনকে আটক করেছিল। অভিযোগ, ওই শ্রমিকদের ভারতীয় পরিচয়পত্র মুম্বই পুলিশকে পাঠানো সত্ত্বেও বেআইনি ভাবে বিএসএফের মাধ্যমে পাঁচ জনকে তাঁদের সটান বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপে হরিহরপাড়া, বেলডাঙা এবং পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের বাসিন্দা তিন জনকে দেশে ফেরানো হয়।

গত সপ্তাহে বিধানসভা অধিবেশনের শেষ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিধানসভা ভবনে ইটাহারের তৃণমূল বিধায়ক মোশারফ হোসেন জানান, তাঁর বিধানসভা এলাকার ২০০ জন পরিযায়ী শ্রমিককে রাজস্থানে ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটক করা হয়েছে। তার পরেই মুখ্যসচিবকে ওই শ্রমিকদের মুক্ত করতে উদ্যোগী হতে নির্দেশ দেন মমতা। সে দিনই তিনি বলেছিলেন, ‘‘যে ভাবে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে পশ্চিমবঙ্গের বাংলাভাষী মানুষদের বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে আমি প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হব।’’ সেই ঘটনার ঠিক পরেই বিজেপি শাসিত আরও এক রাজ্য ওড়িশায় বাংলার শ্রমিকদের আটক করার ঘটনা ঘটল। রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ তথা পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলামের বক্তব্য, ‘‘যে ভাষায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, ক্ষুদিরাম বসুর মত নমস্য ব্যক্তিরা কথা বলতেন, সেই ভাষায় কথা বলার জন্য পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বলে অভিযুক্ত করা হচ্ছে এবং এ সব হচ্ছে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যেমন ভিন্‌রাজ্যে গিয়ে কাজ করে, তেমনই উত্তরপ্রদেশ, বিহারের মতো রাজ্যগুলি থেকেও বহু মানুষ পশ্চিমবঙ্গে এসে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ তাঁদের বেআইনি অনুপ্রবেশকারী বলে দাগিয়ে দেয় না। ভারতীয় হয়েও কেন বাঙালিদের বার বার নিজেদের নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement