Migrant worker

উত্তরপ্রদেশে দশ বছর ‘বন্দি’, বঙ্গে ফিরলেন শ্রমিক

পেটের টানে কোনও একটা কাজের আশায় বছর দশেক আগে বাংলা ছেড়েছিলেন দক্ষিণ দিনাজপুরের গোপালবাটির বাসিন্দা গুল্লু মার্ডি

Advertisement

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২০ ০৪:৪১
Share:

প্রতীকী ছবি।

পরের পর ধর্ষণ, হত্যা-সহ নানান দুষ্কর্মের সঙ্গে সঙ্গে যোগী-রাজ্য উত্তরপ্রদেশে এ বার বাংলার শ্রমিককে ‘বাঁধা’ বা বেগার শ্রমিক হিসেবে ‘বন্দি’ করে রাখার অভিযোগ উঠল।

Advertisement

পেটের টানে কোনও একটা কাজের আশায় বছর দশেক আগে বাংলা ছেড়েছিলেন দক্ষিণ দিনাজপুরের গোপালবাটির বাসিন্দা গুল্লু মার্ডি। তখনই বয়স তাঁর ষাটের উপরে। ঘুরতে ঘুরতে উত্তরপ্রদেশে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাঁর। সেই পর্বে প্রায় বিনা পারিশ্রমিকে ‘বাঁধা মজুর’ হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হন গুল্লু। খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর সন্ধান পাননি আত্মীয়স্বজন। অবশেষে অগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে, করোনার প্রবল দাপটের মধ্যে এক অচেনা ব্যক্তির ফোনে গুল্লুর খোঁজ পায় তাঁর পরিবার। বাবাকে ফিরিয়ে আনার জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে আর্জি জানান তাঁর ছেলে শনথ। নানা বাধাবিপত্তি কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত ১৭ অক্টোবর বাড়ি ফিরেছেন বছর সত্তরের গুল্লু।

ঘরের মানুষ ঘরে ফেরায় খুশি স্ত্রী, ছেলেমেয়েরা। তাঁদের কথায়, ‘‘বাড়ির মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না দীর্ঘদিন। জানতাম না, কেমন আছেন তিনি। দুর্ভাবনা হত, বেঁচে আছেন তো আদৌ? কান্নাকাটিই সার হত। এখন বাড়ির মানুষ ফিরেছে। সকলেরই ভাল লাগছে।’’ আর গুল্লু বলছেন, ‘‘আমি খুব খুশি।’’ তবে দীর্ঘদিন ‘বন্দিদশা’ কাটানোর ফলে বৃদ্ধ গুল্লু মানসিক ভাবে অনেকটাই বিপর্যস্ত। তাই তাঁর কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক নিখিল নির্মল। আর ছেলে শনথ জানিয়েছেন, বাবাকে আর কোথাও যেতে দেবেন না তিনি।

Advertisement

অভিযোগ, প্রায় ১০ বছর ধরে গুল্লুকে আটকে রেখেছিলেন ভূপেন্দ্র সিংহ নামে উত্তরপ্রদেশের ফতেপুর জেলার এক বাসিন্দা। বাবাকে ফেরানোর আবেদন জানিয়ে শনথ চিঠিতে লিখেছিলেন, ভিন্‌ রাজ্যের ওই ব্যক্তি বিনা পারিশ্রমিকে গুল্লুকে দিয়ে বাড়ি মেরামতি-সহ নানা ধরনের কাজ করিয়ে নিয়েছেন। গুল্লু যাতে কোনও ভাবেই নিজের বাড়িতে যোগাযোগ করতে না-পারেন, তার বন্দোবস্তও করেছিলেন ভূপেন্দ্র। এই অবস্থায় অগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে কানপুর থেকে এক অপরিচিত ব্যক্তির ফোনে বাবার বর্তমান ঠিকানা জানতে পারেন বালুরঘাটের গোপালবাটির শনথ। জানা যায়, কেন্দ্র ২৪ মার্চ লকডাউন ঘোষণার পরে অন্য অনেক পরিযায়ী শ্রমিকের মতো বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন গুল্লুও। কিন্তু ফিরতে পারেননি। কানপুরের ঘাটমপুর থানার মুরালিপুরে একটি স্কুলের ত্রাণ শিবিরে ঠাঁই হয় তাঁর। পরে ওই স্কুলেরই এক শিক্ষকের ফোনে গুল্লুর সঙ্গে কথা হয় তাঁর পরিবারের। বাবাকে ফেরাতে জেলা প্রশাসনের কাছে আর্জি জানান শনথেরা। কারণ, গুল্লুকে ফিরিয়ে আনার মতো আর্থিক সামর্থ্য ছিল না জনজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত পিছিয়ে পড়া পরিবারটির। এই অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। এগিয়ে আসেন জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষও (ডালসা)।

কিন্তু ভূপেন্দ্র নামে ফতেপুরের ওই ব্যক্তি বেগার শ্রমিকের মতো গুল্লুকে এত দিন আটকে রাখলেন কী ভাবে? গুল্লুকে আটকে রাখার ব্যাপারে তাঁর পরিবার এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের খবর, অভিযোগ জমা পড়লে তারা তৎক্ষণাৎ উত্তরপ্রদেশ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। কারণ, উত্তরপ্রদেশ পুলিশের পক্ষেই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা সম্ভব।

মঙ্গলবার গুল্লুর বাড়ি গিয়ে তাঁর পরিবারের হাতে পাঞ্জাবি-পাজামা, দু’টি শাড়ি, দু’টি লুঙ্গি, ২৪ কেজি চাল এবং একটি ত্রিপল দেন বালুরঘাটের বিডিও সুমিতকুমার রাই। ডিজিটাল রেশন কার্ড আছে পরিবারটির। গুল্লু এবং তাঁর স্ত্রীর জন্য আগামী মাসে তফসিলি জনজাতির (এসটি) বার্ধক্য পেনশন চালু করতে উদ্যোগী হয়েছে জেলা প্রশাসন। গুল্লুর ছেলেরা যাতে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে কাজ পান, তারও বন্দোবস্ত হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন