Zakir Hussain

জাকিরকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয়নি, সীমান্তের ‘কাঁটা’ সরাতে কি ‘আইইডি’ বিস্ফোরণ

নিমতিতা স্টেশনে নাশকতার উদ্দেশ্যেই যে হামলা হয়েছিল, সে বিষয়ে অনেকটাই নিশ্চিত গোয়েন্দারা।  

Advertisement

সোমনাথ মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৮:৩৬
Share:

রাজ্যের শ্রম দফতরের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন

মুর্শিদাবাদের নিমতিতা স্টেশনে মন্ত্রী জাকির হোসেনকে লক্ষ্য করে বাইরে থেকে বোমা ছোড়া হয়নি। পরিকল্পিত ভাবে বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য সেখানে ‘আইইডি’ (ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে। রাজ্য সরকারের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) তেমন সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দিচ্ছে না।

Advertisement

প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ‘রিমোট কন্ট্রোল’-এর মাধ্যমে বিস্ফোরণের তত্ত্ব সামনে এনে বিজেপি-কে লক্ষ্য করে তোপ দেগেছিলেন। যদিও পাশাপাশিই তিনি বলেছিলেন, তাঁকে ওই সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত জাকিরের ভাগ্নে। নিমতিতা স্টেশনে বিস্ফোরণ কী ভাবে হয়েছে, কেন রাজ্যের শ্রম দফতরের প্রতিমন্ত্রী জাকিরকে ‘লক্ষ্য’ করা হল, সে বিষয়ে এখনও পর্যন্ত সিট-এর তরফে সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে নিমতিতা স্টেশনে নাশকতার উদ্দেশ্যেই যে হামলা হয়েছিল, সে বিষয়ে অনেকটাই নিশ্চিত গোয়েন্দারা।

এ পর্যন্ত তদন্তে পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে বেশ কিছু নতুন দিকও উঠে এসেছে। সেগুলি আপাতত খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহের পর তা ‘সেন্ট্রাল ফরেন্সিক ল্যাবরেটরি’-তে পাঠানো হয়েছে। তার পরেই আইইডি বিস্ফোরণের বিষয়ে আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। ফরেন্সিকের পাশাপাশি সিআইডি-র বম্ব স্কোয়াডও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছিল। সেখান থেকে পাওয়া লোহার পাত, ব্যাটারি, তার, মোবাইল-সহ নানা ধরনের নমুনা খতিয়ে দেখেছে তারা।

Advertisement

নিমতিতা-কাণ্ডে রাজ্য সরকারের গঠিত সিট-এর অধীনে রয়েছেন সিআইডি এবং রাজ্য পুলিশের এসটিএফ-এর গোয়েন্দারা। ইতিমধ্যে অনেকেই জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন ওই স্টেশনের এক হকার। যিনি আবার ঘটনাচক্রে বাংলাদেশি। সিট-এর সদস্যরা বিস্ফোরণের তীব্রতা, স্টেশনে ক্ষয়ক্ষতির ‘হিসাবনিকাশ’ কষে মনে করছেন, বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে ছক কষেই। এবং তা নাশকতার জন্য। পরিকল্পনা মাফিক জাকিরকে মারতে বন্দুকের ব্যবহার করা হয়নি। তার পরিবর্তে মন্ত্রীর যাত্রাপথে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। যাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়। একই সঙ্গে জনসাধারণের মনেও সীমান্ত এলাকায় আতঙ্ক তৈরি হয়। ওই কর্মপদ্ধতি জঙ্গিদের কার্যকলাপের সঙ্গে অনেকটা মেলে বলে মনে করছে পুলিশ অফিসারদের একাংশ।

খাগড়াগড় বিস্ফোরণে ঘটনার পর জঙ্গি কার্যকলাপের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছিল। বিশেষত, সীমান্তের জেলাগুলিতে। যদিও ওই ঘটনার সঙ্গে জঙ্গি-যোগ রয়েছে কি না, তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত নন গোয়েন্দারা। বস্তুত, নিমতিতা স্টেশন বাংলাদেশ লাগোয়া। ওই ‘করিডর’ দিয়ে গরুপাচারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তা নিয়ে জাকির বহুবার সরব হয়েছেন। সীমান্তের ‘কাঁটা’ সরাতেই কি এমন বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল? গোয়েন্দারা আপাতত সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন। তবে গোয়েন্দারা একটা বিষয়ে নিশ্চিত— জাকিরের উপরে গরু পাচারকারীদের ‘আক্রোশ’ ছিল। তারা জানত, জাকিরকে সরাতে পারলে সীমান্তে গরুপাচারে ‘সুবিধা’ হবে।

নিমতিতার ঘটনার সঙ্গে জঙ্গি-যোগ এবং নাশকতার বিভিন্ন দিকও খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। যদিও ওই ঘটনার নেপথ্যে বিরোধী রাজনৈতিক দলের হাত থাকতে পারে বলে সরব হয়েছে তৃণমূলের একাংশ। আবার অন্য দিকে ঘটনার জন্য তৃণমূলের অন্দরে দলীয় কোন্দলের তত্ত্ব তুলে আসরে নেমেছে বিজেপি। এখন দেখার, জাকিরের উপর হামলার প্রকৃত কারণ হিসাবে সিট-এর তদন্তে কী প্রমাণিত হয়। তবে আইইডি বিস্ফোরণের বিষয়টি নিয়েই বেশি উদ্বিগ্ন গোয়েন্দারা। কারণ, তাঁরা সেই সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দিচ্ছেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন