প্রতীকী ছবি।
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করছে বালিকা। সেই সঙ্গে সমানে বলে চলেছে, ‘‘কাকা, জেঠু, ঠাকুরমা বাঁচতে দিল না।’’
বাবা-মা তখনই প্রথম বুঝতে পারেন, মেয়ের উপরে দিনের পর দিন যৌন নিগ্রহ চালানো হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় হলদিয়ার ওই ১০ বছরের বালিকার। বৃহস্পতিবার ময়না-তদন্তের ঘরের বাইরে মৃতার বাবার আক্ষেপ, ‘‘যখন জানলাম, কাকা-জেঠু ওকে নিয়মিত ধর্ষণ করেছে, তখন একেবারে শেষ মুহূর্ত। অত্যাচারের কথা আগে বলল না কেন!’’ মৃত্যুর আগে মেয়ের মুখে পুরো বৃত্তান্ত শুনে কাকা, জেঠু এবং ওই দুষ্কর্মে সহযোগিতা করার জন্য নিজের মায়ের বিরুদ্ধে হলদিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন বালিকার বাবা।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস এ দিন বলেন, ‘‘তলপেটে ব্যথা নিয়ে মেয়েটি ভর্তি হয়েছিল। হলদিয়ার পুলিশ আসার পরে আমরা অভিযোগের কথা জেনেছি। ময়না-তদন্ত হয়েছে।’’ হলদিয়ার এসডিপিও অতীশ বিশ্বাস অবশ্য বলেন, ‘‘ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে যৌন নির্যাতনের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
মৃতার বাবা গাড়ি চালান, তিনি জানান, পঞ্চম শ্রেণিতে মেয়েকে বোর্ডিংয়ে ভর্তি করানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু আচমকা ঠান্ডা লেগে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে হলদিয়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে বাবা জানান, হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন চিকিৎসকের পরামর্শে মেয়ের রক্তপরীক্ষা করানো হয়। রক্তপরীক্ষার রিপোর্টে জানা যায়, মেয়ে এইচআইভি পজিটিভে আক্রান্ত।
মৃতার বাবা এ দিন বলেন, ‘‘ওই রোগ কী ভাবে হয়, তা চিকিৎসকদের কাছে তখনই জানলাম। কী করে এমন হল, জানতে চাওয়ায় মেয়ে কিছুই বলতে চায়নি।’’ গত ফেব্রুয়ারিতে তমলুক হাসপাতাল থেকে ছাড়া পায় বালিকা। কিন্তু ১২ এপ্রিল তার অসুস্থতা ফের বেড়ে যায়। বাবা বলেন, ‘‘এইচআইভি পজিটিভের পাশাপাশি মেয়ে যক্ষ্মাতেও আক্রান্ত হয়েছিল। কড়া ওষুধ খেতে পারত না। দিন দিন মেয়েটা আমার রোগা হয়ে যাচ্ছিল। মুখে ঘা হয়ে গিয়েছিল। খাওয়াদাওয়া করত না। দেখলাম, হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।’’ প্রথমে তমলুক হাসপাতাল, সেখান থেকে নীলরতন সরকার (এনআরএস) মেডিক্যাল কলেজে বালিকাকে স্থানান্তরিত করার সুপারিশ করা হয়। এনআরএস থেকে ঠাঁই হয় কলকাতা মেডিক্যালে।
বাবা বললেন, ‘‘মেডিক্যালে ভর্তি হওয়ার পরে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়। তা সহ্য করতে না-পেরেই মেয়ে প্রথম অত্যাচারের কথা বলল। থানায় অভিযোগ করলাম। মেয়েটা আমার খুব কষ্ট পেয়েছে।’’ পুলিশের কাছে বাবার লিখিত বয়ান অনুযায়ী, তাঁর মেয়ে জানিয়েছে, মিষ্টি খাওয়ার লোভ দেখিয়ে ঠাকুরমা তাকে ডেকে পাঠাতেন। মিষ্টি খেয়ে বালিকা আচ্ছন্ন হয়ে পড়ায় তার পোশাক খুলে নেওয়া হত। বাবার অভিযোগ, তাঁর দাদা যে প্রায়ই ঘুমন্ত মেয়েকে বাড়িতে ছেড়ে দিয়ে যেতেন, তিনি নিজে তার সাক্ষী।