Madhyamgram

মধ্য রাতে ঘুম ভাঙিয়ে কেঁপে উঠল ঘর, মধ্যমগ্রামে দেওয়াল-ছাদ ফুঁড়ে বেরিয়ে গেল লোহার পাইপ!

প্রায় চার ইঞ্চি ব্যাসের মোটা লোহার পাইপ বাড়ির দেওয়াল ফুঁড়ে ঢুকে পড়ল ঘরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৯ ১৮:০৮
Share:

দেওয়াল ফুঁড়ে ঘরে ঢুকে পড়ল লোহার পাইপ। —নিজস্ব চিত্র।

রাতের অন্ধকারে মাটি ফুঁড়ে এগিয়ে আসছে লোহার পাইপ। বাড়ির দেওয়াল ফুঁড়ে ঢুকে পড়ল ঘরে। তার পর ছাদ ভেদ করে বেরিয়ে গেল সেই পাইপ! শুধু দেওয়াল ফুঁড়েই নয়, ঘরে ঢোকার আগে একটি গাড়িকেও সেই লোহার পাইপ এ ফোঁড়-ও ফোঁড় করে দিয়েছে!

Advertisement

মধ্যমগ্রামের রানি পার্কের বাসিন্দা রাহুল চক্রবর্তী। মঙ্গলবার গভীর রাতের অভিজ্ঞতার কথা শোনাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘তখন রাত দুটো হবে। হঠাৎ একটা জোরালো ঘড়ঘড়ে শব্দ। ঘুমচোখে উঠে দেখি, গোটা বাড়িটা কাঁপছে। কিছু বুঝতে না পেরে দরজা খুলে বাইরে যাই। কোথাও কিছু ছিল না। তার পর ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করতেই হঠাৎ আওয়াজটা যেন আরও কাছে চলে আসে। দেখি, প্রায় চার ইঞ্চি ব্যাসের মোটা একটা লোহার পাইপ দেওয়াল ভেদ করে এগিয়ে আসছে!” আতঙ্কে চিৎকার জুড়ে দেন তিনি। চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরাও বেরিয়ে আসেন। আশপাশের কয়েকটা বাড়ির বাসিন্দারাও টের পেয়েছেন, তাঁদের বাড়ি কাঁপছে।

তত ক্ষণে রাহুলের বাড়ির দেওয়াল ফুঁড়ে ওই পাইপ ছাদের দিকে এগিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘ঘরের মধ্যে যা হচ্ছিল, তাতে আমি খুব ভয় পেয়ে যাই। পাড়ার লোকরাও ভিড় করেছেন। হঠাৎই প্রতিবেশীদের এক জন বলেন, কোথাও বোরিংয়ের কাজ হচ্ছে না তো? এর পর সবাই মিলে বাইরে বেরিয়ে খোঁজার চেষ্টা করি। কিছু ক্ষণের মধ্যে পৌঁছই মধ্যমগ্রাম চৌমাথার কাছে। সেখানে এক জায়গায় দেখি বোরিং মেশিন রয়েছে।’’ রাহুলের দাবি, এর পর সবাই মিলে ওখানে যাঁরা কর্মরত ছিলেন তাঁদের বোরিং মেশিন বন্ধ করতে বলেন। বন্ধ করে দেন তাঁরা মেশিন।

Advertisement

আরও পড়ুন: সারা দেশে এনআরসি হবে, ঘোষণা অমিতের, বাংলায় হতে দেব না, পাল্টা মমতার

এর পর বাড়ি ফিরে রাহুল দেখেন ওই পাইপ ছাদ ফুঁড়ে আরও উপরে চলে গিয়েছে। পরে জানতে পারেন, তাঁর বাড়িতে পৌঁছনোর আগে এক প্রতিবেশীর গাড়িও এ ফোঁড়-ও ফোঁড় করে দিয়েছে ওই পাইপ।

ওই কর্মীদের কাছ থেকে রাহুলরা জানতে পারেন যে, রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমের হয়ে ভোল্টাস নামে একটি সংস্থা বিদ্যুতের তার মাটির নীচ দিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বোরিং করছিল। সকাল হতেই ওই সংস্থার পদস্থ কর্তারা ঘটনাস্থলে আসেন। রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, ইন্টিগ্রেটেড প্রোজেক্ট ডেভেলপমেন্ট স্কিমে বিদ্যুৎ বন্টন আরও মসৃণ করতে মাটির তলা দিয়ে তার নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। সেই কাজ করছিল ঠিকাদার সংস্থা ভোল্টাস। বিদ্যুৎ কর্তাদের দাবি, কোনও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই বোরিং রড দিকভ্রষ্ট হয়েছে।

মধ্যমগ্রাম পুরসভার পুরপ্রধান রথীন ঘোষ দায়ী করেছেন কাজের সময় তদারকির অভাবকেই। বুধবার তিনি বলেন, ‘‘আমি ভোল্টাস কোম্পানির কর্তাদের পাশাপাশি বিদ্যুৎ কর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেছি। একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত।” একই কথা এলাকাবাসীরও। তাঁদের আরও প্রশ্ন, প্রায় ১৯০ ফুট লন্বা ছিল ওই বোরিং পাইপ। মাটির ২১ ফুট নীচ দিয়ে বোরিং হওয়ার কথা। সেই পাইপ কী ভাবে মাটি ফুঁড়ে চলে এল? শুধু যান্ত্রিক ত্রুটি, না কি যাঁরা কাজ করছিলেন তাঁদেরও অসাবধানতা ছিল? তবে ভোল্টাসের এক কর্তার দাবি, ‘‘যাঁরা ওই কাজ করছেন তাঁদের ২২ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে এই পেশায়।’’ ঘটনার জন্য রাহুলকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা জানিয়েছে ওই ঠিকাদার সংস্থা।

তবে এই ক্ষতিপূরণের বিষয়ে রথীনবাবু এ দিন বলেন, ‘‘ক্ষতিপূরণ তো সব নয়। প্রাণহানি হলে কী ভাবে ক্ষতিপূরণ হত? ওই সংস্থাকে আরও সাবধানে ও সতর্ক ভাবে কাজ করতে হবে।”

আরও পড়ুন: কালো পতাকা, ‘গো ব্যাক’ স্লোগান, ডোমকলে ঢুকতেই বিক্ষোভ রাজ্যপালের কনভয় ঘিরে

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন